
ম্যাচের আগের দিন ভারতের বিপক্ষে ছয় বছর আগে করা গোলের ভিডিও নিজের ভেরিফায়েড পেজে শেয়ার করেছিলেন। তাঁর নেওয়া ফ্রি কিক থেকে সাদ উদ্দিনের করা সেই গোলের ভিডিও এবং সুনীল ছেত্রির সঙ্গে লড়াইয়ের দৃশ্যগুলো সামাজিক মাধ্যমে দিয়েছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এমনকি শিলংয়ের পাঁচতারকা হোটেলে ২৪ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে ভারতকে রীতিমতো হুমকি দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
কিন্তু ২৫ মার্চ জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে শুরুর একাদশে নেই ডেনমার্ক প্রবাসী এ ফুটবলার। সবাই আশায় ছিলেন হয়তো বদলি হিসেবে মাঠে দেখা যাবে তাঁকে। কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার পাঁচ বদলিতেও ছিলেন না জামাল ভূঁইয়া। ম্যাচ নিয়ে কথার ফুলঝুরি ফোটানো অধিনায়ক জামাল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন না। খেলা শেষে বিষণ্ন মনে মাঠ ত্যাগ করা জামাল কারও সঙ্গে কথা বলেননি। তাঁর হৃদয় যে ভেঙেছে, সেটা অনুমেয়। ভারত ম্যাচে সুযোগ না পাওয়ায় বাংলাদেশ দলে জামালের ভবিষ্যৎ নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। লাল-সবুজের জার্সিতে কি সমাপ্তির পথে জামাল অধ্যায়?
২০১৩ সালে প্রথম প্রবাসী হিসেবে বাংলাদেশ দলে অভিষেক জামাল ভূঁইয়ার। সময়ের সঙ্গে বাংলাদেশের ফুটবলের অন্যতম তারকা বনে যান এ মিডফিল্ডার। এক সময় তাঁর হাতে ওঠে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড। কাগজে কলমে এখনও জাতীয় দলের কাপ্তান তিনি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে জামালের পারফরম্যান্সে ভাটার টান। যে কারণে শেষ কয়েকটি ম্যাচে ৫০ কিংবা ৬০ মিনিট পর্যন্ত খেলতে দেখা গেছে তাঁকে। গত বছর থেকে এই পর্যন্ত ফিফা প্রীতি ম্যাচ এবং বিশ্বকাপ বাছাইসহ আটটি ম্যাচ খেলেছেন জামাল। যেখানে পাঁচ ম্যাচে শুরুর একাদশে ছিলেন না ৩৪ বছর বয়সী এ প্রবাসী।
জাতীয় দলে এক যুগের ক্যারিয়ারে ৮৭টি ম্যাচ খেলেছেন জামাল। শুরু একাদশে ছিলেন ৭৮ বার। বদলি নেমেছেন চারবার এবং বাকি পাঁচ ম্যাচে ছিলেন বেঞ্চে। সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে একাদশে তো দূরের কথা, কোচ তাঁকে দেননি প্লেয়িং টাইমও। সংবাদ সম্মেলন থেকে সব জায়গায় কথা বলা জামালকে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে সুযোগ না দেওয়া প্রসঙ্গে স্প্যানিশ কোচের যুক্তি ছিল এমন, ‘ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলোয়াড়রা বেঞ্চে ছিল। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার পরিক্রমায় ম্যাচটি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছিল, তাতে দৈহিক শক্তি বিবেচনায় রানাকে ব্যবহার করা হয়েছে। জামাল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার।’
ক্যাবরেরার অধীনে দেড় বছর ধরে জামাল হয় একাদশে অনিয়মিত কিংবা এক অর্ধ পরে উঠিয়ে নেওয়া হয়। জামাল মাঠে না থাকলে অধিনায়কের আর্মব্যান্ড ওঠে তপু বর্মণের হাতে। ভারত ম্যাচে তপু চোটে পড়ায় নেতৃত্বের ভার উঠেছিল রহমত মিয়ার কাঁধে। কাগজে কলমে অধিনায়ক জামাল যদি পুরো নব্বই মিনিট খেলতে না পারেন, তাহলে তাঁর হাতে আর্মব্যান্ড কেন? এই প্রশ্ন ওঠায় ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিমত এভাবে জামালকে নেতা হিসেবে রাখা উচিত নয়। আবার ভারতের বিপক্ষে জামালকে উপেক্ষিত করে চন্দন রয়ের মতো অনভিজ্ঞ মিডফিল্ডারকে বদলি হিসেবে নামানোয় সমালোচনা হয়েছে ক্যাবরেরার। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কাপ্তান যখন কোচের পরিকল্পনা নেই, তখনই প্রশ্ন উঠেছে, জামাল অধ্যায়ের কি সমাপ্তি?