অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বেতন ও অন্যান্য সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলোর চরম তারল্য সঙ্কট ও আর্থিক অনিয়মের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বেতন–ভাতা কমানোর সিদ্ধান্ত কর্মীদের জন্য সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং এটি সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং সেক্টরে অস্থিরতা বাড়াতে পারে। দেশের পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক হলো— ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলো বর্তমানে মার্জারের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এই পাঁচ ব্যাংককে একীভূত করে ‘সাম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ নামে নতুন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক গঠন করা হচ্ছে, যার লক্ষ্য আর্থিক স্বাস্থ্য পুনর্গঠন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে পাঁচ ব্যাংকের প্রশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈঠকে ৩৫০ কোটি টাকা নতুন তারল্য সহায়তা অনুমোদন করেছে। তবে বেতন–ভাতা পরিশোধের জন্যই এই সহায়তা সীমিত রাখা হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
বেতন–ভাতা কমানোর নির্দেশ
বৈঠকে প্রশাসকরা জানান, বেতন–ভাতা দিতে মোট ১,০০০ কোটি টাকা সহায়তা চাইলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৩৫০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। একইসঙ্গে ব্যাংকগুলোর দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারণে কর্মীদের বেতন ও অন্যান্য সুবিধা কমাতে নির্দেশ দেন গভর্নর।
একজন প্রশাসক জানান, পাঁচ ব্যাংকের প্রায় ১৬ হাজার কর্মী রয়েছেন, এবং খুব শিগগিরই বেতন–সুবিধা কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজোলিউশন বিভাগও বেতন–ভাতা কমানোর পদক্ষেপ চূড়ান্ত করছে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।
কর্মীদের দুর্দশা
ইউনিয়ন ব্যাংকের একজন কর্মী বলেন, বেতন অ্যাকাউন্টে জমা হলেও সেটি সময়মতো উত্তোলন করা যায় না। ব্যাংকের সংকট গভীর হওয়ায় কর্মীরা মারাত্মক আর্থিক চাপে আছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ ব্যাংকই আমানতকারীদের অর্থ ব্যবহার করে কর্মীদের বেতন দিচ্ছে—যা আর্থিক খাতের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং অনিয়মের মধ্যে পড়ে।
ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ভয়াবহ ক্ষতি
ফাষ্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটি ৪,৩০৮ কোটি টাকা নেগেটিভ অপারেটিং ইনকাম দেখায়। একই সময়ে বেতন–ভাতার ব্যয় ছিল ৬৫২ কোটি টাকা। ফলে আমানতকারীদের টাকা দিয়েই বেতন পরিশোধ হয়েছে।
ব্যাংকটির বার্ষিক নিট ক্ষতি দাঁড়িয়েছে ৫,৪৫০ কোটি টাকায়। আগস্টের শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে গুরুতর প্রশাসনিক দুর্বলতার তথ্যও পাওয়া গেছে।
নতুন সমন্বিত ইসলামী ব্যাংক
এ মাসের শুরুতে পাঁচ দুর্দশাগ্রস্ত ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত ‘সাম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক পিএলসি’ গঠনের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোকে মোট ৩৫,৩০০ কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা এখনও ফেরত দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো।