Image description

বলিউড মুভি রেস-২'এ সাইফ আলি খানকে পোকার গেমে হাই-টেক চশমা ও কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করে লুটে নেন দীপিকা ও জন আব্রাহাম। পোকার টেবিলে টাকা হাতিয়ে নেয়া মুভিতেই শোনা যায়। তবে, এবার বাস্তব জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রে।

এক্স-রে টেবিল, গোপন ক্যামেরা, হাই-টেক চশমা ও কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত হয়েছে এক অভূতপূর্ব পোকার প্রতারণা। এতে জড়িত ছিলেন এনবিএ তারকা ও মাফিয়া পরিবারের সদস্যরা। ফেডারেল তদন্তে উন্মোচিত এই চক্রের মাধ্যমে কমপক্ষে ৭০ লাখ ডলার হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

টেক্সাস হোল্ড’এম পোকার গেমে বসেছিলেন তারকা খেলোয়াড়, সেলিব্রিটি ও ধনী জুয়াড়িরা—কিন্তু তারা জানতেন না, খেলার শুরুতেই তাদের হার নিশ্চিত।

মার্কিন প্রসিকিউটরদের অভিযোগ, এই খেলাগুলোতে অংশগ্রহণকারীরা ছিলেন 'ফিশ'—অর্থাৎ টার্গেট, যাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়া ছিল 'মাফিয়াদের উদ্দেশ্য'।

প্রতারণার এই পরিকল্পনায় ব্যবহার করা হয়েছে এক্স-রে কার্ড টেবিল, গোপন ক্যামেরা, চিপ ট্রেতে লুকানো বিশ্লেষক যন্ত্র, এমনকি এমন চশমা ও কনট্যাক্ট লেন্স যা দিয়ে কার্ডের তথ্য পড়া যায়।

মার্কিন ফেডারেল তদন্তে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে—যার মধ্যে আছেন এনবিএ দল পোর্টল্যান্ড ট্রেইল ব্লেজার্সের কোচ চন্সি বিলাপস এবং সাবেক খেলোয়াড় ড্যামন জোনস

অভিযোগ অনুযায়ী, এই পরিকল্পনা ২০১৯ সাল থেকে সক্রিয় ছিল এবং এটি পরিচালিত হয়েছিল ইতালীয় মাফিয়া পরিবারের সদস্যদের দ্বারা—বিশেষ করে বনানো, গ্যামবিনো, লুকেসে ও জেনোভেস পরিবার।

এনবিএ তারকাদের ব্যবহার করা হতো 'ফেস কার্ড' হিসেবে—যাদের উপস্থিতি দেখে ধনী ব্যক্তিরা উচ্চমূল্যের অবৈধ পোকার খেলায় অংশ নিতেন। পরে, সাজানো প্রযুক্তি ও গোপন সংকেতের মাধ্যমে তাদের ঠকানো হতো।

প্রসিকিউটরদের দাবি, খেলায় ব্যবহৃত টেবিল, চিপ, এমনকি শাফলিং মেশিনও কারসাজি করা ছিল। গোপন সংকেত দিতে ব্যবহার করা হতো হাতের অঙ্গভঙ্গি—যেমন: কব্জিতে টোকা দেওয়া, বা নির্দিষ্ট চিপ ছোঁয়া—যা দ্বারা জানানো হতো কার কাছে সেরা কার্ড আছে।

অভিযুক্তরা প্রতারণার অর্থ ক্রিপ্টোকারেন্সি, নগদ লেনদেন ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে পাচার করত।

এফবিআই পরিচালক কাশ প্যাটেল এই প্রতারণাকে বলেছেন 'মাইন্ড-বগলিং'—যা নিউ ইয়র্ক, মিয়ামি, লাস ভেগাসসহ বিভিন্ন শহরে ধনী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করেছিল।

ফেডারেল প্রসিকিউটর ক্রিস্টোফার রাইয়া বলেন, 'এই জালিয়াতি দেশজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে—কেউ তাদের খ্যাতি ব্যবহার করেছে, কেউ তাদের অর্থ, আর এর পেছনে ছিল ইতালীয় অপরাধ চক্রের তহবিল।'

হলিউড কিংবা বলিউড সিনেমার মতো এই প্রতারণা কাহিনীতে ধনী বিনোদনপ্রেমীরা পরিণত হয়েছেন শিকার হিসেবে। ফেডারেল কর্তৃপক্ষ বলছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থপাচারের একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তদন্ত এখনও চলছে।

 

সূত্র: বিবিসি নিউজ।