ঢাকা-১৪ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সানজিদা ইসলাম তুলির বিরুদ্ধে সম্প্রতি চার বিবাহ সম্পর্কিত একটি মন্তব্যের কারণে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা হয়েছে। হোসাইন মোহাম্মদ আনোয়ার নামের এক ব্যবসায়ী আজ বুধবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুর রহমানের আদালতে মামলা করেন।
বাদীর আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের জানান, ‘ধর্ম অবমাননার ঘটনার কারণে আমরা আদালতে মামলা করেছি। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেছেন এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’
অভিযোগে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪১ অনুযায়ী ধর্মচর্চার অধিকার হলো মানুষের মৌলিক অধিকার। ‘বিবাহ’ হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতিনীতি ও বিধান। পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ৩ নম্বর আয়াত অনুযায়ী একজন মুসলিম পুরুষ ৪টি পর্যন্ত বিবাহ করতে পারবেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ‘মুসলিম পার্সোনাল ল’ (শরিয়ত) অ্যাপ্লিকেশন অ্যাক্ট, ১৯৩৭’ ধারা (২) অনুযায়ী বিবাহ, ভরণপোষণ, তালাক ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিদ্যমান পক্ষগণ যদি মুসলিম হন, সে ক্ষেত্রে ইসলামি শরিয়াহ আইন প্রযোজ্য হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো নাগরিক ধর্ম প্রতিপালন না–ও করতে পারে, কিন্তু ধর্মকে অপমান করা এবং ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার অধিকার কারও নেই।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বিবাদী সানজিদা ইসলাম তুলি ইসলামে বিবাহ ইস্যুতে অবমাননাকর বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে অপমান করেছেন এবং মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করেছেন, যা দণ্ডবিধির ২৯৫(ক) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কী বলেছিলেন তুলি
সম্প্রতি এক সমাবেশে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তুলি বলেছেন, ‘একজন পুরুষের ক্ষেত্রে চারটা বিবাহ করা যাবে, এই অধিকার কি আমার বোনরা দিয়েছে কাউকে? এই সমাজ আমরা চাই না, এই সমাজ ব্যবস্থায় এদের কোনো জায়গাও আমরা দিতে চাই না।’
তুলির বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। তৌহিদি জনতা তার এই বক্তব্যকে সরাসরি ইসলাম বিদ্বেষী এবং কুরআন অবমাননার শামিল বলে অবহিত করেছেন।
এ বিষয়ে সানজিদা ইসলামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ১৫ নভেম্বর ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টের কথা উল্লেখ করেন। ওই পোস্টে তিনি বলেছিলেন, ‘আজ নারীর অধিকার নিয়ে বলতে গিয়ে আমি চার বিয়ের ব্যাপারে ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। কোরআন ও সুন্নাহতে একাধিক বিয়ের অনুমতি আছে, তবে শর্ত হলো ন্যায়বিচার (সুরা নিসা ৪:৩)। ইসলামে একজন পুরুষ সর্বোচ্চ চারটি বিয়ে করতে পারে, তবে কঠোর শর্ত হলো—প্রতিটি স্ত্রীকে সময়, অর্থ, অধিকার ও মর্যাদায় পূর্ণ সমান ন্যায়বিচার করতে হবে। কোরআন স্পষ্ট নির্দেশ দেয়: যদি ন্যায়বিচার করা সম্ভব না হয়, তবে ‘একটিতেই সীমাবদ্ধ থাকো’ (সুরা আন-নিসা ৪:৩)।’
সানজিদা ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের বুঝতে হবে ইসলাম নারীর সম্মান, অধিকার ও নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। তাই শুধু আইনের একটি অংশ ধরে নয়, পুরো নির্দেশনা অনুসারে চলা জরুরি। সমাজের দায়িত্ব হলো নারীর সকল অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতি সম্মান বজায় রাখা। তাই আমার বক্তব্য ছিল শুধু এই আমাদের বোনদের ধোঁকা দিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করা, তাদের হক থেকে বঞ্চিত করা এবং প্রতারণা করা ইসলামের শিক্ষা নয়। ইসলাম ন্যায়, স্বচ্ছতা ও আমানতের ওপর জোর দেয়, প্রতারণার ওপর নয়।’