ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে জামায়াতের বিরুদ্ধে ‘বিগ ব্রাদার’ বা বড় ভাই সুলভ আচরণের অভিযোগ উঠলেও জামায়াত নেতারা তা অস্বীকার করে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আসন সমঝোতা ও ‘বিগ ব্রাদার’ বিতর্ক
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, জোট গঠনের চূড়ান্ত মুহূর্তে জামায়াতের একক আধিপত্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রবণতা তাদের ক্ষুব্ধ করেছে। বিশেষ করে, আট দলীয় জোটের বাইরে নতুন দলগুলোকে যুক্ত করার ক্ষেত্রে জামায়াত অনেকটা একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে তাদের দাবি।
সবচেয়ে বড় বিতর্ক তৈরি হয়েছে আসন বণ্টন নিয়ে। ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীমের মতো জ্যেষ্ঠ নেতাদের ‘আকাঙ্ক্ষিত’ আসনেও জামায়াত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
দলটির তৃণমূলের মতে, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ফয়জুল করীমের সক্রিয় ভূমিকা বিবেচনা করে তাকে এসব আসনে বিশেষ ছাড় দেয়া উচিত ছিল।
নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ অবশ্য সরাসরি অভিযোগ না তুলে জোট রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের আমির এই ‘বহু দলের একক বাক্স’ নীতির প্রবক্তা। আমরা জোটের সফলতা চাই। তবে যেহেতু এখনও সময় আছে, যে কোনো মনোমালিন্য দূর করতে সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।”
অন্যদিকে, সব অভিযোগ অস্বীকার করে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, জোটের সব সিদ্ধান্ত সমন্বিত পরামর্শের ভিত্তিতেই নেয়া হয়েছে। জোটের স্বার্থে জামায়াত শেষ পর্যন্ত সব ধরনের ছাড় দিতে প্রস্তুত।
জোটের সমন্বয়ক ও জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন, ‘সৈয়দ ফয়জুল করীমকে এরইমধ্যে বরিশালের একটি আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে। তিনি অন্য আরেকটি আসনেও আগ্রহী বলে শুনেছি, যা দ্রুতই সমাধান করা হবে। এখানে কেউ কারো বড় ভাই নয়, সবার অবদান সমান।’
বাড়ছে জোটের পরিধি: যুক্ত হতে পারে এবি পার্টি
অভ্যন্তরীণ এই টানাপোড়েনের মধ্যেই নতুন খবর হচ্ছে, জোটের সদস্য সংখ্যা ১০ থেকে ১১ হতে চলেছে। রোববার (২৮ ডিসেম্বর) এনসিপি ও এলডিপি যুক্ত হওয়ার পর এবার মজিবুর রহমান মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন ‘এবি পার্টি’ (আমার বাংলাদেশ পার্টি) এই জোটে যোগ দিতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে।
এ বিষয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম কিছুটা রহস্য বজায় রেখে বলেন, ‘নতুন একটি দল যুক্ত হচ্ছে। একটু রহস্য না-হয় থাকুক, আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পাবেন।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বড় জোট গঠনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ে এ ধরনের আসনকেন্দ্রিক বিরোধ স্বাভাবিক। তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের মধ্যে এই অস্বস্তি দ্রুত নিরসন না হলে ভোটের মাঠে তার প্রভাব পড়তে পারে। আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যে ‘বৃহত্তর ঐক্যের’ ডাক দেয়া হয়েছে, তা টিকিয়ে রাখাই এখন এই জোটের প্রধান চ্যালেঞ্জ।