
ড. ইউনূসের ঘোষিত পরিকল্পনা হচ্ছে, অতি প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তাঁর সরকারের গত সাড়ে নয় মাসের কর্মকান্ড থেকে এই পরিকল্পনা বিশ্বাস করা কঠিন। কারণ:
১. যেভাবে এবং যে গতিতে সংস্কার কার্যক্রম এগোচ্ছে, তাতে শাসনতান্ত্রিক এবং নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। প্রধান রাজনৈতিক দলটি এ সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবের অধিকাংশের সাথে একমত নয়। তাহলে কীভাবে সরকার সেই সংস্কার করবে? শাসনতান্ত্রিক এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় যে সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোন ধরণের প্রচার-প্রচারণা বা গণসচেতনতামূলক কর্মকান্ডও সরকার হাতে নেয়নি। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, আনুপাতিক পদ্ধতি ইত্যাদির বিষয়ে কি সাধারণ মানুষ জানে? এই অবস্থায় যদি গণভোটও হয়, তাহলে তা প্রস্তাবিত সংস্কারের পক্ষে না যাবার সম্ভাবনাই বেশি।
২. সংস্কার কখনো সহজে সম্পন্ন করা যায় না। তাতে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরণের বাধা আসে। এ কারণে এক সাথে একাধিক সংস্কার সমস্যা তৈরি করে। সংস্কারের বিষয়ে সরকার আন্তরিক হলে শাসনতন্ত্র এবং নির্বাচন পদ্ধতির মত মৌলিক বিষয়ের উপর ফোকাস করতো, সংস্কারের প্যানডোরার বাক্স খুলে বসতো না। উল্লেখ্য যে, সতেরটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা কয়েকশত সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু রয়েছে খুবই বিতর্কিত।
৩. সরকারকে যে সকল কর্মকান্ডে বেশি ফোকাস করতে দেখা যাচ্ছে, সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নমূলক। সে তুলনায় সংস্কারের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে, ’চাইলে হবে, না চাইলে নাই।’
তাহলে কি ড. ইউনূস দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছেন?
এর উত্তর সম্ভবত: নেতিবাচক। তাঁর রয়েছে আকাশসম সুনাম এবং ইমেজ। প্রতিশ্রুতির বাইরে গিয়ে সারা জীবনের অর্জিত সুনামকে তিনি ধ্বংস করতে চাইবেন না। তাঁর মত অবস্থানের কেউই তা করবেন না।
তাহলে তিনি কী চান? কী তাঁর আসল পরিকল্পনা?
বিগত সাড়ে নয় মাসের তাঁর কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, তিনি দেশকে এমন একটি অবস্থায় রেখে যেতে চাচ্ছেন, যাতে মানুষ দীর্ঘদিন তাঁকে উদাহরণ হিসেবে মনে রাখে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার তিনি খুলে দিয়ে যেতে চাচ্ছেন। এ কারণেই তিনি বিদেশি বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করছেন, বন্দর আধুনিকায়ন করার উদ্যোগ নিচ্ছেন, বাংলাদেশকে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক হাবে পরিণত করতে চাইছেন।
প্রধান রাজনৈতিক দলের অবিশ্বাস ও বিরোধিতার মধ্যে এই কাজ তিনি কতটুকু করতে পারবেন বা আদৌ করতে পারবেন কিনা - সে এক ট্রিলিয়ন ডলার প্রশ্ন।
আহসান মোহাম্মদ