Image description
শাটডাউনের ধাক্কা চট্টগ্রাম বন্দরে । ডিপোগুলোতে আটকা পড়েছে সাড়ে ৭ হাজার রপ্তানি কনটেইনার ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে কাস্টমস কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচি চলমান থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে গত দুদিনে ৬ হাজার আমদানি কনটেইনার জমা পড়েছে। একই সময়ে বেসরকারি অফডকগুলোতে জমা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার রপ্তানি কনটেইনার। শুল্কায়ন বন্ধ থাকায় কার্যত জনশূন্য হয়ে গেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দরের জেটিগুলো। রপ্তানি কনটেইনারের অভাবে বন্দর থেকে ছেড়ে যেতে পারেনি তিনটি বিদেশি জাহাজ। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তাদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির কারণে রোববার পর্যন্ত ৪২ হাজার আমদানি কনটেইনার জমা রয়েছে। এর মধ্যে শনিবার ১৩৭ কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। রোববার ডেলিভারি কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গত দুদিনে অন্তত ৬ হাজার ডেলিভারি কনটেইনার জমা পড়েছে। অফডক ডিপোগুলোতে আটকা পড়েছে রপ্তানি কনটেইনার।’

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, শাটডাউন কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রামের ১৯টি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) থেকে বন্দরে কোনো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার যায়নি। এ কারণে রোববার বন্দর থেকে তিনটি জাহাজ ছেড়ে যেতে পারেনি। এর মধ্যে ‘হং ডা জিন-৬৮’ নামের জাহাজটিতে ১ হাজার ৬৬৬ একক কনটেইনার নিয়ে বন্দর ছাড়ার কথা ছিল। একইভাবে ‘এক্সপ্রেস নিলওয়ালা’ নামে আরেকটি জাহাজে রপ্তানির কথা ছিল ১ হাজার ৪৬০ একক কনটেইনার। ‘এএস সিসিলিয়া’ নামের অন্য জাহাজটিতে ৫৬৪ একক কনটেইনার নিয়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার কথা। সেখান থেকে এসব কনটেইনার ইউরোপ-আমেরিকাগামী বড় জাহাজে তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাস্টমসের কর্মসূচির কারণে শনি ও রোববার কোনো কনটেইনার ডিপো থেকে বন্দরে পাঠানো যায়নি। রপ্তানি কনটেইনার না পাওয়ায় তিন জাহাজই এখন জেটিতে অলস বসে আছে।

আমদানি-রপ্তানিসংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানির শুল্কায়ন থেকে খালাস পর্যন্ত সব কার্যক্রম কাস্টমসের অনুমোদনে হয়। বেশ কয়েকটি ধাপে কাস্টমসের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। ফলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের শাটডাউন কর্মসূচির কারণে বন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার সকাল ৬টা থেকে শাটডাউন কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর বন্দর থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নও বন্ধ হয়ে যায়। শাটডাউন কর্মসূচি পালন করতে চট্টগ্রাম কাস্টমসের বেশ কিছু কর্মকর্তা মার্চ টু এনবিআরে যোগ দিতে বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এছাড়া যেসব কর্মকর্তা চট্টগ্রামে আছেন, তারাও কাজ বন্ধ রেখেছেন। ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ এখন প্রায় লোকশূন্য। তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তাদের চলমান কর্মসূচির কারণে কেবল ব্যবসায়ীরা নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ বিপাকে পড়েছে। কারণ সোমবার হচ্ছে চলতি অর্থবছরের শেষদিন। চলমান কর্মসূচির কারণে অনেক ব্যবসায়ীর রপ্তানি পণ্য বন্দরে আটকে গেছে। তারা ডেলিভারির ডকুমেন্টস যদি ব্যাংকে দিতে না পারে, ব্যাংক তো টাকা দেবে না। এছাড়া যাদের বড় ঋণ রয়েছে তারা সেটেলমেন্ট করতে হিমশিম খেতে হবে। এই সপ্তাহে ডেলিভারি দিতে না পারলে আগামী মাসে শ্রমিকদের বেতন দিতেও বিপাকে পড়তে হবে ব্যবসায়ীদের।’

একই কথা বলেছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ। তিনি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজার থেকে শুরু করে উৎপাদনেও এর প্রভাব পড়বে। খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। কাঁচামালের অভাবে শিল্পকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে এ ধরনের কর্মসূচি পালন আমরা অতীতে কখনো দেখিনি। গত দেড় মাস থেকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কখনো আংশিক, কখনো পুরো কর্মসূচি পালন কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই কর্মসূচি বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে করা হচ্ছে কি না খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।’