
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি করার চেষ্টা করেও কানাডা তার বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যবস্তু হয়েই আছে। ট্রাম্পের নীতির আকস্মিকতা দেশটিকে বারবার ধাক্কা খাওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে। উত্তর আমেরিকার দুই প্রতিবেশী আগামী ২১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্যচুক্তি স্বাক্ষরের জন্য দ্রুত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এই প্রক্রিয়া কানাডার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার রাতেই ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, কানাডা থেকে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর ১ আগস্ট থেকে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা ও কানাডার একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তি (ইউএসএমসিএ) অনুসারে, নির্ধারিত কিছু পণ্যে এই নতুন শুল্ক প্রযোজ্য হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মন্ট্রিয়ালের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড্যানিয়েল বেলান বলেন, এই হঠাৎ হুমকি দেখায় যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে চুক্তি করা কতটা কঠিন।
ছয় মাসের টানাপড়েন
কানাডা বহু দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ও মিত্র।
এমনকি তিনি মজার ছলে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর কথাও বলেছেন, যা অধিকাংশ কানাডীয়র কাছে অত্যন্ত আপত্তিকর। ট্রাম্প জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই প্রথম আক্রমণ কানাডার দিকে আসে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে তার সম্পর্ক তীব্রভাবে অবনতি ঘটে।
এরপর এপ্রিলে ট্রুডোর স্থলাভিষিক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী হন মার্ক কার্নি। তিনি কানাডার অর্থনীতি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অঙ্গীকার করেন এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর মে মাসে হোয়াইট হাউসে ও জুনে কানাডায় জি৭ শীর্ষ সম্মেলনে ট্রাম্প ও কার্নির মধ্যে দুটি সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠক হয়। এতে অনেকে আশাবাদী হয়ে ওঠেন যে দুই দেশের মধ্যে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা হতে পারে।
সে সময় ২১ জুলাইয়ের মধ্যে একটি নতুন চুক্তিতে পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
দুই দিন পর কানাডা সেই কর বাতিল করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলেও এখন ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি তাদের আবার দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
শান্ত থাকার কৌশল
এদিকে ট্রাম্পের প্রতিটি বক্তব্যে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া না দেখানোর কৌশল নিয়েছে কানাডা। সর্বশেষ হুমকির পর প্রধানমন্ত্রী কার্নি শুধু বলেন, ‘কানাডীয় সরকার আমাদের শ্রমজীবী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ দৃঢ়ভাবে রক্ষা করছে।’
তবে কানাডার জনমনে এই শুল্ককেন্দ্রিক উত্তেজনা মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। কেউ কেউ আরো কঠোর জবাবের পক্ষে, আবার কেউ কূটনৈতিক আলোচনার ধারাকে চালিয়ে যেতে চায়।
এইচইসি মন্ট্রিয়ালের ব্যবসা প্রশাসনের অধ্যাপক ফিলিপ বোরবো বলেন, ট্রাম্পের এই কৌশলটা মূলত আলোচনার হাতিয়ার। যদিও প্রকাশ্যভাবে আক্রমণাত্মক, তবে এর পেছনে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য আছে।
তিনি য়ারো বলেন, ‘এই আলোচনা কখনোই দুই সমান শক্তিশালী পক্ষের মধ্যে হচ্ছে না। চুক্তিতে পৌঁছতে হলে কানাডাকেই বেশি ছাড় দিতে হবে।’
ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে কানাডার প্রায় ৭৫ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রে যেত। কিন্তু মে মাসে সেই হার কমে দাঁড়ায় ৬৮ শতাংশে, যা ইতিহাসে অন্যতম সর্বনিম্ন। কারণ কানাডা এখন অন্যান্য দেশের বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জেনেভিভ টেলিয়ার বলেন, ‘আমরা এখন ট্রাম্পের রাজনৈতিক শোডাউনের বলির পাঁঠা। তিনি আমাদের দুর্বল দেখেন, তাই এখানেই তিনি তার বড় জয় আদায় করতে চান।’