
বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে চলছে ইলিশ শিকারের মহোৎসব। নিষেধাজ্ঞার তৃতীয় দিন আজ বুুধবার (০৮ অক্টোবর) ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে পরিচিত পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীতে ইলিশ শিকারের মহোৎসব চলছে।
মোবাইলফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে তেঁতুলিয়া নদী পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে রাতের আধারে চলে বেচাকেনা।
ইলিশ শিকারি জেলে ও স্থানীয় কয়েকজন জানায়, দীর্ঘদিন দেখা না মিললেও নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে ইলিশ আসতে শুরু করেছে তেঁতুলিয়া নদীতে ।
এরই মধ্যে প্রশাসনের ঢিলেঢালা অভিযানের সুযোগ নিয়ে ইলিশ শিকারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে এক শ্রেণির অসাধু জেলে।
সরেজমিন দুপুর ২টার দিকে জোয়ারের সময় তেঁতুলিয়া নদীর নিজ তাঁতেকাঠি, নিমদী, চর রায়সহেব, ধানদী বিশ্বাসবাড়ি, বড়ডালিমা, কচুয়া পয়েন্টে একধিক জেলে নৌকায় মাছ শিকারে জেলের ব্যস্ত দেখা যায়। জেলেদের কেউ জাল পেতে বসে আছেন নৌকায়, কেউ জাল টেনে তুলছেন। আবার কেউ বা নৌকা থেকে ইলিশ মাছ বাজারের ব্যাগে ভর্তি করে ছুটছেন নিরাপদ কেনা-বেচার উদ্দেশে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে স্থানীয়রা জানায়, প্রকৃত জেলে না হলেও অবরোধের এ সময়ে জান নৌকা নিয়ে নতুন নতুন মুখের দেখা মিলছে তেঁতুলিয়ায়। এদের মধ্যে, রিক্সা চালক, অটোচালক, চায়ের দোকানী, শ্রমিকও আছেন। ইলিশের ভাল দাম আর এ সময়ে ইলিশ ধরা পড়ছে জেলে এসব নতুন মুখ জুটেছে তেঁতুলিয়ায় মাছ শিকারে।
মাবাইলফোনে খোজঁ-খবর রেখে নদী পাড়ের ধান ক্ষেতের পাশে কিছুটা আড়াল-আবডালে চলে কেনাবেচা। অবরোধের প্রথম রাত থেকেই জেলেরা এসব পয়েন্টে বেপরোয়া।
ইলিশ শিকারের দায়ে প্রশাসনের হাতে ধরাপড়লে সাজা এড়াতে ও মুচলেকার মতো সহজ শর্তে মুক্তি পেতে অনেকে আবার কৌশল হিসেবে শিশু-কিশোরদেরকেও ব্যাবহার করছেন ইলিশ শিকারের কাজে।
অভিযোগ আছে ভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও প্রতিবন্ধি কয়েকজনও এখন ইলিশ শিকারে তেঁতুলিয়ায় যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। অবরোধে এসব অসাধু জেলেদের কারণে বাঁধার মুখে পড়েছে তেঁতুলিয়ায় ইলিশের নির্ভিঘ্নে প্রজনন। ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় অসাধু লোকজন ও এক্সটেনশন ওয়ার্কারসহ প্রশাসনের লোকজনের জড়িত থাকার কথাও জানায় জেলেরা ও নদী পাড়ের স্থানীয় লোকজন।
জেলেরা আরো জানায়, উল্লেখযোগ্য হারে ইলিশ ধরা না পড়লেও তেঁতুলিয়ায় ইলিশ আসা শুরু হয়েছে।
চর রায়সাহেব এলাকার মো. সায়েম নামে একজন কলেজ শিক্ষার্থী জানায়, বেপরোয়া জেলেরা বাদবিচার না করে সুযোগমতো জালও ফেলছে নদীতে।
নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতে ও প্রশাসনের অভিযান পরিচালনার অবসরে সুযোগ বুঝে জেলেরা নদীতে শিকারে নামছে। সাইজে ছোট বড় হলেও মাছের পেটে ডিম দেখা যায়। প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি করা উচিৎ বলে মনে করছেন ওই কলেজ শিক্ষার্থী।
প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা আন্দোলন সেভ দি বার্ড এ্যান্ড বি’র পরিচালক মন্ডলীর শামসুন নাহার জানান, প্রজনন সময়ে নির্ভিঘ্নে ডিম ছাড়তে না পাড়া ও পরবর্তিতে কাঁচকি, চাপিলা, জাটকাসহ বিভিন্ন নামে ছোট ইলিশ শিকারের কারণে দিনদিন কমছে ইলিশ মাছ। নিষেধাজ্ঞার আগে পড়েও ইলিশ মাছ নদীতে ডিম ছাড়ে। এই ইলিশের পোনা কাঁচকি, চাপিলা, জাটকা নামে নদী থেকে জেলেদের বাঁধা, পাইর, কোনা, পকেটজাল, মসুর জাল, কোদাল জাল, বেড়জালে শিকার হলেও তা দেখার কেউ থাকে না। উপরন্তু আবহাওয়া পরিবর্তণের বিরুপ প্রভাবের এই সময়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তা যথাযথ বাস্তবায়ন না করে ঢিলেঢালা অভিযানে এক শ্রেণির অসাদু কর্মচারী, পাইকার, আড়ৎদাড়, প্রভাশালীসহ জেলেদের অন্যায় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানায়, আজ তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে অভিযান চালিয়ে ধুলিয়া এলাকার মো. লিখন (২১), বাকেরগঞ্জের চরাঞ্চলের রফিক মোল্লা (৩০), রাসেল মোল্লা (৩৭), শফিক মোল্লা (২৪), মো. রহমান মোল্লা (৪০) মমিন পুরের জলিল গাজী (৫৫), ইউসুফ বেপারি (২৮), ভোলার চরগাজী এলাকার আ. রব (৫১), শফিকুল ইসলাকে (২০) আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ, গত ৪অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত প্রজনন মৌসুমে চিহ্নিত করে ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মওজুদ, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও দন্ডনীয় অপরাধ। ইলিশের অভয়াশ্রম হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে পটুয়াখালীর বাউফলের তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার জুড়ে।