Image description

সিলেটের ৬টি নির্বাচনী আসনের মধ্যে ৪টিতে প্রাথমিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট-১ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও সিলেট-২ আসনে সাবেক এমপি এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। সিলেট-৩ ও সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণায় চমক দেখায় বিএনপি। সিলেট-৩ আসনে প্রার্থী দেয়া হয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সভাপতি এমএ মালিককে ও সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী করা হয় জেলার সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীকে। ভোটের মাঠে এগিয়ে থাকা নেতাদের টপকে তাদের হাতেই যায় দলের মনোনয়ন। কিন্তু দু’জনকে নিয়েই ভোটের মাঠে নানা অস্থিরতা বিরাজ করছে। । তাদের ঘিরে ভার্চ্যুয়াল মিডিয়াও সরব।

সিলেট-৩ আসনে বিএনপি’র প্রার্থী তালিকায় এমএ মালিক ছাড়াও ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এমএ সালাম, জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী,  জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল, নগর সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার রিয়াসাদ আজিম আদনান। এ আসনে এমএ মালিক নবাগত প্রার্থী। দলের অনেক নেতাকর্মী এখনো তার ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না। এতে প্রার্থীর সমর্থকদের তরফ থেকে হুমকি-ধমকিরও অভিযোগ ওঠছে। আর এ ঘটনায় প্রকাশ্যেই ক্ষোভ ঝেড়েছেন ভোটের মাঠে থাকা আরেক প্রার্থী ব্যারিস্টার এমএ সালাম। তিনি হুমকির ঘটনায় সাবধানও করে দিয়েছেন। 

পাল্টাপাল্টির ঘটনায় এখন সরব সিলেট-৩ আসন। দূরত্ব বাড়ছে নেতাদের। তবে মনোনয়ন পাওয়া এমএ মালিক বসে নেই। তিনি পাল্টা হিসেবে শোডাউন দিয়েছেন। নিজের শক্তিশালী অবস্থান জানান দেয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট-৬ আসন নানাভাবে আলোচিত একটি আসন। এ আসনে রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে ভিআইপি প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হয়।

২০১৮ সালে এ আসনে বিএনপি থেকে দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন ফয়সল আহমদ চৌধুরী। এবার তিনি মনোনয়ন পাননি। তবে মাঠে প্রচারণায় ফয়সলের সঙ্গে এগিয়ে ছিলেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আবুল কাহের শামীমসহ কয়েকজন নেতা ও নেত্রী। এমরান পজেটিভ রাজনৈতিক। কিন্তু ভোটে দাঁড়ালে যা হয় তাই হচ্ছে এবার। ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ায় কাবু তিনি। বিরোধীরা সরব। তারা নানা সময়ের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ভাইরাল করা হয়েছে। ফোনকলও ভাইরাল হয়েছে। এসব ঘটনায় বিতর্কও পিছু ছাড়ছে না এমরান আহমদ চৌধুরীও। শিক্ষিত জনপদ গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার।  ভোটের মাঠে রয়েছে নানা প্রেডিকশন। এ আসনে বিএনপি’র ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে জামায়াতে ইসলামও। দলের প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম উদ্দিনকে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন জামায়াত নেতারা। জমিয়ত প্রার্থী হাফেজ ফখরুল ইসলামও বসে নেই। একাংশের ভোট নিয়ে লড়াইয়ের আভাস দিয়েছেন। এমরানকে নিয়ে বিতর্কে দুশ্চিন্তা বাড়ছে নেতাদের মধ্যে। 

ভোটের শেষ হিসাব কী হবে সেটি নিয়েও তারা টেনশনে। গত ৮ই নভেম্বর দলের এক আলোচনায় স্থানীয় বিএনপি’র কয়েকটি ইউনিটের নেতারা ফয়সল আহমদকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। এমরান আহমদ চৌধুরীর বাড়ি গোলাপগঞ্জে। বিয়ানীবাজার বিএনপি এখনো পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণে নেই। নেয়ার চেষ্টা করছেন। ওখানকার নেতাদের অনেকেই এখনো নড়ছে না। এই অবস্থায় এমরানকে নিয়ে  ভোটের মাঠে নানা প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। বসে নেই এমরান আহমদ চৌধুরী। নির্বাচনী এলাকায় পড়ে আছেন। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তিনি ঘুরছেন হাটে-মাঠে। দলীয় নেতাদের মধ্যে বিরোধ কমানোর চেষ্টা করছেন। এতে কোথাও কাজ হচ্ছে, কোথাও হচ্ছে না। বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না থাকার সুযোগ নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামীও।

এমরান আহমদ চৌধুরী অবশ্য তার বিরুদ্ধে তোলা সকল প্রচারণাকে অপপ্রচার ও মিথ্যাচার বলে দাবি করেছেন। তৃণমূলের নেতারা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে প্রার্থী রিভিউয়ের বিষয়টি দলের উচ্চ পর্যায় থেকে জানানো হয়েছে। বিতর্কিত হলে প্রার্থী দেয়া হবে না। ফলে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের ঘিরে বিতর্ক এ ক্ষেত্রে তাদের প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। সিলেট জেলা বিএনপি’র এক শীর্ষ নেতা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, দলের মহাসচিব প্রার্থী ঘোষণার দিনই বলেছেন এটা প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা। কেউ বিতর্কিত হলে প্রার্থী রিভিউয়ের সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, দল এককভাবে কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। অবশ্যই দলের শীর্ষ নেতারা এসব বিষয় দেখবেন। চূড়ান্তভাবে ভোটে নামার আগে অনেক কিছুই হতে পারে। যারা দীর্ঘ ১৮ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন, নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের দিকে দলের শীর্ষ পর্যায়ে সুদৃষ্টি থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।