
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলছেন, রাজধানীর ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া জনসংখ্যার হার, যানযট বৃদ্ধি ও সার্বিক পরিবেশ ঢাকার আয়তন, অবকাঠামো ও প্রশাসনিক সক্ষমতা অনুযায়ী স্বাভাবিক নয়। এই মুহুর্তে সরকারের উচিত নগরমুখিতাকে নিরুৎসাহিত করা এবং পরিকল্পিত নগরায়নের বিষয়ে চিন্তা করা। পাশাপাশি গ্রামীন অবকাঠামোর উন্নয়নের দিকে নজর দিতে হবে। অর্থাৎ আমি বলছি প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের কথা, এটা সবচেয়ে বড় সমাধান হতে পারে।
সম্প্রতি শহর হিসেবে ঢাকার সার্বিক অবস্থা, সমস্যা ও সমাধান প্রসঙ্গে আলাপকালে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিত নগরায়ন ও কর্মসংস্থান যদি নগরের বাহিরে নেওয়া যায়, তাহলে ঢাকায় চাপ কমবে। পাশাপাশি আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাও বিকেন্দ্রীকরণ করে কমিউনিটি লেভেলে যদি জনগনের অংশগ্রহণ বাড়ানো যায়, তাহলে সবচেয়ে ভাল হবে। সেবা ও শিল্প খাতকেও যেন ঢাকার বাহিরে স্থানান্তরিত করা যায়, সে ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। এজন্য এক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, শুধু পরিকল্পনা করলেই হবে না। এগুলোর বাস্তবায়ন অবশ্যই করতে হবে। বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সহযোগিতা প্রয়োজন এবং তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লাগবে। পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবেও অগ্রাধিকার দিতে হবে এই প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে যে, আমরা একটি শহরকে বাসযোগ্য করব, নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করব এবং অধিকার নিশ্চিত করব। সেটি যদি করা যায় তাহলে সত্যিকারের উন্নয়ন ঘটবে এবং একটি স্বাস্থ্যকর শহর পাবার পথে অগ্রসর হতে পারব।
এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গুরুত্বারোপ করে মঈনুল ইসলাম বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বা বৈশ্বিক ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের হাতে আর মাত্র ৪ বছর সময় আছে। এ লক্ষ্যগুলোর মধ্যে শহরের শর্ত হিসেবে বলা আছে- শহর হবে হবে নিরাপদ, উন্নত, টেকসই এবং অভিঘাত সহনশীল। এসব লক্ষ্যগুলোর বিপরীতে আমরা দেশ হিসেবে কী কী করতে পেরেছি? আমি মনে করি, এই মুহুর্তে জনঘনত্ত্বকে বিবেচনায় নিয়ে কর্মসুচি সাজানোর অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এ গবেষক আরও বলেন, সার্বিক পেক্ষাপ্রটে আমাদের যত পরিকল্পনা আছে তাতে জনগোষ্ঠী ও সাবগ্রুপ অব পপুলেশনের সুরক্ষাহীনতাকে কেন্দবৃন্দুতে রেখে অগ্রগামী হতে হবে, তাহলে বিষয়টি কল্যাণকর হবে।
প্রসঙ্গত, ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও নেদারল্যান্ডসভিত্তিক প্রকাশনা সংস্থা ‘এলসভিয়ার’ প্রকাশিত ‘বিশ্বের শীর্ষ দুই শতাংশ বিজ্ঞানী-২০২৫’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তিনি গত ২৩ বছরেরও অধিক কাল ধরে জনসংখ্যা ও উন্নয়ন বিষয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণা করছেন।