
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন দেশ থেকেই বিতাড়িত এই কিংবদন্তি। যদিও এর পেছনে সাকিবেরই দায় দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে, ভিন্ন এক রূপকল্পে এবার আলোচনায় সাকিব। মূলত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকেই সেই আলোচনার সূত্রপাত্র। এর নেপথ্যে বেশ কিছু কারণও খুঁজেছেন নেটিজেনরা। সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও দিচ্ছেন তারা। সম্প্রতি ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সাকিবের বাংলাদেশের হয়ে খেলতে না পারার কারণ খোলাসা করেছেন, একই সঙ্গে সাকিব যেন আর না খেলতে পারেন, সেই বিষয়ে নির্দেশনার প্রসঙ্গও টেনেছেন। মূলত এই মন্তব্যের পরই ক্রীড়াপ্রেমীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ নিয়ে আইসিসিকেও টাইছেন সাকিব ভক্তরা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, চাইলে আদালত পর্যন্ত যেতে পারেন সাকিব।
দেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার সাকিব, কিন্তু রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে একের পর এক বিতর্কে জড়ান তিনি। হত্যা মামলার খড়গ, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, দুর্নীতির অভিযোগ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অস্পষ্ট অবস্থান; সবমিলিয়ে তরুণ প্রজন্মের রোষানলে সাবেক এই অধিনায়ক।
সম্প্রতি, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়ে সেই বিতর্কে নতুন করে ঘি ঢালেন সাকিব। শেখ হাসিনার জন্মদিনে একটি ছবি পোষ্ট করে সাকিব লেখেন, ‘শুভ জন্মদিন আপা’।
সাকিবের সেই পোস্টকে আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে আসেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সাকিবও পাল্টা জবাব দেন। তবে, অদ্ভুত এই খেলার শুরুটা এখানেই নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ নিজের ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘একজনকে পুনর্বাসন না করায় সহস্র গালি খেয়েছি। আমি নির্বাচন করেছিলাম, রাজনীতিতে লিপ্ত হইনি।’
অন্যদিকে সাকিব লেখেন, ‘শেষমেশ কেউ একজন স্বীকার করে নিলেন, তার জন্যই আমার আর বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেওয়া হলো না, বাংলাদেশকে খেলতে পারছিলাম না!’
আরেকটি স্ট্যাটাসে খানিকটা শ্লেষ মাখা ভাষাও ছুঁড়েন আসিফ। সাকিবকে স্মরণ করিয়ে দেন, আইন সবার জন্যই সমান।
আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘ভাইয়া, আমাকে জোর করে নমিনেশন দেওয়া হয়েছিল। আমি শুধু নির্বাচনটাই করেছিলাম, আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িত হইনি। ইউ নো হু।’
তিনি যোগ করেন, ‘যার হাত ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত, তাকে বাংলাদেশের পতাকা বহন করতে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বোর্ডের কর্তারা একাধিকবার রাজনৈতিক অবস্থান পরিষ্কার করতে বললেও তা না করে বরং খুনিদের এনডোর্স করা ছাড়াও শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, মানি লন্ডারিং, ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড করা কাউকে কেন শুধু ভালো ক্রিকেটার বলেই পুনর্বাসন করতে হবে? আইন সবার জন্য সমান, ফেস ইট।’
আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ছিলেন সাকিব। ছাত্র আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। অবশ্য, সে সময়টায় কানাডায় ছিলেন সাকিব। এরপর দেশের হয়ে হোম অব ক্রিকেটে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলতে চাইলেও সরকারের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল না মেলায় শেষমেশ বাস্তবে রূপ পায়নি সাকিবের স্বপ্ন। ধারণা করা হচ্ছিল, এর পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ক্রীড়া উপদেষ্টার।
মূলত আসিফ-সাকিবের তোপ দাগাদাগি বিতর্কেই আইসিসির প্রসঙ্গ এসেছে। ক্রীড়াপ্রেমীদের একটি অংশ বলছেন, এতে দেশের ক্রিকেটেরই ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে বিসিবি সূত্র জানাচ্ছে, বয়স বিবেচনায় জাতীয় দলের দরজা বন্ধ সাকিবের। যদিও, এই ইস্যুতে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্তা সংস্থার কিছুই করার নেই বলে মন্তব্য বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ ক্রীড়া সাংবাদিক এম এম কায়সারের।