Image description

রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা অনুমোদন করেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে তা ইতিমধ্যে আইনি ভিত্তি পেয়েছে। প্রধান দলগুলোর সবাই খুশি না হলেও দৃশ্যত তারা এটি মেনেই নিয়েছে। ফলে সংস্কার নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার আপাত সুরাহা হয়েছে বলা চলে। তবে ভবিষ্যৎ সংস্কার পুরোপুরি নির্ভর করছে গণভোটের ফলাফলের ওপর। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পরিবর্তে ‘না’ জয়ী হলে কী হবে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ঐকমত্য কমিশনের নয় মাসের আলোচনা, রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টা ভেস্তে যাবে? আপাতত এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কারও কাছেই নেই।

‘না’ ভোট জয়ী হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী দল জুলাই সনদ মেনে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে না। পরবর্তী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ইচ্ছার ওপরই সংস্কার নির্ভর করবে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার’ এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ ঘোষণা করে বিএনপি। সেই আলোকেই দলটি ভবিষ্যৎ সংস্কার এগিয়ে নিতে পারে। তা আবার জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার সঙ্গে মেলে না। অবশ্য জামায়াত জুলাই সনদের প্রায় সবগুলো সংস্কার প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। গণভোটে ‘না’ জয়ী হলেও কি জুলাই সনদ মেনে সংস্কার করবে, নাকি নিজেদের মতো করে নতুন ফর্মুলা সামনে আনবে, তা সময়ই বলে দেবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় ৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান-সংক্রান্ত। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভিন্নমত আছে। ভিন্নমত সত্ত্বেও বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল গত ১৭ অক্টোবর সনদে সই করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু সনদ ও গণভোটের আইনি ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়। গত ২৮ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ সরকারকে দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর ১৩ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রকাশ করে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। চারটি বিষয় হলেও আসলে এর মধ্যে সংবিধান সম্পর্কিত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবই আছে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে আগামী সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর পদ্ধতি) ১০০ সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। অর্থাৎ এসব সংস্কার করতে হলে অবশ্যই ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হতে হবে।

জুলাই সনদ প্রণয়নে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী মনোভাব দেখান, আবার প্রত্যাখ্যান হলে তা মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।

আলী রীয়াজ বলেছিলেন, ১৭৯০ থেকে শুরু করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে ৮০০ শতাধিক গণভোট হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে গণভোট ‘ফেল’ করেছে। তিনি আরও বলেন, শঙ্কাটা অন্য জায়গায়। এত দিনের চেষ্টা, এত বিষয়ে ঐকমত্য হলো। তারপর জনগণের কাছ থেকে সেটা প্রত্যাখ্যান হয়ে গেল। সেটা মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।

চার প্রশ্নের উত্তর একটি, ঝুঁকি

৪৮টি সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব নিয়ে গণভোট হবে। প্রস্তাবগুলোকে চারটি বিষয়ে ভাগ করে একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। গণভোটের প্রশ্নটি হবে এ রকম: ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’

ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

গ. সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

‘গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাতে হবে। এখানেই মূল জটিলতাটা রয়ে গেছে। চারটি প্রশ্নের কোনো কোনোটিতে বিএনপি ও সমমনাদের আপত্তি আছে। জামায়াত ও সমমনাদের আপত্তি আছে অল্প কিছু বিষয়ে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হয় জুলাই সনদ অনুসারে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার স্বীকৃতি দিয়ে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে হবে। নতুবা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এর ফলে ‘না’ ভোট জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেওয়া যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মত হচ্ছে—কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল হওয়ার সুযোগ দেবে বলে মনে হয় না। ফলে তাদের সমর্থক ও ভোটারেরা ‘না’ ভোটের দিকে ঝুঁকতে পারে।

অন্যদিকে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, উচ্চকক্ষের ক্ষমতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিষয়ে বিএনপির ভিন্নমত বেশি। ফলে দলটির সমর্থকদের অনেকে ‘না’ ভোট দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এর মধ্যে গত শুক্রবার নোয়াখালীর নিজ নির্বাচনী এলাকায় এক কর্মসূচিতে গণভোটে ‘না’ ভোট দিতে আহ্বান জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন

 

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কী হবে

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী, গণভোটের প্রশ্নের প্রথম বিষয় হলো: ‘নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে’।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ সব দলই একমত। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে প্রক্রিয়া জুলাই সনদে রয়েছে, এর কয়েকটি ধাপ নিয়ে ভিন্নমত আছে বিএনপির।

এই পরিস্থিতিতে গণভোটে ‘না’ জয়ী হলে এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠনের প্রক্রিয়া কীভাবে গ্রহণ করে, সেটা দেখার বিষয়। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় অপেক্ষমাণ আছে। রায়ের নির্দেশনা মানার একটা বাধ্যবাধকতা আছে। ফলে জুলাই সনদ জনগণের রায় না পেলেও উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরাফাইল ছবি: প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়

জুলাই সনদে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি), ন্যায়পাল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) ও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) নিয়োগের পদ্ধতি সংবিধানে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। সরকারি দল, বিরোধী দল ও ক্ষেত্রবিশেষে বিচার বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত বাছাই কমিটির মাধ্যমে এসব সাংবিধানিক পদে নিয়োগ হবে।

নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে একমত হলেও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে এভাবে নিয়োগের বিষয়ে বিএনপির ভিন্নমত আছে। দলটি এসব প্রতিষ্ঠানে আইনের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে। অন্যদিকে ঐকমত্য কমিশনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে একমত জামায়াত ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

বিএনপি তাদের ঘোষিত ৩১ দফায় বলেছে, স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে সব রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করা হবে। ফলে বিএনপি জয়ী হলে নিজেদের মতো আইন-বিধিবিধান করতে পারে।

ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৫টি রাজনৈতিক দল সংসদের উচ্চকক্ষ চায়। বিএনপি তাদের ৩১ দফাতেও ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের অঙ্গীকার করেছে। কিন্তু উচ্চকক্ষ গঠনের বিষয়ে জুলাই সনদে যে পদ্ধতির কথা উল্লেখ রয়েছে, তা নিয়ে দ্বিমত আছে বিএনপিসহ সাতটি দলের।

জুলাই সনদ অনুসারে, সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। অন্যদিকে বিএনপি ও তাদের শরিক ১২-দলীয় জোটসহ সমমনা দলগুলোর চাওয়া হচ্ছে—নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে ভাগ হবে উচ্চকক্ষের আসন।

জুলাই সনদ অনুসারে, গণভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট ‘হ্যাঁ’ সূচক হলে আগামী সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধি নিয়ে একটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এই প্রতিনিধিরা একই সঙ্গে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। পরিষদ তার প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ থেকে ১৮০ কার্যদিবসের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পর ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদ নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যানুপাতে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। এর মেয়াদ হবে নিম্নকক্ষের শেষ কার্যদিবস পর্যন্ত। সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন লাগবে।

গণভোটে ‘না’ সূচক ভোট জয়লাভ করলে সংসদের উচ্চকক্ষ গঠনেরই আইনি বাধ্যবাধকতা থাকবে না। তখন যে দল ক্ষমতায় আসবে, চাইলে তাদের মতো করে উচ্চকক্ষ হতে পারে।

সবকিছু নির্ভর করছে ভোটার ও রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর

যেকোনো নির্বাচনে ভোটারদের কেন্দ্রে আনার মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দল, তাদের মনোনীত প্রার্থী এবং নেতা-কর্মীদের। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হবে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে—এমনটাই ধারণা করা যায়।

তবে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে ৪৮টি বিষয়ের ওপর। যা কিছুটা জটিল, সংবিধান–সংক্রান্ত। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের যেভাবে বোঝাবে, সে অনুসারেই গণভোটের ফল আসার সম্ভাবনা বেশি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার ওপরই গণভোটের ফলাফল নির্ভর করছে।

গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জিতলে সংস্কারের নতুন যুগ শুরু হবে—এটা নিশ্চিত। কিন্তু ‘না’ জিতলেও সব পথ বন্ধ হয়ে যাবে না। কিছু সংস্কার নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। তবে অনেক মৌলিক সংস্কারই অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে, যা নির্ভর করবে ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের পতনের আগে বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে তিন জোটের রূপরেখা বা সংস্কার উদ্যোগ তৈরি করা হয়। তবে সেটি আইনি ভিত্তি পায়নি। ফলে এর বেশির ভাগই পরবর্তী সংসদে বাস্তবায়ন করা হয়নি।

২০০১ সাল থেকে পরবর্তী সবগুলো নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দল ও তাদের জোট দুই–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করেছে। আগামী নির্বাচনে কোনো দল ও জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে সংস্কারের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা বলা মুশকিল। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে হয়তো বিরোধীদের চাপের মুখে থেকে কিছু কিছু সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে।