Image description

চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকার দোস্ত বিল্ডিংয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কার্যালয় দখলে নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কে জড়িয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির দাবি, নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপনে ওই ভবনে অফিস চালু করে নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। এ তথ্য জানার পর এনসিপি সেখানে গিয়ে অবস্থান নেয় বলে জানিয়েছে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি করেন এনসিপির নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন দলটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মোহাম্মদ ইরফানুল হক। তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামে ফের সংগঠিত হয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। গত ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে দোস্ত বিল্ডিংয়ে তাদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়, যা বাকলিয়া এলাকায় কার্যক্রমে রূপ নিত— এমন খবর পেয়ে আমরা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে বিষয়টি মোকাবিলা করি।’

এনসিপি নেতারা বলেন, ভবনে প্রবেশ করে তারা সেখানে আওয়ামী লীগের লিফলেট, নেতাদের ছবি, খাওয়া-দাওয়া ও থাকার ব্যবস্থার প্রমাণ পান। স্থানীয়রা জানান, ১২-১৫ বছর ধরে দলটি বিনা ভাড়ায় জায়গাটি ব্যবহার করে আসছে এবং নানা ‘অপকর্ম’ চালাচ্ছে।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আমরা কোনো কার্যালয় দখল করিনি। বরং স্থানীয়দের অনুরোধে এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি হিসেবে সেখানে প্রতীকী অবস্থান নিয়েছি। যতদিন রক্তে রক্ত থাকবে, এ দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদী শক্তির উত্থান হতে দেব না। বক্তব্যে ৫ আগস্টের ‘গণঅভ্যুত্থান’ এবং নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের ঘোষণা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

এনসিপির চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী মো. রাফসান জানি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা খবর পাচ্ছিলাম, দোস্ত বিল্ডিংয়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী নিয়মিত যাতায়াত করছেন। এমনকি শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে একটি সভার পরিকল্পনার কথাও শুনেছিলাম। প্রশাসনকে জানালেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে গতকাল আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেখানে যাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো দখল নিতে যাইনি। বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তি হিসেবে সেখানে অবস্থান নিয়েছি।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘দখলের’ অভিযোগ প্রসঙ্গে দলের আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফ মইনুদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। স্থানীয়রাই আমাদের সহায়তা চেয়েছেন। সেখানে আমরা স্থায়ী অফিস করছি না, শুধু প্রতীকী অবস্থান নিয়েছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, অবস্থান নেওয়ার আগে ও পরে কোতোয়ালি থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে এনসিপির নেতারা যোগাযোগ করেছিলেন। তবে পুলিশ এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়নি।

ছবি ভাঙচুর ও ছাত্রলীগের কর্মীদের সম্পৃক্ততা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ ইরফানুল হক বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের সময় অনেক ছাত্রলীগ কর্মী আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল। তারা এখন আর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নেই। কারও অতীত পরিচয়ের কারণে তার বর্তমান অবস্থানকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা ঠিক নয়।’

এনসিপি নেতারা দাবি করেন, তাদের অবস্থান স্রেফ প্রতীকী এবং উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ করা।