শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দাবি আদায়ের আন্দোলনে যখন শিক্ষকরা, তখন বাইরে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা। এমন সময় বিদ্যালয়টির শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে পরীক্ষা শুরু করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনীষা আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের তালা ভেঙে পরীক্ষা শুরু করেন ইউএনও। ওই সময় উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নূরনবী উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, শেরপুর জেলার ৭৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বুধবার থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন শুরু করেন। বৃহস্পতিবারও ওই কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখেন তারা। তবে দাবি-দাওয়া আদায়ে সহকারী শিক্ষকদের আন্দোলন চলার পরও বেশিরভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ইউএনও মনীষা আহমেদ ওই স্কুলে গিয়ে তালা ভেঙে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
এদিকে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ করে দাবি আদায়ের নামে শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভাবকরাও। শ্রীবরদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসা অভিভাবক মিজান উদ্দিন বলেন, হঠাৎ পরীক্ষা বন্ধ হওয়ায় শিশুরা মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে। শিক্ষকরা এতদিন দাবি জানানোর সময় পাননি। আমাদের বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি করে কীসের আন্দোলন? সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তাদের এই আন্দোলন। আরেক অভিভাবক আফজাল মিয়া বলেন, কোমলমতি শিশুদের জিম্মি করে শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমেছেন। সরকারকে কঠোর হতে হবে, বাচ্চাদের ক্ষতি হবে, আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখবো তা হয় না। এসব শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হোক।
তবে আন্দোলনরত সহকারী শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগামী রবিবার থেকে আন্দোলন আরও জোরদার হবে। আর সরকার দাবি মেনে নিলে তাৎক্ষণিকভাবে ক্লাসে ফিরে যাবেন তারা।
শ্রীবরদীর ইউএনও মনীষা আহমেদ জানান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষকদের অবিলম্বে পরীক্ষায় ফেরার চূড়ান্ত নির্দেশ দিয়েছে। একইসঙ্গে কর্মবিরতি বা শাটডাউন অব্যাহত থাকলে সরকারি চাকরি আইন, আচরণবিধি ও ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সতর্কবার্তাও দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা চালুর ব্যবস্থা করেছি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সায়েদুর রহমান বলেন, জেলার ৭৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৭২০ স্কুলে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শ্রীবরদী উপজেলার ২০টি স্কুলে পরীক্ষা হয়নি। আগামী রবিবার সকল স্কুলেই পরীক্ষা হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের শাটডাউন দেওয়ার আইনগত অধিকার নেই।