Image description

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ ও প্রশাসনে বড় রদবদল ও পদায়ন হয়েছে। প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসেবে এই পদায়ন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর আগে চলতি মাসেই ৫২ জন জেলা প্রশাসককে বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে। গতকাল একযোগে রদবদল করা হয়েছে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) ও ১৬৬ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)কে। একদিনেই ৩৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে ডিআইজি করা হয়েছে। ইসি’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। তাই সব দলের জন্য ভোটের মাঠ নিরপেক্ষ করতেই অন্তর্বর্তী সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে।  

লটারিতে ৬৪ জেলায় এসপি রদবদল: 
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য জেলা পুলিশে নেতৃত্বে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রথমবারেরমতো ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে (এসপি) লটারির মাধ্যমে রদবদল করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের ৩৩ কর্মকর্তাকে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে দুই ডিআইজি ও ১৩ এসপিকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা পৃথক ৫টি প্রজ্ঞাপনে এ সব পরিবর্তনের কথা জানানো হয়।

জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ অনুযায়ী যোগ্য কর্মকর্তাদের তালিকা কমিটির হাতে দেয়া হয় এবং লটারির মাধ্যমে জেলাওয়ারি পদায়ন চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় লটারি করে এসপি নির্বাচন করা হয়। 

কর্মকর্তারা জানান, জেলার পুলিশ সুপার নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রথমে অতীতে এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন কর্মকর্তাদের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। এরপর পুলিশ ক্যাডারের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে একটি ফিট লিস্ট প্রস্তুত করা হয়। সেই তালিকায় থাকা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ম্যানুয়াল লটারির মাধ্যমে ৬৪ জনকে নির্বাচন করা হয়।

এদিকে পুলিশের ৩৩ কর্মকর্তাকে একযোগে উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত আলাদা দু’টি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। একটি প্রজ্ঞাপনে ৩১ জনকে এবং অন্যটিতে দু’জনকে পদোন্নতি দেয়ার তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার উপ-সচিব মো. মাহাবুবুর রহমান প্রজ্ঞাপন দু’টিতে স্বাক্ষর করেছেন।

একইদিনে পৃথক আদেশে বিভিন্ন জেলার ১৩ জন পুলিশ সুপারকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। এসব ইউনিটের মধ্যে রয়েছে এসবি, ডিএমপি, খুলনা রেঞ্জ, পিবিআই, সিআইডি, এপিবিএন। এ ছাড়াও পৃথক আরেকটি প্রজ্ঞাপনে দুই ডিআইজিকে পুলিশ অধিদপ্তর ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশে (আরএমপি) বদলি করা হয়।

চার জেলায় নারী কর্মকর্তা: ৬৪ জেলায় লটারির মাধ্যমে নতুন পুলিশ সুপার (এসপি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তাদের মধ্যে চারজন রয়েছেন নারী কর্মকর্তা। এ চার নারী কর্মকর্তা হবিগঞ্জ, শরীয়তপুর, জয়পুরহাট ও বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। প্রজ্ঞাপনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের এসপি মোছা. ইয়াছমিন খাতুনকে হবিগঞ্জে, যশোরের এসপি রওনক জাহানকে শরীয়তপুরে, মাগুরার এসপি মিনা মাহমুদাকে জয়পুরহাটে এবং রাজশাহীর এসপি ফারজানা ইসলামকে বরিশাল জেলায় পদায়ন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার পদায়ন করা হয়েছে। লটারি পদ্ধতিতে তাদের নির্বাচন করা হয়েছে। মেধাবীদের এই পদায়নে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কে কোন জেলায় যাবেন সেটি লটারিতে করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে জেলাগুলোকে তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করার পর এসপি পদে পদায়নে লটারি করা হয়েছে। এসপি পদে পদায়নে প্রথমে মেধাবী কর্মকর্তাদের বেছে নেয়া হয়েছে, মেধাবীরা কেউ বাদ পড়েননি। কে কোন জেলায় যাবেন তা নির্ধারণে লটারি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন উপদেষ্টা। এসপি নিয়োগে লটারির বিষয় জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যেভাবে লটারি করার ওইভাবেই লটারি করে দিয়েছি। এটার ক্ষেত্রে আমরা তিনটা ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করছি; এ-ক্যাটাগরি, বি-ক্যাটাগরি, সি-ক্যাটাগরি। এটা জেলার আয়তনের ভিত্তিতে করা হয়নি, আমরা করেছি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, ওই জেলাগুলো নির্ধারণ করে, তারপর আমরা ঠিক করেছি এসপিদের কারে কারে দেবো। আমাদের টোটাল এসপি ছিল মনে হয় ৬৪ জেলায়। ৬৪ জেলা থেকে আমরা ১৮ জনকে উঠিয়ে এনেছি। ১৮ জনের জায়গায় আবার আমরা নতুন কর্মকর্তা দিয়েছি। লটারি করে যারটা যেই জেলায়, যার কপাল আছে ওই জেলায় পড়ছে। ওসিদের পদায়নও কি লটারির মাধ্যমে হচ্ছে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ইনশাআল্লাহ।