কয়েক দশকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বিজ্ঞানীরা জ্বালানির এমন উৎস আবিষ্কার করতে চাচ্ছিলেন, যা কোনোদিন ফুরিয়ে যাবে না এবং এর কোনো পরিবেশগত বিরূপ প্রতিক্রিয়াও থাকবে না।
অবশেষে মিলছে সাফল্যের দেখা। মার্কিন বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বড় বাধাটি এতদিন তাদের আটকে রেখেছিল সেটা অতিক্রমের প্রযুক্তি আবিষ্কারের পথে রয়েছেন তারা। যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে ঐতিহাসিক এ ঘোষণা দেওয়া হয়। মার্কিন জ্বালানি সচিব জেনিফার গ্রানহোম জানিয়েছেন, সোজা কথায় বলতে গেলে এটি একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক বৈজ্ঞানিক কৃতিত্বের একটি।
পরমাণু ভাঙার প্রক্রিয়াকে বলে ‘ফিউশন’ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে পারমাণবিক বোমা- সবগুলোর মূল ব্যাপারটা একই। পারমাণবিক ফিউশন জিনিসটা হচ্ছে ফিউশনের ঠিক উল্টো- যার অর্থ ‘জোড়া লাগা।’ সূর্য এবং অন্যান্য তারা থেকে যে প্রচণ্ড শক্তি অবিরাম নির্গত হচ্ছে তা ফিউশন প্রক্রিয়ার ফলেই ঘটছে।
এই শক্তি ব্যবহার করে যদি বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হলে পরিবেশের ক্ষতি না করেই বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। সমস্যাটা ছিল ফিউশন ঘটাতে যে পরিমাণ শক্তি খরচ হচ্ছিল তার চেয়েও অনেক কম শক্তি উৎপাদন হচ্ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার লরেন্স লিভারমোর ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির (এলএল এনএল) বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, তারা এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যেখানে ফিউশন ঘটাতে যে পরিমাণ শক্তি দরকার পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি শক্তি। মার্কিন অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট নিল ডিগ্র্যাস টাইসন বলেছেন, যে দিন আপনি যতটা শক্তি নেবেন তারচেয়ে বেশি শক্তি বের হবে আকাশের সীমা।
ফিউশন প্রযুক্তিতে বর্তমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রতে প্রচুর পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যা বিপজ্জনক হতে পারে। তবে নিউক্লিয়ার ফিউশনের ফলে অনেক বেশি শক্তি উৎপাদন সম্ভব। এটা থেকে যে বর্জ্য তৈরি হয় তার পরিমাণ সামান্য। আর তা খুব বেশি দিন তেজস্ক্রিয় অবস্থায় থাকে না।
এর ফলে কোনো গ্রিনহাউস গ্যাসও নির্গত হবে না এবং জলবায়ুর পরিবর্তনও দ্রুত হবে না। ক্যালিফোর্নিয়ার এলএলএনএলের ন্যাশনাল ইগনিশন ফ্যাসিলিটিতে এ পরীক্ষা চালানো হয়েছে।
এলএলএনএলের পরিচালক ড. কিম বাডিল বলছেন, এটি এক ঐতিহাসিক অর্জন। গত ৬০ বছর ধরে হাজার হাজার লোক এই প্রয়াসে অবদান রেখেছেন এবং এ পর্যন্ত আসতে অনেক উদ্ভাবনী ক্ষমতার প্রয়োজন হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, শক্তি উৎপাদনের জন্য ফিউশনকে বাস্তবসম্মত করার জন্য প্রয়োজনীয় স্কেলে পুনরায় তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থানগুলো প্রচুর। আমাদের এমন যন্ত্রপাতি তৈরি করতে হবে, যা পারমাণবিক বিক্রিয়াকে বিদ্যুতে পরিণত করতে পারে। যা পাওয়ার গ্রিডে ব্যবহার করা যেতে পারে।
এ আবিষ্কার নবায়নযোগ্য শক্তির সন্ধানের জন্য একটি বিশাল অগ্রগতি। জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্পগুলোতে অর্থ বিনিয়োগের পরিকল্পনাও করা হচ্ছে।