Image description

সুপার ওভারের দ্বিতীয় বলেই রাদারফোর্ডকে আউট করে স্বস্তি এনে দেন মোস্তাফিজ। সবমিলিয়ে প্রথম পাঁচ বল পর্যন্ত ছিলেন কাঁটায় কাঁটায় নিখুঁত, মোটে ৬ রান দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ বলেই খেল ঘুরিয়ে দেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটার। ঠাণ্ডা মাথায় মারা এক চতুষ্কোণে চার হজম করতে হয় দ্য ফিজকে। শেষ পর্যন্ত সুপার ওভারে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১১।

নিজেদের ইতিহাসে প্রথম সুপার ওভার তাড়ায় এসেছিলেন সাইফ ও সৌম্য। যেখানে কোনো বল হওয়ার আগেই ওয়াইড ও 'নো'র সুবাদে ৪ রান পায় বাংলাদেশ। এরপর প্রথম বলে এক রান নেন সৌম্য। দ্বিতীয় বল ডট হলেও তৃতীয় বলে সিঙ্গেল নেন সাইফ। তবে চতুর্থ বলে সফরকারীদের দুর্দান্ত ফিল্ডিং পরিকল্পনার ফাঁদে পড়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সৌম্য। পঞ্চম বলে এক রান আসলে শেষ বলে সমীকরণ দাঁড়ায় ৪ রান। সেখানে ফের ওয়াইড, সমীকরণ ৩ রান! কিন্তু শেষ বলে এক রানের বেশি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। এতে সুপার ওভারে এক রানে ম্যাচ হেরে যায় স্বাগতিকরা।

এর আগে অবশ্য, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২১৩ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। জবাবে শেষ ওভারে গিয়ে সাইফের চমকপ্রদ বোলিংয়েও স্কোর লেভেল করে সফরকারীরা। এতে সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচ। 

এর আগে, লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। ইনিংসের তৃতীয় বলেই প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ, এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ব্রেন্ডন কিং। নাসুমের অফস্টাম্পের ফুল লেংথ ডেলিভারিটি ব্যাটে ছোঁয়াতে পারেননি কিং। বল সোজা গিয়েই আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ারও সাড়া দেন। রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি।

এরপর হাল ধরেছিলেন ক্যাসি কার্টি ও আলিক অ্যাথানেজ। দ্বিতীয় উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়ে কিছুটা স্বস্তি ফেরাচ্ছিলেন ক্যারিবিয়ান শিবিরে। কিন্তু সেই আশায় জল ঢালেন রিশাদ। বোলিংয়ে এসেই বাজিমাত। ম্যাচে নিজের করা দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লিউ করে ফেরান অ্যাথানেজকে। ব্যাটে ছোঁয়া লাগার আগেই প্যাডে আঘাত হানে বল। অ্যাথানেজ অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানেও সাফল্য মেলেনি।

এরপর একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়ছিলেন কার্টি। রানের চাকা সচল রাখতে গিয়ে এবার চেষ্টা করেছিলেন রিভার্স সুইপের। তবে সেটা আর কাজে আসেনি, বল ঘুরে এসে আঘাত হানে প্যাডে, আর আম্পায়ারের তর্জনি উঠে যায় নিঃসংকোচে। এতে ৩৫ রান করে থামেন কার্টি। ক্রিজে জমে ওঠার আগেই ফিরতে হয় শেরফান রাদারফোর্ডকে। তানভীরের ঢুকে আসা বলটি সোজা গিয়ে আঘাত করে তার প্যাডে। তানভীরের এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদনে আম্পায়ারও সাড়া দেন। রাদারফোর্ড আউট হন মাত্র ৭ রান করেই।

নিজের অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই গুড়াকেশ মোতিকে ফেরান রিশাদ। বড় শট খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে ১৫ রানে ফেরেন এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটার। রিশাদের পর আঘাত হানেন আরেক স্পিনার নাসুম। ফেরান রোস্টন চেজকে, ম্যাচে এটি তার দ্বিতীয় উইকেট।

হোপকে সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে লড়াইয়ে ফিরছিলেন জাস্টিন গ্রিভস। দুজন মিলে গড়েছিলেন ৪৪ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি। তবে সেই জুটিতে ছেদ টানেন মেহেদী মিরাজ, দুর্দান্ত এক সরাসরি থ্রোয়ে ভাঙেন স্ট্যাম্প। গ্রিভসকে থামতে হয় ২৬ রানে। শেষ ওভারে ১৭ বলে ১৬ রানে থাকা আকিলকে ফিরিয়ে স্বাগতিকদের ম্যাচে ফেরান সাইফ। শেষ বলে তিন রানের সমীকরণ না মেলায় সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি।

এরও আগে, ক্যারিবিয়ানদের স্পিন ছকে শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি বাংলাদেশেরও। ছন্দে থাকা সাইফ হাসানের ব্যাট এবার কথা বলেনি। মাত্র ৬ রান করে ফেরেন সাজঘরে।

প্রথম ম্যাচে ঝলমলে ফিফটি করা তাওহীদ হৃদয় থামেন ১২ রানে। তাকে অনুসরণ করেন নাজমুল শান্তও, দুটি চারের শটে শুরুটা আশাব্যঞ্জক হলেও, ১৫ রানে থামে তার ইনিংস।আগের ম্যাচে অভিষিক্ত অঙ্কন আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বড় শট খেলতে গিয়েই থামেন ১৭ রানে।

একই পরিণতি সৌম্য সরকারেরও। চোখে পড়ার মতো ব্যাটিং করলেও, অপ্রয়োজনীয় এক শটে সীমানার কাছেই ধরা পড়েন। ৮৯ বলের মন্থর ইনিংসে করেন ৪৫ রান, মারেন ৩ চার ও ১ ছক্কা। এরপর দ্রুত রান বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালান নাসুম। ৩৯তম ওভারের প্রথম দুই বলেই ৮ রান নেন। তবে তৃতীয় বলে শর্ট মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে থামতে হয় তাকে।

দলীয় ১৬৩ রানে ভাঙে সপ্তম উইকেট জুটি। সোহানকে ফেরান গুড়াকেশ মোতি। লেংথ বলটিকে সামনে এগিয়ে সজোরে হাঁকাতে চেয়েছিলেন সোহান, কিন্তু বল ঠিকমতো উঠতেই মোতি নিজেই দারুণ ক্যাচ নেন। সোহানের ব্যাট থেকে আসে ২৪ বলে ২৩ রান।

সপ্তম উইকেট হারানোর পর স্কোরবোর্ডে ১৬৩ রান, হাতে মাত্র ২৪ বল। সবমিলিয়ে গ্যালারিতে আর ডাগআউটে একটাই প্রশ্ন—দুই শ’ পেরোনো যাবে তো? ঠিক তখনই আসেন রিশাদ হোসেন। এলেন, দেখলেন, আর যেন রণহুঙ্কারে খেললেন এক দুর্ধর্ষ ইনিংস। ১৪ বলে ঝোড়ো ৩৯ রান, যেখানে ছিল ৩ ছক্কা ও ৩ চার। তিনি যখন ইনিংস শেষ করলেন, বাংলাদেশের রান দাঁড়াল ৭ উইকেটে ২১৩, পরিস্থিতি বিবেচনায় যথেষ্ট লড়াকু স্কোরই।