
রাজশাহীতে একটি পিস্তল হাতে ক্যামেরার সামনে ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ফলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। ছবি-ভিডিওতে দেখা যায়—কালো পাঞ্জাবি পরে মুখ ঢেকে মাস্ক, হাতে পিস্তল ধরে সেটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করছেন ওই ব্যক্তি। স্থানীয়দের অভিযোগ ও তথ্য অনুযায়ী তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক মানবসম্পদ উন্নয়ন উপসম্পাদক ইয়াসির আরাফাতআপন (আপন) নামে পরিচিত একজন দুর্ধর্ষ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ক্যাডার।
স্থানীয়দের ব্যাখ্যা অনুযায়ী ইয়াসির আরাফাত আপনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই যেন আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি ২০২২ সালের ১১ মার্চ অনুমোদিত রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগ কমিটির একজন সিনিয়র নেতা ছিলেন এবং প্রতিপত্তিশালী নেতা রকি কুমার ঘোষের অন্যতম আস্থাভাজন অস্ত্রধারী সদস্য হিসেবে পরিচিত। এরপরও মহানগরীর পরবর্তী কমিটির সভাপতি নূর মো. সিয়াম ও সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন সবুজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে জানায় অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আপনের নামটি রাজশাহীতে ইয়াবা ব্যবসায় ডিলার হিসেবেও পরিচিত। তিনি প্রাইভেট কার ও বহু দামী ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলে চলাফেরা করেন এবং নিজস্ব একটি ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যার পর এসব বাহিনীর অবাধ বিচরণ ও শহরে দামি মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়ার ঘটনাও বারংবার নজরে এসেছে।
দু'একটি সূত্রে বলা হচ্ছে ভাইরাল অংশটি গত বছরের জুলাইয়ের অভ্যুত্থান ও সেটির পরবর্তী গ্রম্য সহিংসতার সময়গ্রহণ করা হতে পারে। স্থানীয়দের মেমোরি অনুযায়ী মহানগরীর আলুপট্রি মোড়ে গত বছরের ৫ আগস্ট সকালে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের সময়ও ওই বাহিনীর কয়েকজন আগ্নেয়াস্ত্রসহ উপস্থিত ছিল; ঐ হামলায় আন্দোলনের পক্ষের দুইজন নিহত ও শতাধিক আহত হন—যাদের মধ্যে অনেকে আজও শারীরিক প্রতিবন্ধীতার শিকার। স্থানীয়রা বলছেন, এই হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোর মধ্যে একটি সাম্প্রতিক ভাইরাল ছবির পিস্তলের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।
আপনের বাড়ি মহানগরীর পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের রাজপাড়া এলাকায়। ওই এলাকার একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দা বলেন, ‘আপনের ক্ষমতা ও তার বাহিনীর ভয়ে আমরা প্রতিদিনই অনিশ্চয়ে আছি। অজানা কারণে আপনের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি, কিন্তু ছবির প্রকাশের পর তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, “আপন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত তৎপর না হলে নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়বে।’
তদন্তে জানা গেছে, ২০২২ সালের জুলাইয়ে রাজশাহী বিভাগীয় খাদ্য পরিবহন (সড়কপথ) ঠিকাদার কর্মচারী ইউনিয়নের ভোটে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারণ সম্পাদক পদটি দখল করেন আপন। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, ভোটজয়ে তার বাবার ভূমিকা ছিল; শাহ আলম নামের ব্যবসায়ী ও নেতা আপনকে ঐ নির্বাচনে সহায়তা করেন এবং নির্বাচনের পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ওই সূত্র আরও জানায়, আপনি প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পর্যায়েও কিছু যোগসাজশ করে ক্ষমতার প্রতিপত্তি শক্ত করেছেন।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ কমিশনার গাজিউর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘এ ধরনের বিষয় আমাদের নজরে ছিল না। আমরা খোঁজ-খবর নেব। অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।