Image description
১৩ নভেম্বর ঘিরে উত্তেজনা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার সম্ভাব্য তারিখ ১৩ নভেম্বর। এ দিন ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। ঢাকায় লাখ লাখ লোকের সমাগম ঘটিয়ে বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি, লকডাউন কার্যকর, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা এবং গাড়িতে আগুন দিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরি করাসহ নানা অপতৎপরতার তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো সুনির্দিষ্ট থ্রেট না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এসব তথ্যকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সে অনুযায়ী নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। শুধু তাই নয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা এরই মধ্যে শুরু করেছে আভিযানিক কার্যক্রম। প্রত্যেক ক্রাইম ডিভিশনেই বাড়ানো হয়েছে আভিযানিক টিম। নিষিদ্ধ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে নেওয়া হচ্ছে প্রযুক্তিগত সহায়তা। সোমবার থেকে শুরু হবে বড় অভিযান। আওয়ামী লীগের অপতৎপরতা ঠেকাতে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি মাঠে থাকবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খোন্দকার রফিকুল যুগান্তরকে বলেন, ১৩ নভেম্বর ঘিরে কোনো দল বা গোষ্ঠী বিশেষ কিছু ঘটাবে বলে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা অপপ্রচার আছে। এসব অপপ্রচারকে সামনে রেখে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি অতীতে যেভাবে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করেছে, এবারও তেমন কিছু করার চেষ্টা করছে। আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছি না। পুলিশ শক্ত অবস্থানে আছে। রাজধানীসহ সারা দেশে চেকপোস্ট বাড়ানোর পাশাপাশি তল্লাশি কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছি। চলমান অভিযান ১০ নভেম্বর থেকে অনেক বেশি জোরালো হবে বলেও তিনি জানান।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরদারি বাড়িয়েছি। যেখান থেকে যে ধরনের তথ্য পাচ্ছি সব ধরনের তথ্যকেই গুরুত্ব দিচ্ছি। বিভিন্ন মেসেঞ্জার এবং হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বিশ্লেষণ করে ইতোমধ্যেই বেশকিছু দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করেছি। গ্রেফতারদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সে অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যারা অর্থায়ন করছে তাদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বৃহস্পতিবার রাতে ছয়জন এবং শুক্রবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির ডিবি। বুধবার চারজনকে এবং বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে ৩০ জনকে। ওই কর্মকর্তা জানান, দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর গত ১৪ মাসে তারা ঝটিকা মিছিলসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের মাধ্যমে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু পুলিশি তৎপরতায় বারবার ব্যর্থ হয়েছে। তাই পুরোনো কৌশল বাদ দিয়ে এবার তারা নতুন কিছু করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়ে ব্যাপক হতাহতের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে জনমতে আতঙ্ক তৈরি করতে চায়। নৈরাজ্য সৃষ্টির ৩১ পরিকল্পনাকারীকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ।

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এসএন নজরুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে এই মুহূর্তে বড় কিছু করা সম্ভব নয়। তবে ১৩ নভেম্বর ঘিরে ফেসবুক এবং ইউটিউব থেকে আমরা অনেক ধরনের তথ্য পাচ্ছি। এসব তথ্যকে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী মাঠে থাকবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বেশ কয়েকদিন ধরেই কাজ করছে। মাঠে থাকবে রাজনৈতিক দলগুলোও। আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো থ্রেট না থাকলেও আমরা বেশকিছু নেতাকর্মীকে নজরদারিতে রেখেছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্ভাব্য নাশকতার পেছনে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো সহযোগিতা করছেন কিনা সে বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তবে বিষয়টি সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি। আমার কাছে মনে হয়, তারা এখন নিজেদের জীবন বাঁচাতে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে তারা কোনো নাশকতা বা রাজনৈতিক কর্মসূচি সফল করতে সহযোগিতা করবে বলে মনে হয় না।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ১৩ নভেম্বরকে সামনে রেখে নজরদারিতে রাখা হয়েছে ফ্যাসিস্টের বেশকিছু দোসরকে। যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে তাদের একটি তালিকাও তৈরি করেছে একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। সেই তালিকা ধরে মাঠপর্যায়ে অভিযান চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায়ও বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ সময় বিশৃঙ্খলাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, ১০ নভেম্বর থেকেই থেকেই ঢাকার প্রবেশপথ, আবাসিক হোটেল, মেস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলে বিশেষ তল্লাশি অভিযান শুরু হবে। ইতোমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরাও সেগুলো আমলে নিয়ে মাঠে আছি। দেখা যাক কী হয়? তিনি বলেন, নিষিদ্ধ কোনো সংগঠন যে অরাজকতা চালাতে না পারে সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট তৎপর আছি। কেউ নাশকতার চেষ্টা চালালে আমরা কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেব।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এমজেডএম ইন্তেখাব চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ১৩ নভেম্বর ঘিরে ওপেন সোর্সগুলো থেকে আমরাও তথ্য জেনেছি। আমাদের গোয়েন্দা টিম এবং সাইবার মনিটরিং টিম অ্যাকটিভ অবস্থায় আছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সুনির্দিষ্ট কোনো আশঙ্কা আমাদের কাছে নেই। তারপরও র‌্যাব সদস্যরা তৎপর আছে। মাঠে নামার জন্য আমাদের প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রম চলছে। অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন, টহল বৃদ্ধি এবং চেকপোস্ট বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে। ১০ নভেম্বর থেকে মাঠপর্যায়ে এসব দৃশ্যমান হবে। পুরো নিরাপত্তা ছক প্রণয়ন হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে। এছাড়া সিআইডিসহ অন্যান্য ইউনিটের সঙ্গেও সমন্বয় করা হচ্ছে।