Image description

সংস্কারের আন্দোলন থেকে এবার নির্বাচনি মাঠে সরব বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের জোট। আট দল এক ব্যালটে ভোট করলে আসন সমঝোতার সমীকরণ কেমন হবে, চলছে হিসেব নিকেশ। ‘ইসলামি দলগুলোর সব ভোট এক বাক্সে’ আনার লক্ষ্যে আসন সমঝোতার জন্য কাজ করছে ৮ দল।

দলগুলোর নেতাদের দাবি, সংখ্যা নয়, প্রার্থী ও দলের জনপ্রিয়তা বিবেচনায় আসন বণ্টন হবে। নেতারা বলছেন, মনোনয়নে প্রাধান্য পাবে জোটের শীর্ষ নেতারা।

জানা গেছে, ৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। প্রতিটি আসনে জোটের প্রার্থী হবে একজন।

সূত্র বলছে, ৯ ডিসেম্বর থেকে আসন সমঝোতা ও প্রার্থী চূড়ান্ত করা নিয়ে দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে দলগুলো। এসব বৈঠকে সমন্বয়ের জন্য একাধিক নেতা অংশ নিয়েছেন। তারা ইতোমধ্যে প্রাথমিক প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ গুছিয়ে এনেছেন। যেসব আসনে একাধিক দল তাদের প্রার্থীকে সম্ভাবনাময় বলে মত দিয়েছে, সেসব আসনসহ চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ের কাজটি ১৬ ডিসেম্বর করবেন আট দলের প্রধান নেতারা।

লিয়াজোঁ কমিটি দু-একদিনের মধ্যে তালিকা চূড়ান্ত করবে। পাঁচ দফার আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামার আগেই জামায়াত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে ভোটের মাঠে অবস্থান নেয়। এখন শরিকরা ২২০ আসন চাইছে।

৮ দলের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কোন দল কত আসনে নির্বাচনে আগ্রহী বা বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা সে তালিকা মাঠ জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুত করেছে নিজ নিজ দল। বৃহত্তর ইসলামি ঐক্যের স্বার্থে সব দলই সর্বোচ্চ ছাড়ের মানসিকতার কথা জানিয়েছে। ইসলামি দলগুলো সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে আসুক এটাই লক্ষ্য। ৮ দলের শীর্ষ নেতাদের পাশ করিয়ে আনার বিষয়টিকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

আট দলে থাকা দলগুলো হলো—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

শুরুতে প্রায় অভিন্ন কয়েকটি দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে একমত হয় আট দল। সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনার পাশাপাশি পাঁচ দফা দাবিতে মাঠে নামে তারা। এর ভেতর নির্বাচনী জোট তৈরির আলোচনা চলতে থাকে। 

কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে কওমিধারার দলগুলোর আদর্শিক বিরোধ থাকায় জোটের চিন্তা বাদ দিয়ে সমঝোতার পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে থাকে দলগুলো। কাউকে জোট নেতা মনোনীত না করে স্ব স্ব দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। সমঝোতা অনুযায়ী একটি আসনে একটি দলের প্রার্থী থাকবেন। অন্য দলগুলো তাকে জয়ী করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের যুগান্তরকে বলেন, আমরা আসন সমঝোতার খুব কাছাকাছি আছি। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে রাজি হয়ে আমাদের সঙ্গে আরও কয়েকটি দল যোগ দিতে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের সমমনা দলের সংখ্যা ৮ থেকে বেড়ে ১০ বা ১১ পর্যন্ত হতে পারে। সংখ্যার ভিত্তিতে শরিকদের সঙ্গে কোনো আসন ভাগাভাগি হবে না। ৮ দলের নেতারা সবাই একমত পোষণ করেছেন যে, যাকে যেখানে দিলে বিজয়ী হতে পারবেন তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে। আসন সমঝোতার ভিত্তিতে ইসলামপন্থিদের সব ভোট এক বাক্সে নিয়ে আসাটা প্রধান লক্ষ্য। সেটা নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না বলে আমরা আশাবাদী।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ১২০টি আসনে প্রার্থী দিতে চায়-এমন তথ্য জানিয়েছেন দলটির দপ্তর সম্পাদক মাওলানা লোকমান হোসেন জাফরী। তবে দলের মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমরা ৮ দল আসলে একদলের মতোই কাজ করছি। যাকে যেখানে দিলে বিজয় নিশ্চিত হবে তাকে সেখানে প্রার্থী করা হবে। তিনি যে দলেরই হোন।

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদের যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা ৩০ আসনে প্রার্থী দিতে চাই-এমনটিই জানিয়েছি। তবে সেটা আলোচনা সাপেক্ষে। আমি হবিগঞ্জ-৪ থেকে নির্বাচন করতে চাই।’ 

এই আসনে জামায়াত প্রার্থী পরিবর্তন করে সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে দিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আহমেদ আব্দুল কাদের বলেন, আমি শুরু থেকেই বলছি, কোনো আসনই ৮ দল এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করেনি।

খেলাফত আন্দোলন ২০টি আসনে প্রার্থী দিতে চায় বলে জানিয়েছেন দলের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টিও কমপক্ষে ১০টি করে আসন দাবি করেছে। সব মিলিয়ে ৭ দলের দাবি প্রায় ২২০টি আসন। আরও ২-৩টি দল এই জোটে এলে তাদের জন্যও আসন ছাড়তে হবে জামায়াতকে। তখন জামায়াতে ইসলামীর কতটা আসন থাকবে সেটাই প্রশ্ন।