নাশকতামূলক কার্যকলাপ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের মোট ৩১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ।
পুলিশের দাবি, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ নারায়ণগঞ্জ সদর থানা শাখার সহ-সম্পাদক মো. রাব্বী সরদার (২৫)-এর কাছ থেকে একটি সচল রিভলভার উদ্ধার করা হয়েছে।
শুক্রবার (৭ নভেম্বর) সকালে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে ঢাকা জেলার সব থানা—সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ মডেল, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহার—অংশ নেয়।
পুলিশের বিশেষ অভিযানে সবচেয়ে আলোচিত গ্রেপ্তারটি হয়েছে মো. রাব্বী সরদার (২৫)-এর। বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উত্তর পানগাঁও এলাকার দোকানবাড়ি মোড় থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তল্লাশির সময় তার থেকে একটি দেশীয় সচল রিভলভার উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার রাব্বী সরদার কয়েক মাস ধরে ঢাকা মেট্রোপলিটনের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানা এলাকার মিছিলের অগ্রভাগে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার পক্ষে ডিএমপিসহ বিভিন্ন জেলায় পোস্টার লাগানোর নেতৃত্ব দেন। পুলিশের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, তার মোবাইল ফোনে দেশ এবং বিদেশে অবস্থানরত ফ্যাসিস্টদের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া ৩১ জনের মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। তাদের মধ্যে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ এবং আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য ও নেতারাও আছেন।
গ্রেপ্তারের হিসাব অনুযায়ী, সাভার থানায় ৪ জন, আশুলিয়া থানায় ৩ জন, ধামরাই থানায় ১ জন, কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় ৬ জন, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ৮ জন, নবাবগঞ্জ থানায় ৭ জন এবং দোহার থানায় ২ জনকে আটক করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন— সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি তানজিরুল রহমান, বিরুলিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন, ধামসোনা ইউনিয়ন যুবলীগের তথ্য সম্পাদক মো. ওবায়দুল ভূঁইয়া, ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপসম্পাদক মো. পারভেজ কবীর ওরফে শাকিব, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আবু তাহের মন্টু, কালিন্দী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাম, রুহিতপুর ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. সালমান, শুভাঢ্যা ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম জুয়েল, নবাবগঞ্জ থানাধীন চূড়াইন ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক শাফায়েত হোসেন শিপু, নবাবগঞ্জ থানাধীন কৈলাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আছিফ চাকলাদার, ঢাকা জেলা তাঁতী লীগের সভাপতি রমজান আলী, দোহার থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আজাদ হোসেন খান।
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আনিসুজ্জামান জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতরা (আওয়ামী লীগের) সক্রিয় কর্মী ও মিছিল-মিটিংয়ে নিয়মিত অংশগ্রহণকারী। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের নাশকতামূলক কার্যকলাপ কঠোরভাবে দমন করা হবে এবং এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।