ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন বিভিন্ন আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। গণসংযোগ, মোটর শোডাউন, ব্যানার ও ফেস্টুনে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন তারা। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব রয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতসহ বেশিরভাগ দলের প্রধানরাও প্রার্থী হয়েছেন। নিজেরা যাচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। অথবা তাদের পক্ষে স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন।
তবে জুলাই আন্দোলন থেকে গড়ে ওঠা আলোচিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রধান নাহিদ ইসলাম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বললেও এখন পর্যন্ত তিনি নিজে গণসংযোগ করছেন না। নির্বাচনি এলাকায় তার পক্ষে নেই দৃশ্যমান কোনও প্রচারণা। এ নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে— রামপুরা, হাতিরঝিল ও ভাটারা এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলের মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন নাহিদ। এ আসনেই তার বসবাস। ইতোমধ্যে দলটির মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন এক হাজার ৪৮৪ জন।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতারসহ সারা দেশে দলটির সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচারণা চালালেও এ ক্ষেত্রে নাহিদের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ নির্বাচনি এলাকায় তার দৃশ্যমান তৎপরতা নেই। এ নিয়ে দলের মাঠ পর্যায়েও নানা আলোচনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। যদিও এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি—নাহিদ নির্বাচন করবেন এটি শতভাগ নিশ্চিত। তবে তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তেই প্রচারণায় জোর দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘নাহিদ ইসলাম অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। তার সম্ভাব্য আসন ঢাকা-১১। তিনি নীরবে নির্বাচনি কাজ করছেন। তবে তিনি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তেই প্রচারণার বিষয়টি এখনই গণমাধ্যমে আনতে রাজি হননি। আর বিলবোর্ড বা পোস্টারে প্রচারণাকেও তিনি নিরুৎসাহিত করেন।’’
আরিফুল ইসলাম আদিব জানান, মূলত তিনি (নাহিদ) চান তার দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা আগে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করুক। দলের প্রধান হয়ে আগেই নিজে প্রচারণায় নামলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে তার ধারণা।
মনোনয়ন ফরম নিলেন নাহিদ, গোপনীয়তা কেন?
এনসিপি কেন্দ্রীয় নেতাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে দলীয় উদ্যোগেই। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের ছবিও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু দলীয় প্রধান নাহিদ ইসলামের মনোনয়ন নেওয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) এ বিষয়ে এনসিপির নির্বাচনি মিডিয়া উপকমিটির প্রধান মাহবুব আলম বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নাহিদ ইসলাম ঢাকা-১১ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তবে সাংগঠনিক ও নাহিদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তেই গণমাধ্যমে আলাদাভাবে বিষয়টি ফলাও করা হয়নি বলে জানান দলের একাধিক নেতা।
এনসিপির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যুগ্ম সদস্য সচিব বলেন, ‘‘নির্বাচনে এনসিপির অংশগ্রহণ দুইভাবে হতে পারে— জোটগত ও এককভাবে। এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় আহ্বায়ক নিজের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের বিষয়টি সামনে আনতে চাননি। সে কারণে প্রচার করা হয়নি।’’ তবে শিগগিরই নাহিদ নিজেই বিষয়টি খোলাসা করবেন বলে জানায় দলীয় সূত্র।
নাহিদের আসনে অন্য দলের প্রার্থীদের তৎপরতা
রামপুরা, হাতিরঝিল, বাড্ডা, ভাটারা এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১,২২,২৩,৩৭,৩৮, ৩৯,৪০,৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসন। এ আসন থেকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি দলের প্রার্থিতা ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। তারা ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইয়ুম, জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান ও চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলে বারী মাসুদ। সরেজমিন আসনটির বেশিরভাগ গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও সড়কে এই তিন প্রার্থীর ব্যানার-ফেস্টুন চোখে পড়ছে। পাড়া-মহল্লায় তাদের পক্ষে মিছিল ও গণসংযোগ হচ্ছে। সে অর্থে এই এলাকায় নাহিদের কোনও তৎপরতা নেই।
রামপুরার উলন এলাকায় দোকানে কয়েকজন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তারাও নাহিদের প্রার্থিতার বিষয়টি তেমন জানেন না বলে উল্লেখ করেন।
দলীয় প্রধানের আসনে নেই প্রচারণা, নেতাদের ব্যাখ্যা
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। তারা সব সময় নিজ নির্বাচনি এলাকায় নিবিড় যোগাযোগ রাখছেন। প্রচারণা চালাচ্ছেন ব্যাপকভাবে। সেই অর্থে দলীয় প্রধান হিসেবে নিজের নির্বাচনি এলাকা ঢাকা-১১ আসনে দৃশ্যমান কোনও প্রচারণা নেই নাহিদ ইসলামের।
যেখানে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (ঢাকা-১৮), উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১), দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪) ও যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসনে নিয়মিত যাতায়াত ও সভা-সমাবেশ করছেন। এসব নির্বাচনি এলাকায় গেলেই এনসিপির এই নেতাদের ছবি সংবলিত বড় বড় বিলবোর্ড চোখে পড়ছে। অথচ নাহিদের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘‘নাহিদ ইসলাম দলীয় প্রধান। তিনি জাতীয় রাজনীতি নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। তবে তার এলাকায় নেতাকর্মীরা ঠিকই গণসংযোগ করছেন। সাংগঠনিক কৌশলের অংশ হিসেবে এখনই দলীয় প্রধানের প্রচারণার বিষয়টি সামনে আনা হচ্ছে না। আর নাহিদ নিজেও প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে আগাম কিছু করতে চান না।’’ তিনি জানান, অচিরেই নাহিদের পক্ষে মাঠে নামবেন নেতাকর্মীরা।
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘‘আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা অনেক আগে থেকেই নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।’’ প্রার্থিতা চূড়ান্ত হলে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ সবাই আরও সক্রিয় হবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।