
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বিমানবন্দরের স্ক্যানারে তার হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন পাওয়ার ঘটনাকে ‘ভুলবশত’ বলে দাবি করলেও সেটা কীভাবে ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম চেকিং পার হয়ে গেলো- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
একই সঙ্গে তিনি কবে, কীভাবে এই অস্ত্রের লাইসেন্স পেলেন এবং লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা অস্ত্র ব্যবহার ও গুলির ব্যবস্থাপনা তিনি কতটা জানেন- এসব প্রশ্নও নিয়েও তোলপাড় চলছে সামাজিক মাধ্যমে।
ফেসবুকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে যুব উপদেষ্টা অবশ্য বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে তার লাইসেন্স করা অস্ত্র আছে। এর উদ্দেশ্য সরকারি সিকিউরিটি যখন থাকে না, তখন নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
তিনি বলেছেন, ‘..প্যাকিং করার সময় অস্ত্রসহ একটা ম্যাগাজিন বাসায় রেখে আসলেও ভুলবশত আরেকটি ম্যাগাজিন ব্যাগেই রয়ে যায়। যেটা স্ক্যানে আসার পর আমার প্রোটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে আসি। বিষয়টি সম্পূর্ণ আনইন্টেনশনাল’।
কিন্তু কোনো কারণে গুলি ভর্তি এই ম্যাগাজিন যদি ‘ফাইনাল চেকিংয়েও’ ধরা না পড়তো, তাহলে এ নিয়ে বড় সংকট তৈরি হতো বলে মনে করছেন এভিয়েশন খাতের বিশেষজ্ঞরা।
প্রসঙ্গত, এর আগে বিভিন্ন সময় এভাবে ঘোষণা না দিয়ে অস্ত্র বা গুলিসহ বিমানবন্দরে যাওয়ার পর লাইসেন্স করা অস্ত্রসহ গ্রেফতারের উদাহরণও আছে হজরত শাহজালালে।
কিন্তু আসিফ মাহমুদের বিষয়ে সে ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং তার হাত ব্যাগে পাওয়া গুলির ম্যাগাজিন তিনি নিজেই তার প্রটোকল অফিসারের কাছে হস্তান্তর করে নির্ধারিত ফ্লাইটে চড়ে ঢাকা ছাড়েন।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগ্নেয়াস্ত্র বা গোলাবারুদ টার্মিনালে প্রবেশের আগেই এ বিষয়ে প্রবেশ গেটে ঘোষণা করতে হবে। এসব বিষয়ে চেক-ইন কাউন্টারে এয়ারলাইন্সকেও ঘোষণা করতে হবে, সঙ্গে দেখাতে হবে বৈধ লাইসেন্স।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা অবশ্য বিবিসি বাংলার কাছে দাবি করেছেন, একাধিক স্ক্যানিং পার হয়ে এয়ারক্রাফটে উঠতে হয় বলে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন নিয়ে এয়ারক্রাফটে ওঠার সুযোগ কোনো যাত্রীরই হতো না।
প্রসঙ্গত, নিরাপত্তা ইস্যুতে দুর্বলতার কারণে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা দ্য ফেডারেল এভিয়েশন এডমিনিস্ট্রেশন বা এফএএ-এর ক্যাটাগরি-২ থেকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীত হতে পারছে না।যার ফলে এই বিমানবন্দর থেকে বিমান সরাসরি নিউইয়র্কসহ অনেক বিমানবন্দরে যেতে পারে না।
গুলির ম্যাগাজিন যেভাবে ধরা পড়ল
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ রোববার ‘ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রামে’ অংশ নিতে মরক্কোর মারাকেশে যাচ্ছিলেন। বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ের আগে তার ব্যাগ স্ক্যানার মেশিনে স্ক্যানিংয়ের সময় গুলিসহ ম্যাগাজিন থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে।
এরপরই সামাজিক মাধ্যমে ও দেশের বিভিন্ন টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনে বিমানবন্দরে আসিফ মাহমুদ ও তার সফরসঙ্গীদের তল্লাশি ও মেটাল ডিটেক্টর পার হওয়ার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।
এতে দেখা যায়, আসিফ মাহমুদসহ কয়েকজন মেটাল ডিটেক্টর পার হয়ে গেছেন। এরপর স্ক্যানার মেশিনে তার হাতব্যাগে গুলি ভর্তি ম্যাগাজিন শনাক্ত হলে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা তা নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এক পর্যায়ে আসিফ মাহমুদ আবার ফিরে এসে ওই ম্যাগাজিন আরেকজনের কাছে দিয়ে দেন এবং এরপর তিনি ভেতরের দিকে চলে যান।
ভিডিওটিকে নিয়ে যেসব সংবাদ এসেছে, সেগুলোতে এটি বিমানে ওঠার আগের চেক পয়েন্ট বলে দাবি করা হচ্ছে। এর আগেও তার আরও একটি চেক পয়েন্ট ও স্ক্যানার চেকিং পার হয়ে আসার কথা।
এই দাবি সত্য হলে, এই শেষ স্ক্যানারেও যদি বিষয়টি ধরা না পড়ত, তিনি হাতব্যাগে গুলির ম্যাগাজিন নিয়েই এয়ারক্রাফটে উঠে পড়তেন বলে মনে করা হচ্ছে।
ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে আসার পরপরই প্রশ্ন ওঠে যে, ভিআইপি টার্মিনালের প্রথম চেকিং পার হয়ে এই গুলি ভর্তি ম্যাগাজিনসহ তিনি ভেতরে গেলেন কীভাবে।
এ বিষয়ে জানতে বিমানবন্দর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে