
র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে বাহরাইন। দলটির সঙ্গে আগে কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স বাংলাদেশের পক্ষে কথা বলছিল। মাঠেও এর প্রতিফলন ঘটল। গতকাল বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে দারুণ শুরু করল পিটার বাটলারের দল। এর আগে কখনোই এই টুর্নামেন্টে জয় পায়নি বাংলাদেশ।
বাহরাইন ফুটবলারদের শারীরিক শক্তি ও উচ্চতা নিয়ে কথা হচ্ছিল বেশ। বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারও আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেছিলেন দিকটি। কিন্তু ঋতুপর্ণা চাকম-তহুরা খাতুনদের দক্ষতার সামনে পাত্তাই পায়নি বাহরাইন। উল্টো ভেসেছে গোলবন্যায়।
মিয়ানমারের থুউনা স্টেডিয়ামে ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটে বাঁ প্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার দূরপাল্লার শট তালুবন্দী করেন বাহরাইন গোলকিপার খুলুদ সালেহ। নবম মিনিটে ঋতুপর্ণার কর্নার থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়রের হেড খুঁজে পায়নি লক্ষ্য। কিন্তু পরের মিনিটেই সুযোগ কাজে লাগান তিনি। মাঝমাঠের কিছুটা নিচ থেকে স্বপ্না রানীর ভাসানো থ্রু বল দৌড়ে গিয়ে নিয়ন্ত্রণে নেন এই ফরোয়ার্ড। তাঁকে আটকানোর জন্য ছিল না কোনো ডিফেন্ডারও। তাই গোলরক্ষককে পরাস্ত করে বল জালে ফেলার কাজটা বেশ সহজে করেন শামসুন্নাহার।
১৫ মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণে কৃতিত্বটা ঋতুপর্ণার। এই গোলেও পেছন থেকে অবদান স্বপ্নার। ডান প্রান্ত থেকে বাঁ প্রান্তে থাকা ঋতুপর্ণার উদ্দেশে বল বাড়ান তিনি। বক্সে ঢুকে বাঁ পায়ের দারুণ এক শটে জাল কাঁপান ঋতুপর্ণা। দুই মিনিট পর ঋতুপর্ণার ক্রসে তহুরা পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ না হলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত।
২৪ মিনিটে শামসুন্নাহার সিনিয়রের পাস ধরে এগিয়ে গোলরক্ষককে ফাঁকা পেয়ে যান মনিকা চাকমা। কিন্তু চিপ করতে গিয়ে বল বারের অনেকটা ওপর দিয়ে বাইরে পাঠান এই মিডফিল্ডার। ৩২ মিনিটে আফঈদার ক্রসে তহুরা হেডে গোল করলেও লাইন্সম্যান আগেই অফসাইডের সংকেত দেন।
৩৯ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্দার শট বক্সের কিছুটা ওপর দিয়ে যায়। পরের মিনিটে মারিয়ার বাড়ানো ক্রস বাহরাইনের রাওয়ান আলালি গায়ে প্রতিহত হয়ে চলে যায় কোহাতি কিসকুর কাছের। সামনে এক ডিফেন্ডার থাকলেও দ্রুত শট নিয়ে ব্যবধান ৩-০ করেন কোহাতি।
যোগ করা সময়ে দ্বিতীয় মিনিটে গোলের খাতা খোলেন তহুরা খাতুন। বাহরাইনের দুজন ফুটবলারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হয় মনিকাকে। শেষ পর্যন্ত সফল হলেও হারিয়ে ফেলেন ভারসাম্য। তবে বল পেয়ে যান তহুরা। বক্সের ভেতর থেকে তাঁর নেওয়া শট বাহরাইন গোলরক্ষক ঠেকানোর চেষ্টা করলেও জালে যাওয়া থেকে আটকাতে পারেননি।
দুই মিনিট পরই দ্বিতীয় গোলের দেখা পান তহুরা। শামসুন্নাহারের বাড়ানো ক্রসে খুব সহজেই গোলরক্ষককে পাশ কাটান এই ফরোয়ার্ড।
বিরতির পর আক্রমণাত্মক খেলার ধারা বজায় রাখে বাংলাদেশ। দুবার গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি শামসুন্নাহার জুনিয়র। ৬০ মিনিটে শামসুন্নাহার সিনিয়রের ক্রসে পা বাড়িয়ে জালে ফেলতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই বল আটকাতে গিয়ে উল্টো আত্মঘাতী গোল করে বসেন বাহরাইনের রাওয়ান আলালি।
৭৪ মিনিটে সপ্তম গোলটি করেন বদলি হিসেবে নামা মুনকি আক্তার। শাহেদা আক্তার রিপার থ্রু বল ধরে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জালের দেখা পান তিনি। ৮৬ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে সুলতানার শট বারে লেগে ফিরে না এলে ৮ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ত বাংলাদেশ। ২ জুলাই পরের ম্যাচ স্বাগতিক মিয়ানমারের বিপক্ষে। যারা প্রথম ম্যাচে তুর্কমেনিস্তানকে উড়িয়ে দিয়েছে ৮-০ গোলে।
বাংলাদেশ একাদশ: রুপনা চাকমা, শিউলি আজিম, শামসুন্নাহার সিনিয়র, শামসুন্নাহার জুনিয়র, আফঈদা খন্দকার (অধিনায়ক), কোহাতি কিসকু, মনিকা চাকমা, স্বপ্না রানী, ঋতুপর্ণা চাকমা, তহুরা খাতুন, মারিয়া মান্দা।
বদলি: মুনকি আক্তার, সাগরিকা, শাহেদা আক্তার রিপা, সুলতানা ও উমেহলা মারমা।