Image description
 

গলাচিপা ও দশমিনা উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের পটুয়াখালী-৩ আসন। ১৯৭৯ সালের পর সব দলের অংশ নেয়া কোনো নির্বাচনে এখানে বিএনপি জিততে পারেনি। আগামী নির্বাচনে বিএনপির সামনে এই আসন পুনরুদ্ধারের হাতছানি।

কিন্তু কে পুনরুদ্ধার করবেন এই আসন?

বিএনপির নেতা হাসান মামুন?

 
 

কয়েক বছর আগে দলে যোগ দেয়া টেলিভিশন টকশোর জনপ্রিয় মুখ গোলাম মাওলা রনি?

নাকি আসনটি ডাকসুর সাবেক ভিপি গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে ছেড়ে দেবে বিএনপি?

এই তিন মুখ সামনে রেখে পটুয়াখালীর রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন জোরেশোরে চলছে সেই আলোচনা।

দশমিনা-গলাচিপায় নুরুল হক নুরকে তার রাজনৈতিক সাংগঠনিক কাজে সহযোগিতা করতে নিজ দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিল বিএনপি। এতে সবাই ধারণা করেছিল বিএনপি বুঝি আসনটি নুরকে ছেড়ে দিয়েছে।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হাসান মামুন। একসময় তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি। পটুয়াখালীতে ফিরে গিয়ে শক্ত করেছেন দলের ভিত। ভোটের মাঠে অন্য কাউকে ছাড় দিতে নারাজ তিনি।

এরই মধ্যে মারামারিতে জড়িয়েছেন হাসান মামুন ও নুরুল হক নুরের কর্মীরা। নিজের বাসায় অবরুদ্ধ হয়েছেন নুরুল হক নুর। ভোটের মাঠে তার কেমন অবস্থা?

ওদিকে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের এমপি হয়ে পরে বিএনপিতে যোগ দেয়া গোলাম মাওলা রনিও এই আসনে প্রার্থিতার বড় দাবিদার। বিএনপিতে যোগ দেওয়ার পর আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার- তা যেমন টিভি টকশোতে, তেমনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

১৯৯১, ১৯৯৬-এর ১২ জুন আর ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। একসময়ের তুখোড় এই ছাত্রনেতা ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। পরে আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মন্ত্রিসভায় বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে জায়গা করে নেন। নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তার পাশাপাশি নানা রকম সমালোচনাও ছিল তার বিরুদ্ধে।

২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলে আওয়ামী লীগের সংস্কারপন্থীদের গ্রুপে যোগ দেন আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন। শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের চেষ্টা করেছিল এই গ্রুপ। অবশ্য সেই প্রচেষ্টার নেপথ্যে ছিল তখনকার সেনা গোয়েন্দারা। শেষ পর্যন্ত মাঠে মারা যায় সেই চেষ্টা। কিন্তু আ খ ম জাহাঙ্গীরের ভূমিকার কথা ভোলেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাকে আর মনোনয়ন দেয়নি দল।

আ খ ম জাহাঙ্গীরবিহীন নির্বাচনে অনেকটা অপরিচিত গোলাম মাওলা রনিকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। ভোটে জয়লাভও করেন তিনি। কিন্তু গোলাম মাওলা রনি নিজেকে আওয়ামী লীগে ধরে রাখতে পারেননি। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার নিয়ে তিনি সমালোচনা করেন। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো কাজেরও সমালোচনা করতে থাকেন। এ কারণে আওয়ামী লীগ থেকে তাকে অব্যহতি দেয়া হয়।

২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন নেন রনি। তবে সেবার জিততে পারেননি। এরপর থেকেই না ঘরকা, না ঘাটকা হয়ে আছেন তিনি। ইদানীং টেলিভিশন টকশোতে অনেকটা আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বলছেন গোলাম মাওলা রনি।

এদিকে ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন নুরুল হক নুর। এরই জোয়ারে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন তিনি। পরে গঠন করেন রাজনৈতিক দল গণঅধিকার পরিষদ। এই দলের তিনি সভাপতি।

আওয়ামী সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে থাকলেও বিএনপির জোটে যোগ দেয়নি নুরের দল। তবু বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে সব সময় সহানুভুতি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর পটুয়াখালী-৩ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। সেখানে নির্বিঘ্নে সাংগঠনিক কাজ চালাতে তাকে সহযোগিতার জন্য বিএনপির স্থানীয় নেতাদের কাছে চিঠি দেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে প্রচার আসনটি নুরকে ছেড়ে দিচ্ছে বিএনপি।

তবে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের কথা ভিন্ন রকম। তার মতে, নুরকে নির্বাচনী মাঠে সহযোগিতার জন্য চিঠি দেয়া হয়নি। অতীতে নুর সেখানে সভা করতে গেলে নানা রকম বাধা পেতেন। এখন যেন তাকে কেউ বাধা না দেয় সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি চিঠি দিয়েছে।

২০১৮ সালে বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া হাসান মামুনের দাবি, এই চিঠির সাথে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

আর বিএনপির কর্মীদের হাতে অবরুদ্ধ হওয়ার পর নুরুল হক নুর বলেছেন, বিএনপির আশীর্বাদের চিঠি এখন তার জন্য অভিশাপে পরিণত হয়েছে। অবশ্য তার দল আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে বিভিন্ন সভায় বলছেন নুর।

শেষ পর্যন্ত পটুয়াখালী-৩ আসনের নির্বাচনে এই তিন সম্ভাব্য প্রার্থী’ নিয়ে কী হবে?

হাসান মামুন বিএনপির মনোনয়ন পেলে নুরুল হক নুর নিজ দল থেকে নির্বাচন করতে পারেন।

তখন গোলাম মাওলা রনি কী করবেন? আওয়ামী লীগ সমর্থকদের আশীর্বাদ নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন?

এসবই এখন পটুয়াখালীর রাজনীতিতে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু।

(ঢাকাটাইমস