Image description

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এইউএসটি) শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন লিসানুল আলম লিসান। শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন পোস্ট দিয়ে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

ফেসবুকে পোস্টে তিনি জানান, ‘ব্যক্তিগত কারণে’ তিনি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ধরে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি লেখেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের উর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম।’

লিসানুল আলম লিসান ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম। সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে,আমি ব্যাক্তিগত কারণে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল,আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের ‘সাধারণ সম্পাদক’ পদ থেকে সরে দাড়াচ্ছি। জন্মলগ্ন থেকে পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে দীর্ঘ ১০ বছরের উর্ধ্বে এই দলের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলাম।বিএনপির একদম দুঃসময়েও দলের সাথে ঘনিষ্ঠ ভাবে জড়িত ছিলাম।২০১৮ সালের নির্বাচনে বাবা জেলে থাকাকালীন(মামলা সংখ্যা ২৮), দীর্ঘ দুই মাসের উর্ধ্বে বাড়ি ছাড়া হয়েছি।ভোর রাতে লুকোচুরি করে আম্মার সাথে একবার দেখা করে আসতাম।২৮ অক্টোবর সমাবেশ পরবর্তীও হরতাল অবরোধসহ বহু কার্যক্রমে যুক্ত ছিলাম।এই দলের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি ও বহু নির্মমতার ভাগিদার আমি হয়েছি।সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনেও সরাসরি সামনের সারিতেই আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। এই সব কিছুর মূলে আমার একটাই স্বপ্ন ছিলো,'নতুন বাংলাদেশের বিনির্মান এবং একটা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশেষ করে ৫ আগষ্ট পরবর্তীতে,অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষায় ছিলাম,দেশ নতুন করে বিনির্মান হবে। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, ৫ ই আগষ্ট পরবর্তীতে দেশটাকে সুন্দর ভাবে বিনির্মানের পরিবর্তে, সবাই যে যার মতো করে নিজের স্বার্থ এবং ভোগের রাজনীতি করে গেছে। এই দ্বায়ে জামায়াত, বিএনপি, এনসিপি সবাই দন্ডিত।সবাই নয়া বন্দবস্তের কথা বললেও কেউ কথা রাখেনি।জুলাইকে কেউ স্বরণ করেনি।জুলাইকে কেউ মনে রাখেনি। শহীদদের রক্তের সাথে সবাই নির্বিচারে গাদ্দারী করেছে। 

একটা কথা বলি। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরবর্তী সময়ে আমার নিজ উপজেলা হাতিয়ায় যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়েছে, এনসিপি এবং বিএনপি কতৃক আওয়ামী লীগের যে পরিমাণ পূনর্বাসন হয়েছে, তা আমি বিগত কোন সময় দেখি নাই। বহু নেতা কে দেখেছি, যাদের সুনির্দিষ্ট উপার্জনের সোর্স না থাকলেও এখন শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন, রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। বিএনপির পাশাপাশি এনসিপির হান্নান মাসুদও চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগের পূনর্বাসন করে রাতারাতি শতকোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। অথচ উনার মতো তরুণ নেতা চাইলে পুরো রাজনীতির পেক্ষাপটই বদলে দিতে পারতেন। জামায়াতও এই অন্যায় গাদ্দারীর বাহিরে নয়। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ক্ষমতা বলে পদায়ন সহ, ৫ আগস্টের পরবর্তীতে যথেষ্ট নোংরা রাজনীতির চর্চা তারা করে গেছেন। (দয়া করে কোনো নব্য রাজনীতিবিদ আমাকে লজিক/ জ্ঞান দিতে আসবেন না। সব দলেরই রাজনীতির একদম ভিতরের পিঠ আমি খুব ভালো করেই দেখে আসছি)।’

ছাত্রদলের এই নেতা বলেন, ‘রাজনৈতিক সব দলেই প্রকৃত সৎ এবং নিষ্ঠাবান কিছু ভালো কিছু মানুষেরও দেখা পেয়েছি। আপনাদের জন্য সমবেদনা। আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে এদেশে সুষ্ঠু ও গঠনতান্ত্রিক রাজনীতির স্বপ্ন দেখেছি, প্রকৃতি দেশ বিনির্মানের স্বপ্ন দেখে এসেছি, এটা আমাদের দূর্ভাগ্য। আমরা ব্যার্থ। আমার জানামতে সজ্ঞানে রাজনীতির অপব্যবহার করে কখনো কারো কোনো ধরণের ক্ষতি আমি করিনি।যদি ভুল বসত আমি করেও থাকি,আপনাদের নিকট আমি ক্ষমাপ্রার্থী।আমাকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।’

তরুণ এ নেতা আরও বলেন, ‘যেদিন প্রকৃতি স্বচ্ছ বাংলাদেশ বিনির্মানের ডাক আসবে, সেদিন আপনাদের কাধে কাধ মিলিয়ে আমিও থাকবো মিছিলের অগ্রভাগে, প্রথম বুলেটের শিকারী হতে।তবুও এদেশের বুকে শান্তি ফিরে আসুক।এদেশের মাটির উর্ধ্বে আমার কাছে কিছুই মূল্যবান না। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।’