Image description

জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন, আর এই নির্বাচনের আগেই রাজনীতিতে ‘সেফ এক্সিট’ (নিরাপদ প্রস্থান) নিয়ে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সম্প্রতি নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিছু ‘বিস্ফোরক’ মন্তব্য করেছেন, তিনি বলেন, কিছু উপদেষ্টাই সেফ এক্সিট খুঁজছেন, ‘অনেক উপদেষ্টা নিজেদের আখের গুছিয়েছে অথবা গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে বিট্রে (প্রতারণা) করেছে। যখন সময় আসবে, তখন আমরা এদের নামও উন্মুক্ত করব।’ সাক্ষাৎকারে নাহিদ ইসলাম আরও বলেছেন, ‘উপদেষ্টাদের অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে লিয়াজোঁ করে ফেলেছে। তারা নিজেদের সেফ এক্সিটের কথা ভাবতেছে।

এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা ও সমালোচনা। নাহিদ ইসলামের বক্তব্যর পরেই উপদেষ্টাগণ বেশ নড়েচড়ে বসেছেন, রাজনৈতিক কয়েকজন বিশ্লেষকগণ এ বিষয়ে বেশ কথা বলছেন, এছাড়াও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এ বিষয়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। 

কিন্তু হঠাৎ করেই নির্বাচনের আগে কেন সেফ এক্সিট নিয়ে এত আলোচনা? নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম কি একান্তই ব্যক্তিগত মনগড়া কোনো বক্তব্য দিয়েছেন নাকি এর পিছনে আসলেই বড় কোন রহস্য রয়েছে- আসুন জেনে নেই সেফ এক্সিট বিষয়ে আর অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উপদেষ্টা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ কে কি বলছেন-

নাহিদ ইসলাম এর এমন বক্তব্যের পরেই আরো আলোচনার জন্ম দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, তিনি বলেছেন, ‘কিছু উপদেষ্টার মধ্যে আমরা এই আচরণ দেখতে পাচ্ছি যে তাঁরা এখন কোনোভাবে দায়সারা দায়িত্বটা পালন করে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এক্সিট নিতে পারলেই হলো।’এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘আলাপ–আলোচনার ভিত্তিতে দেশের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, আমরা মনে করি দেশের মানুষের সামনে তাঁরা মুখ দেখাতে পারবেন না। কোথায় সেফ এক্সিট নেবেন, পৃথিবীতে সেফ এক্সিট নামের একটাই জায়গা, সেটা হচ্ছে মৃত্যু। এ ছাড়া কোনো সেফ এক্সিট নেই। আপনি পৃথিবীর যে প্রান্তে যান, সেখানে বাংলাদেশের মানুষ আপনাকে ধরবে।

বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রুমিন ফারহানা সম্প্রতি একটি টক শোতে বলেছেন, ‘উপদেষ্টারা অনেকেই সেফ এক্সিট খুঁজছেন। আমার মনে হয়, সেফ এক্সিট খুঁজতে উপদেষ্টাদের খুব কষ্ট করতে হবে না, কারণ ম্যাক্সিমাম উপদেষ্টা ডুয়েল সিটিজেনশিপ নিয়ে চলছেন। সুতরাং তাদের একটা বড় অংশই দেশের বাইরে অটোমেটিক্যালি চলে যেতে পারবেন।’

এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল সম্প্রতি একটি টক শোতে হাজির হয়ে বলেন, সেফ এক্সিটের তালিকা করলে সবার ওপরে থাকবে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নাম । তার মতে, আসিফ মাহমুদ যেখানে যান সেখানেই বিতর্ক তৈরি করেন। তিনি বলেন, এই ‘সেফ এক্সিট’ নিয়ে আলোচনা কিন্তু নতুন কিছু নয়। এর আগেও আমরা এমনটা দেখেছি। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ড. ফখরুদ্দীন আহমদ দায়িত্ব শেষে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার তখন তাদের ‘সেফ এক্সিট’ দিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়নি কিংবা তারা কোনো দুর্নীতি হতে দিয়েছেন এ নিয়েও কোনো আলোচনা বা সমালোচনা হয়নি। এটাকেই বলা হয়েছিল ‘সেফ এক্সিট’। এখন প্রশ্ন উঠছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারাও কি সেই একই ধরনের ‘সেফ এক্সিট’ চাইছেন?—এই আলোচনা এখন জোরালোভাবে চলছে।

অপরদিকে সেফ এক্সিট প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলামের বক্তব্যকে মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ  ‘রাজনৈতিক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিটের দরকার আছে বলে মনে করি না, একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। উপদেষ্টাদের সেফ এক্সিট বা নিরাপদ প্রস্থানের দরকার নেই। 

সেফ এক্সিট প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেছেন, যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট ও নাগরিকত্ব রয়েছে, তারাই এখন অন্যদের জন্য ‘সেফ এক্সিটের’ তালিকা তৈরি করে। তিনি বলেন, যারা ৫ আগস্ট পালিয়েছিল তাদের সিমপ্যাথাইজাররা কষ্টে মরে যাচ্ছে। বারবার ফ্যাসিস্টদেরই পালাতে হবে। আমাদের জন্ম এদেশে মৃত্যুও এদেশের মাটিতেই হবে ইনশাআল্লাহ। ফ্যাসিস্ট, খুনিদের সাথে লড়তে লড়তে আমার ভাইদের মতো শহীদী মৃত্যু কামনা করি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান- অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে কারা সেফ এক্সিট নিতে চায় এটি নাহিদ ইসলামকে পরিষ্কার করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন । তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন সময়ে নানা ঝড়-ঝঞ্ঝায় কোথাও পালিয়ে যাননি। আগামীতেও দেশে থাকবো।  নাহিদ ইসলামকেই পরিষ্কার করতে হবে, কারা সেফ এক্সিট চায়।