Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুরের ছয়টি আসনেই ব্যাপক প্রভাব রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ধানের শীষ মার্কার। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল না থাকায় ভোটের লড়াইয়ে একক প্রভাবশালী বিএনপির বিপরীতে অবস্থান হতে পারে জামায়াতে ইসলামীর। মাঠের তথ্য বলছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে তৃণমূলের বিভিন্ন আড্ডায় বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঘোষিত প্রার্থী নিয়ে পার্থক্য ও মূল্যায়ন-অবমূল্যায়নের হিসাবনিকাশ চলছে। তবে সবারই ধারণা, সব আসনেই বিএনপির সঙ্গে জামায়াতেরই লড়াই হবে।

দিনাজপুর-১ (কাহারোল-বীরগঞ্জ) : তৃণমূলের অনেকে মনে করেন, আগামী নির্বাচনে কাহারোল-বীরগঞ্জ এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। তারা কোন দলকে ভোট দেবেন- তার ওপরই নির্ভর করবে জয়-পরাজয়। ১৯৮৬ সাল থেকে আসনটিতে বিএনপি একবার এবং জামায়াত ও জাতীয় পার্টি একবার করে এবং বাকি সময় অন্যদল জয়লাভ করে। তাই এবার আসন ফিরে পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। অবশ্য বামসহ অন্য দলগুলোর প্রার্থী কিংবা নেতা-কর্মীদের সাড়াশব্দ নেই। বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক দল নেতা ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, জামায়াতের প্রার্থী দিনাজপুর শহর শিবিরের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমান, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. চান মিঞা ভোটের মাঠে তৎপর রয়েছেন।

দিনাজপুর-২ (বিরল ও বোচাগঞ্জ) : এ আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনের মনোনীত প্রার্থীরা সভাসমাবেশ করে ভোটের প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রার্থীরা হলেন বিএনপির সাদেক রিয়াজ চৌধুরী পিনাক, জামায়াতের অধ্যক্ষ আ ন ম আফজালুল আনাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ রেদওয়ানুল কারীম রাবিদস, খেলাফত মজলিশের মাওলানা জোবায়ের সাঈদ। ১৯৭৩ সাল থেকে এই আসনে বিএনপি দুবার এবং জাতীয় পার্টি একবার এবং অন্যান্যরা সাতবার জয়লাভ করে। তাই আসনটি এবার ফিরে পেতে চাইছে বিএনপি।

দিনাজপুর-৩ (সদর) : এ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো প্রার্থী হয়েছেন। এটি ছিল তার বড় বোন প্রয়াত খুরশীদ জাহান হকের সংসদীয় আসন। দলীয় নেতারা জানান, দিনাজপুরের এই আসনে বিএনপির শাসনামলের উন্নয়নের চিত্র এখনো দৃশ্যমান। তাই যে যে দল থেকেই নির্বাচন করুক না কেন, এখানে বিএনপির অবস্থান শক্ত। তাই বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে হারানো কঠিন হবে।

এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর অ্যাডভোকেট ময়নুল আলম, ইসলামী আন্দোলনের অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ খাইরুজ্জামান, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের হাফেজ মাওলানা রেজাউল করিম প্রার্থী হয়েছেন।

দিনাজপুর-৪ (খানসামা ও চিরিরবন্দর) : নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি আকতারুজ্জামান মিয়া, জামায়াতের আলহাজ আফতাবউদ্দীন মোল্লা, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আনোয়ার হোসেন নদভী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মাওলানা ফয়জুল্লাহ বুলবুল। তৃণমূলের ভোটারদের তথ্যানুযায়ী, এ আসনে বিএনপির সঙ্গে লড়াই হবে জামায়াতের।

দিনাজপুর-৫ (পার্বতীপুর ও ফুলবাড়ী) : এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ঠিক না হলেও নির্বাচনি মাঠ চষছেন জেলা বিএনপির সদস্য ও সাবেক এমপি এ জেড এম রেজওয়ানুল হক, পার্বতীপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য এস এম জাকারিয়া বাচ্চু, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহসভাপতি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম কামরুজ্জামান, সাবেক ছাত্রনেতা ও হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নওশের ওয়ান, ফুলবাড়ী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাক আহম্মেদ চৌধুরী খোকন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ আলী সাহাজুল। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী মাওলানা মো. আনোয়ার হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শাহ মোহাম্মদ আবু সায়েম প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।। এ আসনে খেলাফত মজলিশের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। এনসিপি তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করলেও কেন্দ্রীয় মুখ্য সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. আবদুল আহাদ তৎপরতা চালাচ্ছেন।

দিনাজপুর-৬ (নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর ও বিরামপুর) : এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনের ডা. নুর আলম সিদ্দিক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মুফতি নুরুল করিম, এবি পার্টির ব্যারিস্টার সানী আবদুল হক ভোটের মাঠে সরব রয়েছেন। এ আসনে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতেরই লড়াই হবে বলে সাধারণ ভোটারদের ধারণা।