
চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সারা দেশে কমপক্ষে ৩৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ঘটছে। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক বিরোধ, সমাবেশ কেন্দ্রিক সহিংসতা, কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখল কেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এসব সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন এবং আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬৮ জন। সেপ্টেম্বর মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা আগস্ট মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে কিন্তু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত আগস্ট মাসে ৬৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৪ জন এবং আহত হয়েছিলেন ৫১৪ জন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং এইচআরএসএসের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে ‘সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, সেপ্টেম্বর মাসে সহিংসতার ৩৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ২৪টি ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ১৯২ জন ও নিহত ৭ জন। ৭টি ঘটনায় বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৪২ জন ও নিহত ১ জন। ৩টি বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ৩২ জন এবং ৪টি ঘটনা ঘটেছে বিভিন্ন দলের মধ্যে। নিহত ৮ জনের মধ্যে বিএনপির ৮ জন ও জামায়াতের ১ জন।
সেপ্টেম্বর মাসে নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদনগরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপির দুই পক্ষের পৃথক সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত তিনজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। ৩৭ টি সহিংসতার ঘটনার ৩৪টি ঘটেছে বিএনপির অন্তর্কোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে। এর পাশাপাশি দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অন্তত ১৪টি ঘটনা ঘটেছে।
এ সকল হামলায় কমপক্ষে ৬ জন আহত এবং আওয়ামীলীগের ৩ জন, ও বিএনপির ৪ জনসহ মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় কমপক্ষে ২৫ জন গুলিবিদ্ধ এবং ত্রিশের অধিক বাড়ি-ঘর, যানবাহন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ও রাজনৈতিক কার্যালয় ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির জানিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল হতাশাজনক। সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মব সহিংসতা, গণপিটুনিতে নির্যাতন ও হত্যা, শ্রমিকদের ওপর হামলা, পাহাড়ে সহিংসতা, মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাংচুর, মাজারে হামলা এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ও গুলিতে মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে। সাংবাদিকদের উপর হামলা, রাজনৈতিক সহিংসতা, বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, নারী নিপীড়ণ ও ধর্ষণ, শিশু নির্যাতন, কারাগারে মৃত্যু, সভা-সমাবেশে বাধা প্রদানের মতো ঘটনা অব্যহত রয়েছে।
এসময়ে চাঁদাবাজি, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, ও হত্যাসহ বেশ কিছু সামাজিক অপরাধ ঘটেছে যা জনমনে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি করেছে। এছাড়া ভারত সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাভাষী মানুষদেরকে পুশইন করা। এমনকি নিরীহ বাংলাদেশিকে আহত ও গ্রেফতার এবং মিয়ানমারের আরাকান আর্মি কর্তৃক বাংলাদেশি জেলেদেরকে গ্রেফতারের মত বিভিন্ন ঘটনা মানবাধিকার পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।