Image description

বরিশালের মেঘনা, কালাবদর ও তেতুলিয়া নদীবেষ্টিত দুই উপজেলা হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে দুর্গম জনপদ হিসেবে পরিচিত এ দুই উপজেলা নিয়েই গঠিত বরিশাল-৪ আসন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনকে ঘিরে ক্রমোশ বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। আসনের অতীত ইতিহাস বিএনপির পক্ষে থাকলেও জামায়াতেরও রয়েছে শক্ত ভিত্তি। দলটির বিরাট একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে এই আসনে। এর সাথে যোগ হয়েছে জুলাই বিপ্লবের পর জামায়াতকে ঘিরে গড়ে ওঠা ক্রেজ। যে কারণে আগামী নির্বাচনে আসনটি নিজেদের করে নেয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা।

এক সময়ের গোছানো বিএনপি এখন গ্রুপিং বিভাজনে অনেকটা এই আসনের ভৌগোলিক অবস্থার মতোই এখানে অগোছালো ও বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে।

২০০৮ সালে এখানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। আগামী নির্বাচনে তার পরিবর্তে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এখানে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রাজিব আহসানের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। যার ফলে দুই উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বড় একটি অংশ নির্বাচনী মাঠে অনুপস্থিত।

অপরদিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারী সৈয়দ এছাহাক মোঃ আবুল খায়ের এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে দলটির বরিশাল জেলার প্রধান সমন্বয়কারী আবু সাঈদ মুসাকে। 
 তবে তারা প্রার্থী হওয়ার পর থেকে এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো তৎপরতা না থাকায় সাধারণ মানুষের সাথে তেমন কোন যোগাযোগ নেই। যার ফলে ভোটের মাঠে তেমন আলোচনায় নেই তারা।

সাধারণ ভোটাররা বলছেন, এই আসনে মুলত লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে । বিএনপির নবীন বনাম জামায়াতের প্রবীণ প্রার্থীর একটি জমজমাট লড়াই দেখতে চান তারা ভোটের বাক্সে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই রাজিব আহসান মাঠ চষে বেড়ালেও দলটির অভ্যন্তরে গ্রুপিং ও নানা কোন্দল তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় নেতাকর্মীদের বিভক্ত অবস্থান তার নির্বাচনী সমীকরণে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

জামায়াতের সূত্র মতে, বরিশাল বিভাগের মধ্যে এই আসনে তাদের সাংগঠনিক ভীত তুলনামূলক মজবুত। এখানকার প্রার্থী বরিশাল জেলা জামায়াতের আমির হওয়ায় তাকে শক্ত প্রার্থী হিসেবেই দেখছেন ভোটাররা। ইতিমধ্যে তিনি প্রান্তিক জনপদে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, কৃষকদের সমস্যা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

এলাকাবাসী বলছেন, বহুবছর ধরেই প্রার্থী আব্দুল জব্বার নিবিড়ভাবে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময় করে তাদের সবার মতামত গ্রহণ করছেন। তিনি এই অঞ্চলে ছাত্রজীবন থেকে সাংগঠনিক দায়িত্বপালনের সুবাদে এলাকাবাসীর সাথে তার একটি নিবিড় বন্ধন গড়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ইসলামী জোটের পক্ষ থেকে মাওলানা আবদুল জব্বারকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হলে তিনি সম্মিলিতভাবে একটি বিশাল জনসমর্থন নিয়ে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

যদিও ইসলমী ও সমমনা ৮ দলের আসন সমঝোতায় এই আসনে এখনও প্রার্থী চুড়ান্ত হয়নি, তবে ৮ দলের প্রার্থী বাছাইয়ে ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে এই আসনে জামায়াতের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনায় এগিয়ে রয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসলামী আন্দোলনের একাধিক কর্মী বলেন, এটা অত্যন্ত বাস্তব যে বরিশাল-৪ আসনে আমাদের চেয়ে দাড়িপাল্লার প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। তাই জাতীয় স্বার্থে এই আসনটি আব্দুল জব্বারকে দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে জয়ী হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 

আবার একইভাবে যেসব আসনে হাতপাখা এগিয়ে আছে সেগুলো তারাও ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।