বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে স্কোপোলামিন বা ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা শয়তানের নিঃশ্বাস নামে পরিচিত একটি ভয়ংকর কেমিক্যাল–যা মুহূর্তেই মানুষের বিচার–বুদ্ধি ও শরীরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। অপরাধীরা নতুন কৌশলে এই ড্রাগ ব্যবহার করে পথচারীকে বশীভূত করে ছিনতাই, লুট কিংবা অন্যান্য অপরাধ করছে। সচেতনতা না থাকলে মুহূর্তেই কেউ হয়ে উঠতে পারে এই ড্রাগের শিকার।
স্কোপোলামিন মূলত ধুতরা ফুলসহ নাইটশেড পরিবারের কিছু গাছ থেকে পাওয়া একটি অ্যালকালয়েড। চিকিৎসায় বমি, মোশন সিকনেস বা অপারেশনের পর রোগীর ব্যথা কমাতে অতি অল্প মাত্রায় ব্যবহৃত হলেও, অপরাধীরা এটি গুঁড়ো বা তরল রূপে মানুষের মুখের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বা কোনো কাগজ/ভিজিটিং কার্ডে লাগিয়ে শুঁকিয়ে প্রতারণা করে থাকে।
শ্বাসের সঙ্গে এই পদার্থ নাক দিয়ে ঢুকলে ৫–১০ মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তির স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। তখন ভুক্তভোগী স্বাভাবিক চিন্তা-শক্তি হারিয়ে অপরাধীর কথামতো কাজ করেন—এমনকি নিজের গয়না, মোবাইল বা টাকা নিজ হাতে তুলে দেন। পরে বেশিরভাগই ঘটনার কিছুই মনে রাখতে পারেন না।
গত ২২ মে চট্টগ্রামে মো. জনি নামের এক সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমবারের মতো নগরে স্কোপোলামিন ব্যবহারের প্রমাণ পায় পুলিশ। সিসিটিভিতে দেখা যায়—এক নারী ঘোরের মধ্যে নিজের দুল, চেইন, মোবাইল পর্যন্ত তুলে দিচ্ছেন অপরাধীদের হাতে। পরে তিনি জানান, নাকের কাছে পাউডার ফুঁ দিয়ে ছিটিয়ে দেওয়ার পর তিনি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন।
এর আগে নারায়ণগঞ্জে ২০২৩ সালের একটি হত্যা মামলার তদন্তে এই কেমিক্যাল প্রথম উদ্ধার হয়। সিআইডির পরীক্ষায় বোতলভর্তি সাদা পাউডারের মধ্যে স্কোপোলামিন শনাক্ত করা হয়।
যেভাবে কাজ করে এই ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’
- অ্যাসিটাইলকোলিন নামের নিউরোট্রান্সমিটারকে ব্লক করে
- স্মৃতিভ্রংশ, বিভ্রান্তি ও দিশাহীনতা তৈরি করে
- স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অক্ষম করে
- তন্দ্রা, হ্যালুসিনেশন ও বাধ্য আচরণ সৃষ্টি করে
- একঘণ্টা থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত প্রভাব স্থায়ী হতে পারে
চিকিৎসায় এর ব্যবহার সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত হলেও, অপরাধীরা পাউডার আকারে হাতে, কাগজে বা কোনো ঠিকানা লেখার কার্ডে লাগিয়ে নিশ্বাসের কাছে আনার কৌশল ব্যবহার করছে।
অপরাধীরা যেভাবে ফাঁদে ফেলে
- ঠিকানা পড়তে দিয়ে কাগজে লাগানো পাউডার শুঁকিয়ে দেওয়া
- হাত মেলানোর সময় হাতে পাউডার লাগানো
- গাড়িতে লিফট নেওয়ার প্রলোভন
- দোকান বা রাস্তায় কার্ড/কাপড় ‘ঘ্রাণ’ নিতে বলা
- ব্যাগ বা মোবাইলে গুঁড়ো লাগানো
- এতে ভুক্তভোগী মুহূর্তেই অলস, দিশাহীন ও অচেতনসদৃশ হয়ে পড়ে।
কি করবেন—নিজেকে কীভাবে বাঁচাবেন
১. সচেতন থাকুন
- অপরিচিত কেউ ঠিকানা পড়তে দিলে বা কাগজ/কার্ড শোঁকাতে চাইলে সতর্ক হোন।
- রাস্তায় কেউ টোকা দিলে বা কিছু ধরাতে চাইলে পেছনে সরে যান।
২. উপসর্গ বুঝলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা
যদি হঠাৎ মাথা ঘোরা, ঘোর লাগা, দিশাহীনতা, চোখ ঝাপসা লাগা বা শরীরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতি হয়—
- দ্রুত খোলা জায়গায় যান
- কাছের মানুষকে ফোন করুন
- পানি পান করুন
- একা থাকবেন না
৩. পুলিশ বা নিরাপত্তাকর্মীকে জানান
এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে সাথে সাথে পুলিশকে জানানো জরুরি। অনেক ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিলে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়।
৪. হাসপাতালে যান
চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাকটিভ চারকোল ব্যবহার করা যেতে পারে, যা শরীরে বিষক্রিয়ার শোষণ কমায়।
৫. ব্যক্তিগত সতর্কতা
- রাস্তায় অপরিচিতের দেওয়া কিছু শোঁকানো বা হাতে নেওয়া এড়িয়ে চলুন।
- ব্যাগ, ফোন ও মূল্যবান জিনিস শরীরের খুব কাছে রাখুন।
- জনাকীর্ণ স্থানে সতর্ক থাকুন।
ঢাকাটাইমস