ফুটবলে দীর্ঘদিনের সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার একটি ধরা হয় রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে। মাঠের যুদ্ধ যেমন উত্তপ্ত, মাঠের বাইরের সংঘর্ষও তেমনি বহুবার ছড়িয়েছে আগুন। এবার সেই আগুনে নতুন করে তেল ঢাললেন রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। ‘নেগেরেইরা কেস’ ঘিরে আবারও ক্ষোভ উগরে দিয়ে তিনি দাবি করেছেন—বার্সেলোনার সোনালি যুগের পেছনে রয়েছে ‘স্বাভাবিক নয়’ এমন অর্থ–প্রবাহ ও রেফারি–অসঙ্গতি।
মাদ্রিদের সাম্প্রতিক অ্যাসেম্বলিতে পেরেজের বক্তব্য যেন সরাসরি সংঘর্ষের ঘোষণা। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন—১৭ বছর ধরে রেফারি কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মকর্তাকে বার্সার দেওয়া ৮ মিলিয়ন ইউরোর বেশি অর্থ কি শুধু “কনসালটেন্সি” ছিল?
স্প্যানিশ দৈনিক মার্কা জানিয়েছে, সভায় পেরেজ স্পষ্ট ভাষায় বলেন,“যে কারণেই হোক, রেফারি কমিটির সহ–সভাপতিকে ১৭ বছর ধরে আট মিলিয়ন ইউরো দেয়া—এটা স্বাভাবিক নয়। সময়টা আবার এমন, যখন বার্সেলোনার সবচেয়ে সফল যুগ চলছিল।”
এনরিকেজ নেগেরেইরা নামটির সঙ্গে এরই মধ্যে পরিচিত ফুটবল–বিশ্ব। ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বার্সেলোনার কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ পেয়েছিলেন তিনি। ক্লাবের দাবি—রেফারিং পরামর্শ ও রিপোর্টের বিনিময়ে এই অর্থ দেওয়া হয়েছিল। বার্সা ও নেগেরেইরা দু’পক্ষই ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করলেও মামলা এখনো বিচারাধীন।
নিজের বক্তব্য আরও জোরালো করতে পেরেজ তুলে ধরলেন পরিসংখ্যান। তিনি জানান—স্পেনে ‘নেগেরেইরা যুগে’ বার্সেলোনার লাল কার্ডের নেট–ব্যালান্স +৪৯, আর রিয়াল মাদ্রিদের –১।
অন্যান্য বড় লিগে যেখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দলের পরিসংখ্যান প্রায় কাছাকাছি, সেখানে স্পেনে এমন পার্থক্যকে তিনি “অস্বাভাবিক” বলেই আখ্যা দেন।
স্প্যানিশ রেফারি কমিটির বর্তমান সভাপতি ফ্রান সোটোর ‘কেসটি ভুলে যেতে হবে’ মন্তব্যেও ক্ষুব্ধ রিয়াল সভাপতি।
তিনি বলেন,“১৭ বছর ধরে চারজন বার্সা প্রেসিডেন্ট মিলিয়ন ইউরো দিয়েছেন রেফারি–কর্তাকে—এটা কীভাবে ভুলে যাব? যারা যুক্ত ছিল, তারা এখনো সিস্টেমের ভিতরেই আছে।”
এরপর তিনি অভিযোগ করেন—কোপা দেল রে ফাইনালের আগে এক ম্যাচ অফিশিয়াল নাকি বলেছিলেন যে রিয়াল মাদ্রিদকে ‘শাস্তি’ দেওয়া হবে। পেরেজের দাবি, সেই রেফারিকে সরানোর কথা থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
রিয়াল সভাপতি সরাসরি যে মাত্রার অভিযোগ তুলেছেন, তার জবাব বার্সেলোনা, লা লিগা কিংবা রেফারি কমিটি দেবে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
‘নেগেরেইরা কেস’ যখন স্প্যানিশ ফুটবলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি করেছে, তখন পেরেসের এই নতুন আক্রমণ আবারও আলোচনায় ফিরিয়ে আনে রেফারিং–স্বচ্ছতা ও লিগ–প্রশাসনের দায়।