Image description
ঋণ প্রবৃদ্ধি ইতিহাসের সর্বনিম্ন

ঋণ সংকটে বিপদে আছেন দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা। ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া দিনদিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, যার কারণে নতুন ব্যবসায় বিনিয়োগ অনেকটাই থমকে গেছে। ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও খেলাপি ঋণের বোঝা সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে। অনেক ব্যাংক এখন নতুন ঋণ দেওয়ার আগে, আগের ঋণ উদ্ধারে মনোযোগ দিচ্ছে। এর ফলে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বারবার ব্যাংকে গেলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছেন না। বর্তমানে ব্যাংক ঋণের গড় সুদের হার ১৩ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে অবস্থান করছে। অনেক উদ্যোক্তা বলছেন, এত উচ্চ সুদে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে, নতুন কোনো প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ কমে গেছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সুদের বোঝায় টিকে থাকা কঠিন, নতুন বিনিয়োগের চিন্তা তো দূরের কথা। সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন বাংলাদেশ  প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছি তাদের ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে অনেক বেগ পোহাতে হয়। অনেকে মায়া কান্না করে। কিন্তু কেউ কোনো কাজ করে না। ব্যাংক নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়ায় ঋণ নেওয়া কঠিন হয়ে উঠেছে।’ তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখন অভিভাবকহীনতায় ভুগছে। বড় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সুযোগ পেলেও আমরা সব সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সুদ কমানোর কোনো স্বদিচ্ছাও কারও নেই।’ পরিকল্পনা কমিশনের সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা গেছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হার গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। ঋণ প্রবৃদ্ধি এখন বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২৯ শতাংশে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি ধারাবাহিকভাবে কমছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সরকার বড় অঙ্কের ঋণ নেওয়ার কারণে বেসরকারি খাতের জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যে হারে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, সে সমস্যার সমাধান করা এখন ব্যাংকিং খাতের জন্য অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের মোট বকেয়া ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের ১৬ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকার তুলনায় ৬ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি।

দেশে এখন মোট খেলাপি ঋণ প্রায় ৬ লাখ কোটি টাকা। এর বড় অংশই বড় ঋণগ্রহীতাদের হাতে কেন্দ্রীভূত। অথচ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংকগুলো বরাদ্দ রাখে খুবই সীমিত পরিমাণ তহবিল। এর ফলে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করতে পারছেন না, পুরোনো ব্যবসায়ীরাও টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যে ভূমিকা রাখছেন, তা অনেক সময় গুরুত্ব পায় না। অথচ এই খাতেই কর্মসংস্থানের সবচেয়ে বড় অংশ তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণপ্রাপ্তি সহজ করা এখন শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিকভাবেও প্রয়োজন।