
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহুবার তিনি বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি ছিলেন।
জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান রাজনীতি, নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মিরাজ।
জাগো নিউজ: ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য হওয়ার সম্ভাবনার কথা বলছেন। জোট হলে তা কি শুধু ভোটের জন্য হবে, নাকি একই সঙ্গে রাজনীতি করার বিষয়ও আছে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে একটা সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনের আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই আলোচনার কয়েকটা স্তর আছে। এটি জোট হবে নাকি আসন সমাঝোতা হবে, জোট হলে কারা সেই জোটের নেতা হবে, সমাঝোতা হলে কাদের সঙ্গে হবে- এ বিষয়গুলো নির্বাচন যত কাছে আসবে তত বেশি এগিয়ে আসবে। এর জন্য একটু সময় লাগবে।
জামায়াত ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছে। সবার মধ্যেই আন্তরিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিজেরা নিজেরা আলোচনা করছেন। এজন্য দেশের মানুষ আশাবাদী ইসলামিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐক্য হয়তো সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারী প্রার্থীর বিষয়ে আগের অবস্থানেই আছে। ৩০০ আসনে নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে নারীরা ভোট করবেন না। তবে সংরক্ষিত যেসব আসন আছে সেখানে আমরা নারীদের রাখবো
এছাড়া অন্য রাজনৈতিক দল যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতি করেছিল, তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক আলোচনা চলছে। জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা লালন করে কখন এরকম একটি জোট দেখা দেবে তা আসলে সময়ই বলে দেবে। তবে এর সম্ভাবনা আছে।
জাগো নিউজ: জামায়াত নির্বাচনে অমুসলিম ও নারীদের প্রার্থী করবে কি না?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: এ নিয়ে আমাদের পার্লামেন্টারি বোর্ডে আলাপ হয়েছে। যারা জামায়াতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও দেশ গড়ার কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম থাকবে তাদের প্রার্থী করার বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রয়োজন হলে এবং উপযুক্ত প্রার্থী পেলে তাদের (অমুসলিম) থেকেও প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। তবে এখনো কাউকে সিলেক্ট করা হয়নি।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নারী প্রার্থীর বিষয়ে আগের অবস্থানেই আছে। ৩০০ আসনে নির্বাচনী প্রার্থী হিসেবে নারীরা ভোট করবেন না। তবে সংরক্ষিত যেসব আসন আছে সেখানে আমরা নারীদের রাখবো।
জাগো নিউজ: জামায়াত ক্ষমতায় গেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন হবে?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: ভারত আমাদের বৃহত্তর প্রতিবেশী। নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাব বজায় থাকে। রাষ্ট্র বা জনগণ আমাদের বিরোধী নয়। কিন্তু যারা ক্ষমতায় বসেছে তারা আমাদের সঙ্গে প্রতিবেশীসুলভ, বন্ধুত্বসুলভ এ কথাগুলো শুধু মুখে বলে, কিন্তু সম্পর্কের ক্ষেত্রে সমতা, ন্যায্যতা দেখা যায় না। শুধু তাদের সুবিধাই দেখবে। তারা পানি নেবে, বর্ডারে মানুষ মারবে, কানেক্টিভিটি সুবিধা নেবে, ব্যবসার ভারসাম্য নিজেদের অনুকূলে রাখবে। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ তারা কিন্তু আমাদের দেশে ট্রানজিট পাচ্ছে।
আমরা সুসম্পর্ক চাই। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব। কিন্তু একতরফা তো প্রেম হয় না। আমরা সম্পর্ক চাই ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। তবে তারা বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।
জাগো নিউজ: বিএনপি নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে চাচ্ছে, আপনারাও তিনটি শর্ত দিয়েছেন। এসব শর্ত পূরণ না হলে নির্বাচন দিতে চাইলে আপনারা কি তা মেনে নেবেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খুব একটা বিরোধ হবে না। কিছু বাস্তবতা হয়তো হাজির হবে। প্রধান উপদেষ্টা তো আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন অথবা ডিসেম্বরে। শর্তগুলো পূরণ করে সংস্কার, বিচার করে এ সময়ের মধ্যে সম্ভব। জামায়াতের আমির যেটি বলেছেন মে-জুনে বর্ষাকাল আসে। সেসময় নির্বাচন করা অনিবার্য না হলে সাধারণত এমনটা হয় না। আমাদের দিন-তারিখ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া টাইমলাইনের দিকে দেখছে। এটা যাতে ঠিক থাকে সেটা আমরা বলেছিলাম। সরকার অহেতুক কোনো সময় বিলম্ব না করলে এসময়ের মধ্যেই সম্ভব নির্বাচন করা।
জাগো নিউজ: বিভিন্ন জায়গায় বিএনপিকর্মীদের বিরুদ্ধে আপনাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ আছে। আপনারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: আমরা মনে করি এ বিষয়গুলো দুঃখজনক। এগুলো নির্ভর করে প্রত্যেকটি দলের নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ, কতটা ডিসিপ্লিন হবে, কতটা অনুগত হবে, কত ধৈর্যশীল হবে তার ওপর।
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে আমরা মনে করি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খুব একটা বিরোধ হবে না। কিছু বাস্তবতা হয়তো হাজির হবে। প্রধান উপদেষ্টা তো আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেবেন অথবা ডিসেম্বরে।
আমরা মনে করি যারা নির্বাচনে অংশ নেবো, সবার পরম সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, উদারতা থাকলে এ সমস্যা সমাধান হবে। তবে মানুষের সমাজ শতভাগ ত্রুটি মুক্ত হয় না। দেখা যায় কেন্দ্র জানে না কোনো এক জায়গায় উচ্ছৃঙ্খল কোনো কর্মী সমস্যা সৃষ্টি করলো। দল হয়তো তাকে বহিষ্কার করলো, বাতিল করলো। কমনলি কেন্দ্র থেকে যদি এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে তা কমে আসবে।
জাগো নিউজ: নিবন্ধন পাওয়া ও এটিএম আজহারের মুক্তির বিষয়ে আপনারা জোরালো কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন কি না... এ বিষয়ে আপনারা কখন সফলতা পাবেন বলে মনে করেন।
মিয়া গোলাম পরওয়ার: জামায়াত নেতা এটি এম আজহার মুক্তি না পাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়ার কারণ আছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী দুঃশাসনের সময় আটকে পড়া অনেক বড় মামলার আসামি বের হয়ে গেছেন। সবাই বের হলো, উনি কেন বের হলেন না।
সরকার যদি তার প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হতেন তাহলে তার আইনি বিষয়গুলো আরও সহজ হতো। আমরা আশা করি খুব দ্রুত মুক্তি পাবেন। মিথ্যা অভিযোগে তাকে ১৪ বছর ফাঁসির সেলে রেখেছে। আমাদের নিবন্ধনও বাতিল করা হয়েছিল। তার শুনানি শুরু হবে কোর্ট খুললে। আমরা আশা করছি খুব দ্রুত আমাদের নিবন্ধন, প্রতীক ফিরে পাবো। এটিএম আজহার মুক্তি পাবেন।
জাগো নিউজ: ছাত্রদের দল এনসিপি ও নতুন প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশ গঠন হচ্ছে। এতে বিপ্লবে অংশ নেওয়া বা নেতৃত্ব দেওয়া শিবিরের সাবেক ও বর্তমানরা অংশ নিচ্ছেন। এসব প্ল্যাটফর্মের কারণে ভোটের ক্ষেত্রে আপনাদের টান পড়বে কি না?
মিয়া গোলাম পরওয়ার: ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এখনো ভোট জমা হচ্ছে, ক্লোজ হয়নি। সবার অ্যাকাউন্টই এখন খুলেছে। কোন অ্যাকাউন্টে কত ভোট জমা হচ্ছে তা সময়ে দেখা যাবে। কারও ভোটের সংখ্যা বাড়বে, কারও কমে যাবে।
সবার তো নতুন দল গঠন করার সুযোগ আছে। ছাত্রদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছিল। তারা নতুন করে দল করেছে। তাদের আলাদা লক্ষ্য আছে। তাদের লাভ-ক্ষতির চিন্তা আছে। আমাদের সম্পর্ক সবার সঙ্গে।