
আসছে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ লক্ষ্যে সরকার ও নির্বাচন কমিশন নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আসন্ন এই নির্বাচনে দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিও নির্বাচনকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। প্রার্থী বাছাইয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে নানা কৌশল ও মানদণ্ড। বিশেষ করে গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথের ভূমিকা, ক্লিন ইমেজ, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং দলের বাইরে সাধারণ মানুষের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা আছে এগুলো চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে দলের হাইকমান্ড। জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে এবার কোন ধরণের তদবিরে কাজ হবে না বরং কারও বিরুদ্ধে সুপারিশ ও তদবিরের প্রমাণ পেলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তথ্য মতে, দেশের একাধিক আসনে অনেক সিনিয়র নেতা নিজের ভাই, সন্তান ও স্বজনের মনোনয়ন পাইয়ে দিতে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে তদবির করলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। হাইকমান্ড স্পষ্ট জানিয়েছে, প্রার্থী বাছাইয়ের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ না হলে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আমলনামা ও দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত সমন্বয় করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে মনোনয়ন বোর্ড।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশারফ হোসেন শীর্ষনিউজ ডটকমকে বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়ের ক্ষেত্রে যোগ্যতার ভিত্তিতেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে যারা সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রেখেছে, আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে যারা জেল জুলুমের শিকার হয়েছে, নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারাই এবার মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন। এক্ষেত্রে কোন ধরণের সুপারিশ ও তদবিরে কাজ হবে না। এ ব্যাপারে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, মনোনয়ন নিয়ে কেউ সুপারিশ বা তদবির করলে প্রমাণ সাপেক্ষে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ড. মোশারফ হোসেন আরও জানান, যারা প্রার্থী হবেন তারা বিভিন্নভাবে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন এবং ইতোমধ্যে নিজ নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন। একেকটি নির্বাচনী এলাকায় একাধিক প্রার্থী কাজ করছেন। তবে খুব শিগগিরই আসনভিত্তিক একক প্রার্থীর নাম জানানো হবে।
জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের নির্দেশে দেশের ৩০০ আসনেই সম্ভাব্য একাধিক প্রার্থীদের ব্যাপারে তথ্য সংগহ করা হয়েছে। জানা গেছে, চূড়ান্ত মনোনয়ন বিবেচনায় মূলত ৫টি বিষয়ে জরিপ চালানো হয়েছে। এসব জরিপে ওঠে আসা তথ্যের ভিত্তিতেই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দলের মনোনয়ন পাবেন। এক্ষেত্রে কোন ধরণের তদবির বা অর্থের যোগসাজস থাকবে না।
ইতোমধ্যে সারাদেশের বিভিন্ন আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে নিয়মিত বৈঠক করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বিগত দিনের রাজনীতিতে কার কি অবদান, এলাকার সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা, সাংগঠনিক সক্ষমতা, সোশ্যাল প্লাটফর্মে অংশগ্রহণ, পারিবারিক রাজনৈতিক ইতিহাস ও দলের জন্য কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
তাছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশী কোন প্রার্থী অতীতে কখনো দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল কি না, কোন ফৌজদারি মামলা আছে কি না, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে পর নিজ এলাকায় কোন ধরণের অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না, এসব ব্যাপারও বিএনপির হাইকমান্ড গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে।
বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ও নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা সামনে রেখেই এবার প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে। ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পরবর্তী রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনে তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে টানতে চায় দলটি। তাছাড়া দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ভোটার তরুণ।
দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত এমন কাউকে মনোনয়ন দেবে না বিএনপি। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ইমেজের পাশাপাশি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ও পেশাগত দক্ষতাকেও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া ভবিষ্যতের চিন্তা মাথা রেখে এবার মনোনয়ন পেতে পারেন সাবেক ও বর্তমান অনেক ছাত্রনেতা। জানা গেছে, যেসব ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে এলাকায় কোন চাঁদাবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ নেই, যারা সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এমন অনেকের ভাগ্য খুলতে পারে। আরও জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার শতাধিক আসনে নতুন প্রার্থী দিতে পারে বিএনপি।
এ ব্যাপারে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে কোন তদবির নয় বরং নানা মানদণ্ডের নিরিখে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। খুব দ্রুতই প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী হিসেবে ‘সবুজ সংকেত’ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে দেশব্যাপী নির্বাচনী গণসংযোগ প্রক্রিয়াও জোরদার করা হবে।
শীর্ষনিউজ