Image description

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখন ৩১ বলে সেঞ্চুরির অতিমানবীয় ইনিংসও আছে। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিস্ফোরক এই ইনিংসটি খেলেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি ব্যাটার এবিডি ভিলিয়ার্স। তবে তারও বহু বছর আগে, ১৯৯৬ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ব্যাট হাতে যে কীর্তি গড়ে দেখিয়েছিলেন তরুণ আফ্রিদি; তাতে বিশ্ব ক্রিকেট পেয়েছিল এক ভবিষ্যৎ তারকার আগাম বার্তা।

পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ৩৬ বলে সেঞ্চুরি করে নিউজিল্যান্ডের কোরি অ্যান্ডারসন আফ্রিদিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আগে রেকর্ডটি স্থায়ী হয়েছিল ১৮ বছর। আর এর মধ্যে আফ্রিদি নিজে পরিচিত হয়েছেন বুমবুম নামে। যে কিনা ম্যাচে বিস্ফোরিত হলে প্রতিপক্ষের ঘুম হারাম।

১৯৯৬ সাল। সে বছরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন এক তরুণ সাহিবজাদা মোহাম্মদ শহিদ খান আফ্রিদি। ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর কেনিয়ার বিপক্ষে অভিষেক হয় তার। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে সুযোগ পাননি। কেনিয়ার বিপক্ষে জয়ের ম্যাচে দলের ৮ ব্যাটার ব্যাট করলেও সুযোগ হয়নি আফ্রিদির। তরুণ আফ্রিদি বুঝতে পারেন ক্রিকেটের কঠিন বাস্তবতা।

বুঝে গিয়েছিলেন ব্যাটিংয়ে সুযোগ দিতে বাধ্য না করলে আজীবন এমন নিচের দিকেই ব্যাট করতে হবে তাকে। আফ্রিদি অপেক্ষায় থাকলেন ব্যাটিংয়ে সুযোগ পাওয়ার। শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন নম্বরে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে গেলেন তিনি। সুযোগটা কেবল লুফেই নিলেন না বরং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রীতিমতো হইচই ফেলে দিলেন এই তরুণ তুর্কি। মাত্র ৩৭ বলে ১১টি ছক্কা ও ৬টি চারের সাহায্যে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকে জানান দিলেন আফ্রিদি আসছেন, ‘ক্রিকেটে ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালাতে, বোলারদের শাসন করতে’।

কেনিয়ার নাইরোবিতে হওয়া ওই ম্যাচে আফ্রিদি ঝড়ের মুখে পড়ল শ্রীলংকা। আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে তখনও তিনশ+ স্কোর নিয়মিত হয়নি। সেই পাকিস্তান সেদিন আফ্রিদির কল্যাণে স্কোরবোর্ডে জমা করল ৯ উইকেটে ৩৭১ রান। যা ছিল ওয়ানডেতে পাকিস্তানের দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। 

পাকিস্তানকে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান পাইয়ে দেওয়ার দিনে আফ্রিদি গড়লেন ওয়ানডেতে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। বিশ্ব ক্রিকেটে রীতিমতো হইচই পড়ে গেল। পাকিস্তান পেল নতুন এক সাহসী তরুণ ক্রিকেটারকে।

ওই ম্যাচে মোট ৪০ বল খেলে ১১ ছক্কা ও ৬ চারে ২৫৫ স্ট্রাইক রেটে আফ্রিদি করেন ১০২ রান। যা তখন পর্যন্ত কেউ চিন্তাও করতে পারেনি। এমন ম্যাচে দাপুটে জয়ই পেয়েছিল পাকিস্তান। শ্রীলংকা ম্যাচ হেরেছিল ৮২ রানের বড় ব্যবধানে। তবে সেসব ছাপিয়ে তখন শিরোনাম হয়েছিলেন আফ্রিদি। আফ্রিদির সেই রেকর্ড ক্রিকেট বিশ্বে দেড়যুগ অক্ষত ছিল। 

সেই আফ্রিদি পরবর্তীতে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়েছেন পাকিস্তান দলকে। পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়েও আফ্রিদির ছিল অগ্রণী ভূমিকা। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে পাকিস্তানকে নেতৃত্বও দিয়েছেন এই অলরাউন্ডার। পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার আগে পাকিস্তানের হয়ে ২৭টি টেস্ট, ৩৯৮টি ওয়ানডে ও ৯৯টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। গড়েছেন বহু কীর্তি।

এক সময় তো আফ্রিদির নামের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছিল ‘বুমবুম’ শব্দটি। ২০০৫ সালে কানপুরে ওয়ানডেতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে আফ্রিদি খেলেন ৪৬ বলে ১০২ রানের আরেকটি বিধ্বংসী ইনিংস। পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে জেতান আফ্রিদি। সেই ম্যাচে আফ্রিদির বিধ্বংসী রূপ দেখে ধারাভাষ্য দেওয়ার রবি শাস্ত্রী তার নামের আগে জুড়ে দেন ‘বুমবুম’। এরপর থেকেই আফ্রিদি এ নামেই পরিচিতি পেয়ে যান ভক্তদের কাছে।

ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের বোলারদের কচুকাটা করতে পারতেন বলে ভক্তরা ভালোবেসে তাকে এই নামে ডাকত। অবসর বলার এত বছর পরও এখনও নানা কারণে বুমবুম আফ্রিদিকে মিস করে তার ভক্তরা।