Image description

‘তাঁদের ভেতর দ্বন্দ্ব, তাঁরাই সমাধান করুক। এর জন্য খেলা কেন বন্ধ করে দেবে!’ মুঠোফোনের অপর প্রান্তে ক্ষোভটা স্পষ্ট বোঝা গেল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ক্রিকেটার গত আসরে মোহামেডানের হয়ে খেলেছেন। এবারও একই ক্লাবের হয়ে খেলার মৌখিক নিশ্চয়তা পেয়েছিলেন। কিন্তু বিসিবি নির্বাচনে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে ক্লাবগুলোর ক্রিকেট বর্জনের ডাকে মোহামেডানের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে দেখে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি।

গত বছর আবাহনীতে খেলা এক ক্রিকেটারও আছেন অনিশ্চয়তায়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে কে কোন ক্লাবে খেলবেন, সেটি সাধারণত আগেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু লিগের মাস চারেক বাকি থাকলেও এবার বেশির ভাগ ক্রিকেটারের সঙ্গেই যোগাযোগ করেনি কোনো ক্লাব। যাঁরা আগে প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন, তাঁরাও পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। বিসিবির নির্বাচনের জেরে কি তাহলে ক্রিকেটই জিম্মি হচ্ছে!

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আয়ের বড় উৎস ঢাকার লিগগুলো। সে কারণেই তাঁদের দুশ্চিন্তাটা বেশি। গত মৌসুমে আবাহনীতে খেলা আরেক ক্রিকেটারের এবার ক্লাব বদলানোর কথা ছিল। কিন্তু লিগ নিয়ে অনিশ্চয়তায় তাঁর কণ্ঠেও ক্ষোভ, ‘ক্রিকেটারদের জন্য একটা পঞ্জিকাবর্ষ থাকবে। সেই অনুযায়ী ঘরোয়া ক্রিকেট হবে। এর মধ্যে বিসিবি নির্বাচন হোক বা জাতীয় নির্বাচন, সেটার রেষারেষির জন্য আমাদের ক্রিকেট কেন বন্ধ হয়ে যাবে?’

বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ঢাকার ক্লাবগুলোর সংবাদ সম্মেলন। আজ মোহামেডানে
বিসিবি নির্বাচন নিয়ে ঢাকার ক্লাবগুলোর সংবাদ সম্মেলন। আজ মোহামেডানেপ্রথম আলো

ক্লাবগুলোর লিগ বয়কটের হুমকিতে বিরক্ত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঘরোয়া লিগে খেলা এক ক্রিকেটার। সমস্যা সমাধানের সম্ভাব্য একটা পথও বলে দিলেন তিনি, ‘ক্রিকেটারদের মধ্যে যে অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তা, সেটা ক্লাব থেকে টাকা পায় বলেই। আপনি ক্রিকেটারদের জাতীয় লিগে বড় চুক্তি দেন, টাকার ব্যবস্থা করেন। তাহলেই দেখবেন ঢাকা লিগ নিয়ে এত কিছু হবে না। অন্যান্য দেশেও কিন্তু এ রকমই হয়।’

আয়ের মূল উৎস প্রিমিয়ার ক্রিকেট হলেও এই লিগের বেশির ভাগ ক্রিকেটারই ঘরোয়া অন্যান্য টুর্নামেন্টেও খেলেন। লিগ নিয়ে সংকট না কাটলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন তাই অন্য বিকল্প না থাকা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগে খেলা ক্রিকেটাররা। গত বছর আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে প্রথম বিভাগ লিগে খেলা এক ক্রিকেটার বলছেন, ‘আমাদের তো চাকরি, ব্যবসা কিছুই নেই। সারা বছর অনুশীলন করি, ক্রিকেট খেলি। প্রিমিয়ার লিগের ক্রিকেটারদের তো আরও উপায় আছে। আমাদের সবকিছুই ঢাকা লিগকে ঘিরে। এটাও বন্ধ হয়ে গেলে আমাদের জন্য সবকিছুই কঠিন হয়ে যাবে।’ প্রথম বিভাগের ক্লাবগুলোও আগেভাগেই দল চূড়ান্ত করলেও এবার তাদেরও তেমন সাড়াশব্দ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

সমস্যা সমাধানে আশাবাদী কোয়াবের সভাপতি মিঠুন
সমস্যা সমাধানে আশাবাদী কোয়াবের সভাপতি মিঠুনবিসিবি

ক্রিকেটার্স ওয়ালফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নতুন সভাপতি হয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। তিনি অবশ্য আশাবাদী দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, ‘বিসিবি থেকে এরই মধ্যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সংকট সমাধানের। আমরা তাদের কথায় আস্থা রাখতে চাই। আশা করি, এই অনিশ্চয়তা কেটে যাবে।’ এনসিএল টি-টোয়েন্টি খেলতে সিলেটে থাকা মিঠুন ঢাকায় ফিরে বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন। সংকট সমাধানের জন্য সব পক্ষকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কোয়াব সভাপতি।

মিঠুন আশাবাদী হলেও লিগ নিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না ক্রিকেট কমিটি অব ঢাকা মেট্টোপলিস (সিসিডিএম)। তৃতীয় বিভাগ লিগ নিয়েই সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ তাদের, যেটি শুরু হওয়ার কথা এ মাসের শেষ সপ্তাহে। এই লিগের ২০টি ক্লাবের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই লিগ বয়কটের পক্ষে।

সিসিডিএম তাই প্রথম বিভাগ লিগ দিয়ে মৌসুম শুরুর চিন্তাভাবনা করছে। প্রথম বিভাগে খেলা ২০ ক্লাবের অন্তত ১৫টিই লিগে অংশ নেবে বলে আশা তাদের। যেকোনো একটি লিগ শুরু করতে পারলে অন্য লিগগুলোও পর্যায়ক্রমে মাঠে নামানো যাবে বলে বিশ্বাস সিসিডিএম কর্মকর্তাদের।