
দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ দীর্ঘমেয়াদে সুসংহত এবং তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে জেনারেশন-জি’দের (জেন-জি) (২০০০ সালের পর জন্ম নেওয়া প্রজন্ম) লক্ষ্য করে নতুন কৌশল গ্রহণ করছে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপি। এ লক্ষ্যে দলটির ছাত্র ও যুব সংগঠনকে পুরোপুরি সক্রিয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিএনপির হাইকমান্ড জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে বর্তমান সময়ে প্রযুক্তি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং নতুন চিন্তাধারায় বেড়ে ওঠা তরুণদের কাছে দেশপ্রেম ও রাজনীতি বিশ্বাসযোগ্যভাবে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, শিক্ষাভিত্তিক আলোচনা এবং তরুণদের নেতৃত্বে আনার মতো নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিএনপি।
জানা গেছে, বিএনপির তরুণ ও প্রযুক্তিবিষয়ক একটি উপ-কমিটি ইতোমধ্যে ‘তারুণ্যের বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি ডিজিটাল ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। যেখানে জেন-জি’দের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ইনফোগ্রাফিক, শর্ট ভিডিও এবং ইন্টারঅ্যাকটিভ কনটেন্ট। এ ব্যাপারে দলটির এক শীর্ষনেতা জানান, পুরনো রাজনীতির ভাষা দিয়ে নতুন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করা যাবে না। তাই আমরা তাদের ভাষা, প্ল্যাটফর্ম এবং আগ্রহের জায়গায় পৌঁছাতে চাচ্ছি।
রাজনৈতিক কার্যক্রমে তরুণদের অন্তর্ভুক্তির খুবই জরুরি বলে উপলব্ধি করছে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। আর এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কার্যক্রমকে আরও আধুনিক ও অংশগ্রহণমূলক করার পাশাপাশি ভবিষ্যতের সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব গড়তে শুরু হয়েছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এ ব্যাপারে ছাত্রদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, আমরা চাচ্ছি জেন-জি প্রজন্ম যেন রাজনীতিকে ভয় না পায়। তারা যেন বুঝে অনুধাবন করে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তরুণদের নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হওয়াটা ইতিবাচক। তবে এটি কতটা কার্যকর হবে তা নির্ভর করবে দলগুলোর আন্তরিকতা ও ধারাবাহিকতার ওপর।
২০২৪ সালে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তরুণরা। তাছাড়া দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ হলেও রাজনীতিতে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এখনও কাঙ্খিত নয়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়লেও মাঠপর্যায়ে তাদের সরব উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম। এতে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সামাজিক গবেষকরা মনে করছেন, রাজনীতির প্রতি তরুণদের আগ্রহ থাকলেও তা অনেকটা ডিজিটাল পরিসরে সীমাবদ্ধ।
তথ্য মতে, দেশের ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশই দেশের রাজনীতি নিয়ে আগ্রহী। তবে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত অর্থাৎ কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত এমন তরুণের হার ২০ শতাংশেরও নিচে।
এ ব্যাপারে বিশ্লেষকদের ভাষ্য, তরুণরা এখন অনেক সচেতন। তারা দেশের অবস্থা নিয়ে ভাবেন, মতামত দেন। তবে সরাসরি কোনও সংগঠনের রাজনীতিতে ঢুকতে তারা দ্বিধায় ভোগেন। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতার কারণে তারা দূরে থাকছে।
এদিকে বিএনপির হাইকমান্ড সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদে তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রায় ১৫০টি আসনে দলের তরুণ প্রার্থীরা মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এমন ইঙ্গিতে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ও বর্তমান অনেক নেতা মাঠে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। সূত্র আরও জানায়, কয়েকদিনের মধ্যেই আসনভিত্তিক প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরমধ্যেই ২শ’র অধিক প্রার্থীকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে।