
কিশোরগঞ্জকে বলা হতো আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে মাঠের রাজনীতি পুরো পাল্টে গেছে। বিএনপি-জামায়াতের নতুন করে সাজানো-গোছানো দলীয় কার্যালয় এখন নেতাকর্মীদের আনাগোনায় মুখরিত। নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, রাষ্ট্র সংস্কার, জাতীয় দলসহ অন্য ইসলামী দলগুলো পুনরায় মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল এলাকায় এলাকায় উঠান বৈঠক, পথসভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের পক্ষে জনমত যাচাইয়ে মাঠ-ঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। ভোটাধিকার থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত এ আসনের মানুষ এখন অপেক্ষায় রয়েছেন নিজেদের মত প্রকাশের। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের তৎপরতা ব্যাপক। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে।
বাজিতপুর-নিকলী এই দুই উপজেলা নিয়ে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনটি ২০০৮ সাল পর্যন্ত ছিল বিএনপির বড় দুর্গ। ২০০৮ সালে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। দীর্ঘ ১৭ বছর হামলা-মামলা, অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছিলেন এলাকা ছাড়া। আওয়ামী দখল-রাজত্বে বিএনপির কোনো অস্তিত্বই ছিল না। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলে, পুনরুত্থান ঘটে বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য দলের।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বাজিতপুর বিএনপির আহ্বায়ক, জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। তিনি ২০১৮ সালে দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন অনিয়মসহ ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বয়কট করেছিলেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে আমার দেশকে তিনি বলেন, আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থী নই, আমি মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী।
দল থেকে ২০১৮ সালে দেওয়া মনোনয়ন দল প্রত্যাহার না করায় তা এখনো অব্যাহত আছে। বাজিতপুর পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র এহসান কুফিয়া। তিনি বলেন, আমি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। আমি দীর্ঘ ১৭ বছর বিভিন্ন হামলা-মামলা অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েও জাতীয়তাবাদী আদর্শ ও দলের প্রতি বিশ্বস্ত একজন জিয়া সৈনিক। দুঃসময়ে এলাকার নির্যাতিত বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশে থেকে প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে গেছি, যা কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত আছেন। তাই আমার বিশ্বাস দল আমাকে নিরাশ করবে না।
তবে আসনটিতে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সহযোগিতা করার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমদের স্বাক্ষরিত চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তাকেও সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতারা। তিনি বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করে দুই উপজেলাতেই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশায় এ আসনে গণসংযোগ চালিয়ে নিজের স্বপক্ষে জনমত গড়ে তুলছেন। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ সদস্য পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে জানা যায়।
এ ছাড়া মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সাবেক দুবারের সংসদ সদস্য প্রয়াত মজিবুর রহমান মঞ্জুর পুত্র মজিবুর রহমান স্মৃতি সংসদের সভাপতি, মোস্তাফিজুর রহমান মামুন, বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, প্রবীণ নেতা মীর মো. জলিল, মাঠে রয়েছেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও জেলা বিএনপির সদস্য মো. বদরুল আলম শিপু, ছাত্রদলের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক শফিকুল আলম রাজন। আঞ্চলিকতার প্রভাবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
৭৯, ৯১ ও ৯৬-এর নির্বাচনের তিনবারের সংসদ সদস্য প্রয়াত আমির উদ্দীন আহমেদের পুত্র ও নিকলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুল মোমেন মিঠু মনোনয়নপ্রত্যাশী সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ করছেন বলে জানান। তবে নিকলীতে এই দুই প্রার্থীর গণসংযোগ থাকলেও এখন পর্যন্ত বাজিতপুরে কোনো কর্মসূচি ও প্রার্থিতার পক্ষে গণসংযোগ চোখে পড়েনি। সাবেক সচিব বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর বাড়ি আব্দুল ওয়াহাব তিনিও বিএনপির হয়ে মনোনয়ন চাইবেন।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামী দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলীর নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। তিনি দুই উপজেলাতেই জোরেশোরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।