Image description

আশা জেগেছে, ভোট মনে হচ্ছে সময় মতই হবে। ফেব্রুয়ারি ২০২৬, কোন এক তারিখে। ভোটের এই তারিখ যখন ঘোষণা হয় সেসময় আমরা অনেকেই সন্দিহান ছিলাম। হবে তো ঘোষনা মাফিক। অভ্যূত্থান বিপ্লব বা সংস্কার পরবর্তী সময়ে সব বাধা পেরিয়ে জাতি যে একটা গনভোটের দিকে যেতে সংকল্পবদ্ধ এটা দেখে এবং ভেবে ভালো লাগছে। তারিখ ঘোষণা, সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পারা এবং সে অনুযায়ী সব কাজ করে যাওয়া এসব কিছুই এখন পর্যন্ত আশা জাগানিয়া। 

আমরা সবাই জানি ব্যাপারটা সহজ ছিল না অনেক কারণে। দেশের ভেতরের এবং বাইরের নানান হিসেব নিকেশের ব্যাপার ছিল। অনেক পক্ষ, অনেক খেলোয়াড়, অনেক পর্যবেক্ষক। বুঝে, না বুঝে। সব যে মিটে গেছে তেমন কিছু বলছিনা। সব হিসেব নিকেশের জের চলছে, চলবে অনেক সময় ধরে। চলবেই। আমরা চাই বা না চাই। 

পরিবর্তনের পক্ষে ছিল দেশের বেশীরভাগ জনগন। এ সত্য তারা তাদের জীবন দিয়ে, ত্যাগ দিয়ে, সংগ্রামে, চিৎকারে প্রকাশ করেছে, করছে, করতেই থাকবে, অনেক দিন। কতদিন, অজানা। 

আশার কথা হোল, যারা বিপক্ষে ছিল তারা হেরে যেতে শুরু করেছে, কথায়, কাজে, চিন্তায়, সমর্থন জোগাড়ে, নৈতিকভাবে। ক্ষয় শুরু হয়েছে তাদের বয়ানে। এখন নানান ফন্দি ফিকিরে ব্যস্ত। পক্ষ শক্তিকে কিভাবে শতধা বিভক্ত রাখা যায় সে চিন্তায়, কাজে, এবং ষড়যন্ত্রে।  

নতুন স্বাভাবিকতায় রাজনীতি কিছুটা জটিল রূপ লাভ করেছে। সাধারন পর্যবেক্ষন হোল, সব পুরনো দলই রজনীতির এ পরিবর্তন বোঝার ক্ষেত্রে কোন না কোন ভাবে তাদের সীমাবদ্ধতা প্রকাশ করেই যাচ্ছেন। অজান্তেই। হয়তো যে সময় বা পরিবেশ পেলে তারা তাদের সঠিক স্বাভাবিক রাজনীতি করার মত আস্থাজনক অবস্থায় পৌছতে পারতেন তেমন সময় তারা পাচ্ছেন না এই চটজলদি ভোটের কারনে। অন্যদিকে এটাও ঠিক যে দেরীতে ভোট হলে যে কোন সময় পরিবর্তন ঊত্তর সময়ে ঝুঁকিপুর্ন হয়ে যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা সম্ভবত পরাজিত পক্ষের ভোটের হিসাব নিকাশ এবং তাদের স্বনামে রাজনীতি করতে না পারার ফলে সৃষ্ট জটিল হিসেবনিকাশ। এই জটিলতা এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করছে যে পুরনো দলগুলো অহরহ তাদের রাজনীতির সম্পুর্ন বিপরীত কথা বলে প্রায়ই স্ববিরোধিতার প্রকাশ করে যাচ্ছেন। খেই হারিয়ে ফেলছেন। পুরো জাতি তাদের এই খেলায় কাবি খাচ্ছে। ভুল বোঝার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এই দলগুলোর রাজনীতিতে যে মুন্সিয়ানা দেখানো দরকার ছিল তারা সেটা দেখাতে পারছে না। ব্যর্থ হচ্ছে। 

এ ব্যর্থতা থেকে উত্তরনের জন্য যে ধরনের স্বল্প এবং দীর্ঘমেয়াদি নীতিমালার প্রকাশ রাজনৈতিক দলগুলোর করা দরকার ছিল, বয়ান তৈরী করা দরকার ছিল, সেগুলি করার মত যোগ্যতার প্রকাশ আমরা তাদের বচনে দেখতে পাচ্ছি না। এ ক্ষেত্রে আমরা তাদের রাজনীতির অন্তসারশুন্যতা গভীর হাতাশার সাথে পর্যবেক্ষন করছি। বিশেষ করে যেসব রাজনৈতিক দল তাদের ভবিষ্যত ক্ষমতাকে এত কাছে মনে করছে এবং এটা ভেবে এত আবেগ তাড়িত হচ্ছে যে তারা তাদের স্বাভাবিক রাজনীতি করাকে অনেক সময় হুমকী মনে করছে। এটি এক ধরনের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব বলা যায়। 

গত দেড় দশক ধরে গড়ে ওঠা ফ্যাসিবাদী রাজনীতি এবং এর থেকে গড়ে ওঠা জটিল সাংস্কৃতিক পরিবেশ এবং এর থেকে উত্তরনের জন্য যোগ্য রাজনীতি গড়ে তোলার কাজ হাতে নেয়ার সময় এসেছে। কিভাবে দীর্ঘমেয়াদী সাংস্কৃতিক সংগ্রামের রূপরেখা প্রনয়নের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের নিশানা গুলো মুছে ফেলা যায় সে পরিকল্পনা করা এবং তার বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশের সকল নাগরিক কে সাথে নিয়ে, সকল রাজনৈতিক মত এবং পথকে সাথে নিয়ে কদম কদম এগিয়ে যেতে হবে দূর নিশানা লক্ষ্য করে। পৃথিবীর ইতিহাসের সফল রিকন্সিলিয়েশন এর উদহরন গুলোর সফল পাঠ এবং প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। 

ফ্যাসিবাদের প্রতীক নেত্তৃত্তের বিচার শুরু করতে পারা, পরিবর্তন উত্তর সময়ে একটা ভাল নির্বাচন করতে পারা, সংস্কারের রূপরেখা দাড় করতে পারা, সবকিছুই আমাদের উত্তরনের পথে ভালো যাত্রা শুরুর লক্ষন। জাতি হিসেবে এইসব সাফল্যের জন্য আমরা অবশ্যই গর্ব করতে পারি। আমরা এসাথে একথা যেন ভুলে না যাই যে আমাদের অনেক কাজ এখনও বাকি। এসব কাজ সেসবের শুরু মাত্র। 

আগামী নির্বাচনে আমাদের লক্ষ্য হবে যোগ্য নেত্তৃত্ত সে যে দলেই থাকুক তাকে চেনা এবং ভোটে জয়ী করে নিয়ে আসা। যোগ্য ব্যক্তি। আমাদের আজকের আলোচনায় যেসব কাজের কথা আমরা আলোচনা করলাম সেগুলি বুঝে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে এমন গুনসম্পন্ন যোগ্য ব্যক্তিত্ত। আসুন আমরা সবাই তাদের সন্ধান করি দলের আলোছায়া থেকে তাদের বাছাই করে নিয়ে আসি। নাগরিক হিসেবে তাদের বাছাই করতে পারাই আমাদের জন্য আগামী নির্বাচনে সবচেয়ে বড় কাজ, বড় পরীক্ষা। আসুন আমরা সে দায়িত্তবাআন যোগ্য নাগরিকের মত পবিত্রতার সাথে পালন করি, কামিয়াব হই। 

লেখক: আহমাদ সালাহুদ্দীন

উন্নয়ন গবেষক