Image description

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সেই আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং বর্তমান গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল। সেই ভয়াবহ নির্যাতনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসির) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমদ। সেই নির্মম ঘটনার স্মৃতিচারণ করেছেন রাশেদ খাঁন।

তাছাড়াও, সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগও জানিয়েছেন বলে জানান তিনি। মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ ভ্যারিফায়েড ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। 

পাঠকদের জন্য রাশেদ খাঁনের ফেসবুক পোস্টটি তুলে ধরা হলো: 
‘এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ চেয়ার থেকে উঠে এসেই আমার বিশেষ স্থানে লাথি মারলো৷ আমি ‘মাগো’ বলে চিৎকার করে উঠলাম। আমাকে লাথি-ঘুসি মারতে থাকলো। আমি চিৎকার করছি... মারতে থাকলো আর বলতে থাকলো, চোরের মতো চেহারা, আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গালি দিয়েছিস!’

‘আমাকে আজকে এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ মেরেই ফেলবে! একজন এসআইকে বললো আমার হাত মুখ বাঁধার জন্য। এরপর পুলিশের লাঠি দিয়ে আমাকে টানা গালিগালাজ ও মারতে থাকলো। মুখ গামছা দিয়ে বাঁধার কারণে আমি গোংরাতে থাকলাম। আমার পুরো শরীর থ্যাঁতলে দিলো। আমি আর দাঁড়াতে পারছি না। বাঁচার জন্য নিজের অজান্তেই আমি কয়েকবার এডিসি ইশতিয়াকের পা ধরতে গেছি। বারবার বলেছি, আমাকে মাফ করে দেন, আমি মরে যাবো। আমার কোনো কাকুতিমিনতি তার হৃদয় স্পর্শ করেনি।

আমার আঙুল ফেটে ফ্লোরে রক্ত পড়লো। টিস্যু দিয়ে রক্ত মুছে ফেললো। এরপর আমাকে দাঁড়াতে বললো। আমি দাঁড়াতে পারছি না। আর এ কারণে বারবার ছুটে এসে মারতে থাকল। আমাকে দাঁড়াতেই হবে। আমি খুব কষ্ট করে উঠে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম কিন্তু হেলান দেওয়া যাবেনা। আমাকে আবার এসে মারলো। আমি প্রাণে বাঁচার জন্য একা একা দাঁড়াতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু একা দাঁড়াতে গিয়ে বারবার পড়ে যাচ্ছি। আমি যতক্ষণ দাঁড়াতে পারছি না, ততক্ষণ আমাকে মারলো। একটা পর্যায়ে খুব কষ্ট করে হাঁটু বাঁকা করে দাঁড়ালাম …’ 

‘আমি বারবার আল্লাহকে ডেকেছি আর অভিশাপ দিয়েছি। আমি রাতে ব্যথায় ঘুমাতে পারিনি। সারারাত অসহনীয় কষ্ট। মনে হচ্ছিলো আমার পুরো শরীর রক্তে আঠা আঠা হয়ে গেছে.....’
‘আমার জীবনে আর কোনো প্রাপ্তি নেই। যে আন্দোলন সফল করতে গিয়ে আমি এতো নিপীড়নের শিকার হয়েছি, সেই কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনা পতন ও আজকের ফাঁসির রায় আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। অনেক ইতিহাস হৃদয়ে লেখা, জানি না কখনো বইয়ের পাতায় লিখতে পারবো কি না!’

রাশেদের আরেকটি ফেসবুক পোস্ট: 
‘এডিসি ইশতিয়াক আহমেদ পুলিশ নামের কুখ্যাত সন্ত্রাসী। বর্তমানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মামলায় কারাগারে আছে। আমিও তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে অভিযোগ দাখিল করেছি।’
‘এই ইশতিয়াকের মতো অসংখ্য সন্ত্রাসী এখনো পুলিশে রয়েছে। এদের খুঁজে বের করতে ও শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীরা সোচ্চার হন। পুলিশের যাদের দ্বারা নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, তাদের শাস্তি নিশ্চিতে আইনের দ্বারস্থ হন। ন্যায়বিচারের রাষ্ট্র নিশ্চিতে অপরাধীদের অবশ্যই শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।’