Image description
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বুধবার জুলাই সনদ স্বাক্ষর, গণভোট কখন সেটা নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে পারে কমিশন

বহুল আলোচিত জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নে গণভোটের সময় এবং এর প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারায় এ নিয়ে কৌশলী সুপারিশ করার চিন্তা করছে ঐকমত্য কমিশন। গণভোট কখন—সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই, নাকি এর আগে; এ বিষয়ে কমিশনও সুনির্দিষ্ট কোনো সুপারিশ না করার কথা ভাবছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। অবশ্য, এ বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি কমিশন।

আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলো থেকে পাওয়া অভিমতগুলো বিশ্লেষণ করে খুব শিগিগরই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায়সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্ত করা জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেবে ঐকমত্য কমিশন। জানা গেছে, কমিশন আজকালের মধ্যেই কিংবা আগামী রবিবার সরকারকে সুপারিশ ও জুলাই সনদ দিতে যাচ্ছে।

এদিকে, আগামী ১৫ অক্টোবর বুধবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষরিত হবে। গতকাল সংসদ ভবনে ঐকমত্য কমিশন কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত কমিশনের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। পরে কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। উল্লেখ্য, সর্বশেষ বর্ধিত সময়সীমা অনুযায়ী আগামী বুধবার ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। মেয়াদ শেষ হওয়ার দিনেই কমিশন জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে।

কমিশনের গতকালের সভায় জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের পাঁচটি বৈঠকে পাওয়া মতামত বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকে কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় অংশ নেন।

গণভোটের মাধ্যমে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আগেই একমত হয়েছিল। তবে, গণভোট কখন—সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই নাকি এর আগে, গণভোটের প্রক্রিয়া কী হবে এবং জুলাই সনদে থাকা ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ (আপত্তি) গণভোট নাকি সেগুলো বাদ দিয়ে; এ বিষয়গুলোতে বুধবার শেষ দিনেও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো।

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শেষ দিনের বৈঠকে উপরিউক্ত তিনটি ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিএনপিসহ দলটির মিত্র দল-জোটগুলো ফেব্রুয়ারিতে সংসদ নির্বাচনের দিনেই একসঙ্গে পৃথক ব্যালটে গণভোট আয়োজনের পক্ষে নিজেদের আগের অবস্থানে অটল থাকে। অন্যদিকে, সংসদ নির্বাচনের আগেই নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত। দলটি এই দাবিতে বুধবার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে শেষ বৈঠকেও নিজেদের অনড় অবস্থান তুলে ধরে। জামায়াতের অবস্থানের সঙ্গে একমত চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ আরো কয়েকটি ইসলামি দলও। তবে, ইসলামী আন্দোলন পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানাবে দলটি।

এর আগে বিশেষজ্ঞ প্যানেল জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট আয়োজনের পক্ষে মত দিয়েছিল। তবে বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞদের যে মতামত তুলে ধরে, সেখানে গণভোটের সময়ের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।

বুধবার বেলা ২টা থেকে রাত সোয়া ১১টা পর্যন্ত দলগুলোর সঙ্গে শেষদিনের বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সনদ স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রস্তুত। আমরা চাই, ১৫ অক্টোবরের মধ্যেই এই ঐতিহাসিক দলিলের আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হোক। শুধু সনদ স্বাক্ষর নয়, একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনও প্রকাশিত হবে। আমরা আশা করছি ১৮-১৯ অক্টোবরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারব। এতে জুলাই সনদ প্রণয়নের পুরো প্রক্রিয়া ও রাজনৈতিক দলগুলোর জমাকৃত দলিল অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

তিনি জানান, ৫ অক্টোবরের বৈঠকে কমিশন সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়-‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়নে গণভোটের ব্যবস্থা করা হবে। শেষদিনের আলোচনার মূল বিষয় ছিল-গণভোট কীভাবে এবং কবে অনুষ্ঠিত হবে, তা নির্ধারণ করা। আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছি। আলী রীয়াজ বলেন, বিশেষজ্ঞরা আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন-একটি আদেশ জারি করে গণভোট আয়োজন করতে হবে। এতে দুটি ভাগ থাকবে; একটি অংশে বৃহত্তম ঐকমত্যের বিষয়গুলো এবং অন্য অংশে নোট অব ডিসেন্ট (লিখিত ভিন্নমত) থাকা বিষয়গুলো থাকবে। পরে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠন করা হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গণভোটের অনুমোদন পেলে জুলাই সনদে বর্ণিত সংবিধান সংশ্লিষ্ট সংশোধনগুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

তিনি আরো বলেন, কমিশন মনে করছে- রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের ঐকমত্য তৈরি হয়েছে যে, ত্রয়োদশ সংসদকে ‘জুলাই জাতীয় সনদ, ২০২৫’ বাস্তবায়নের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংবিধানের মৌলিক কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষমতা দিতে হবে। দল ও জোটগুলো চাইছে, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের সমন্বয়ে কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারকে পরামর্শ দিক।