Image description
► ক্লু না থাকা, ভিকটিমের পরিচয়, ফুটেজ না মেলাসহ নানা কারণ ► প্রশ্ন ওঠছে পুলিশের সক্ষমতা নিয়েও

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে শিয়ালবাড়ী এলাকায় একটি রাসায়নিক গুদামে অগ্নিকাণ্ডে অঙ্গার হয় ১৭টি প্রাণ। গত ১৪ অক্টোবরের এ ঘটনা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে সারা দেশে। সেই সঙ্গে আবারও আলোচনায় আসে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে ওঠা অবৈধ কেমিক্যাল গুদাম। এ ঘটনায় কেমিক্যাল গোডাউনের মালিক শাহ আলমকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করা হয়। কিন্তু কেমিক্যাল মাফিয়া আলম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

উত্তর বাড্ডা পূর্বাঞ্চল ২ নম্বর লেনের একটি বাড়ি থেকে সাইফুল ইসলাম (৩০) ও শাকিলা আক্তার (২৮) নামে দুইজনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ২ নভেম্বর লাশ দুটি উদ্ধার হলেও এ ঘটনায় কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি থানা-পুলিশ। গত ৫ অক্টোবর গেন্ডারিয়া রেলস্টেশনের পাশ থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ের এক নারীর গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই নারীকে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় বলে নিশ্চিত করেছিল থানা-পুলিশ। এ ঘটনায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হলেও এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি এখন পর্যন্ত ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি তদন্তকারীরা। শুধু এই ঘটনাগুলোই নয় গত কয়েক বছরে এমন অনেক ঘটনাই আছে যেগুলোর আসামি গ্রেপ্তার ও রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। যার পেছনে ক্লু না থাকা, ভিকটিমের পরিচয় শনাক্ত না হওয়া, সিসি ক্যামেরা ফুটেজ না মেলা, আসামি শনাক্ত করতে না পারা, আলামত না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণ বিদ্যমান থাকে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো ঘটনায় অনেক বেশি সময় লাগলে জনমনে পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এজন্য অপরাধমূলক সব ঘটনার পেছনেই গুরুত্বসহকারে লেগে থেকে রহস্য উন্মোচন করতে হবে।

২৬ অক্টোবর রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৮টি বিদেশি পিস্তল, ১৬টি ম্যাগাজিনসহ বিপুল বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। ঘটনাটি বর্তমানে তদন্ত করছে রেলওয়ে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। কিন্তু আসামি শনাক্ত তো দূরের কথা কীভাবে অস্ত্রগুলো ট্রেনের বগিতে তোলা হয়েছে সেটিই বের করতে পারেনি তদন্তকারী। তারা শুধু নিশ্চিত হতে পেরেছে অস্ত্রগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছে।

এদিকে বেশ কয়েক বছর পুরোনো চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা বেশ কয়েকটি ঘটনা তদন্তের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বছরের পর বছর। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা ঘটনাতেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। রাজধানীর কলাবাগানে চিকিৎসক ডা. কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডে পেরিয়েছে চার বছর। এখনো উদ্ঘাটন হয়নি আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য। ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর গোপীবাগের বাসায় লুৎফর রহমান ফারুকসহ ছয়জনকে খুন করা হয়। যা সিক্স মার্ডার হিসেবে পরিচিতি পায়। এই দীর্ঘ সময়েও এ ঘটনার রহস্য উন্মোচন হয়নি। ২০২২ সালের ২০ নভেম্বর ঢাকার নিম্ন আদালত থেকে পুলিশের চোখে স্প্রে করে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি মইনুল হাসান শামীম ও আবু সিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। তাদের আর হদিস মেলেনি।

সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, যখন কোনো মামলায় আসামি গ্রেপ্তার ও রহস্য উন্মোচনে লম্বা সময় লাগে তখন জনমনে প্রশ্ন জাগে পুলিশ ইচ্ছা করেই আসামি ধরছে না, নাকি তাদের সক্ষমতা নেই। এটির অন্যতম কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেখা যায় পুলিশ যে ঘটনার রহস্য উন্মোচন করতে চেয়েছে বা এটির জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়েছে, সেটি পেরেছে। কোনো ঘটনায় সক্রিয়, আবার কোনো ঘটনায় নিষ্ক্রিয় থাকার সংস্কৃতি থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসতে হবে।

 পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, পুলিশের তদন্তে দেরি হওয়ার সুনির্দিষ্ট কারণ বলা মুশকিল। কারণ এক এক ঘটনা এক এক রকম। তবে চার্জশিট দিতে না পারা এবং আসামি গ্রেপ্তার করতে না পারা মানে এই নয় যে মামলাটি শেষ হয়ে গেল। অপরাধের ঘটনা যে কোনো সময় নতুন মোড় নিতে পারে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলার তদন্তকাজ শেষ করতে পুলিশের প্রচেষ্টা সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে অব্যাহত রাখতে হবে।