Image description
দুই শুটারসহ পাঁচজন রিমান্ডে

পুরান ঢাকায় ফিল্মি স্টাইলে খুন হওয়ার আগেও অন্তত তিনবার টার্গেট হয়েছিলেন নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন। জানা যায়, তিন মাস আগে মামুনকে হত্যার মিশন হাতে নেন হত্যাকারীরা। এরপর রাজধানীর মিরপুর-১১ নম্বর সেকশন, ধানমন্ডি ও ঝিগাতলায় আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের নিশানা হয়েও প্রাণে বেঁচে যান মামুন। তবে চতুর্থবার শেষ রক্ষা হয়নি মামুনের। ওই দিন মামুন আদালতে হাজিরা দিতে যাবে- এমন খবর পেয়ে কিলিং মিশন সফল করেন সন্ত্রাসীরা। প্রথম তিনটি ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক। ওই তিন ঘটনায় উপস্থিত ছিলেন না রবিন। তবে হত্যাকাণ্ডের দিন আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ মিরপুর এলাকার সন্ত্রাসী রনির নির্দেশে কুত্তা ফারুকের সঙ্গে রবিন যোগ দেয়।

ঘটনাস্থলের পাশে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন রনি নিজেই। গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামুন হত্যাকাণ্ডের পর দুই শুটার ফারুক ও রবিনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব এ তথ্য জানিয়েছেন তারা। সূত্র মতে, হত্যার পরিকল্পনাকারী রনি মামুনেরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন একসময়। তারা দুজনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের হয়ে কাজ করতেন। কিন্তু মামুনের প্রথম স্ত্রী স্বপ্নার সঙ্গে ইমনের সম্পর্কের গুঞ্জন এবং ইমনের কারণে একবার পাঁচ মামলায় জামিন পেয়েও কারাগার থেকে বের হতে না পারার আক্ষেপ থেকে শুরু হওয়া মনোমালিন্যে শেষমেষ প্রকাশ্য শত্রুতায় রূপ নেয়। বন্ধুর সঙ্গে শত্রুতায় আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে হাত মেলানোর পরিণতি হিসেবে মামুনকে দুনিয়া থেকে সরানো হয়। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া শুটার ফারুকের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও অপহরণসহ পাঁচটি মামলা রয়েছে। আর রবিনের বিরুদ্ধে চুরিসহ দুটি মামলা রয়েছে। কারাগারে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে তাদের সাক্ষাৎ হয়। এরপর ইমনের দলে নাম লেখান। জামিনে বের হয়ে বর্তমানে ইমনের সম্রাজ্য দেখভাল করতে থাকা রনির নির্দেশনা মতো কাজ শুরু করেন।

জানা যায়, গতকাল পর্যন্ত মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়নি। এ বিষয়ে সূত্রাপুর থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ভিকটিমের স্ত্রী বিলকিস আক্তার আগামীকাল (আজ বৃহস্পতিবার) মামলা দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া গতকাল অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় দায়ের করা মামলায় দুই শুটারসহ গ্রেপ্তার পাঁচজনের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিকে গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আলোচিত মামুন হত্যার ৩২ ঘণ্টার মধ্যেই দুই শুটার ফারুক ও রবিনসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ইউসুফ, রুবেল ও শামীম। মঙ্গলবার রাতে সিলেট সদর ও নরসিংদীর ভেলানগর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। আর রাজধানীর রায়েরবাজার ইউসুফের (পেশায় দর্জি) বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, ৬ রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন। ফারুক ও রবিনের কাছ থেকে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়। যা পারিশ্রমিক হিসেবে তাদের দিয়েছিলেন রনি। বর্তমানে রনি, সুমন ও কামাল পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও জানান, এক সময়ের মুদি দোকানি, বর্তমানে কাফরুলের বাসিন্দা শীর্ষ সন্ত্রাসী রনি দুই শুটারকে ১ লাখ টাকা করে দেন এবং অস্ত্রও সরবরাহ করেন। মূলত আন্ডারওয়ার্ল্ডের আধিপত্য বিস্তার নিয়েই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তিনি আরও বলেন, মামুনের মামলার হাজিরার দিনে কিলিং মিশনের পরিকল্পনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে ৯ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে রনি তার বাসায় রবিনকে ডেকে নেন। রবিনকে জানানো হয়, হত্যাকাণ্ডের সময় ফারুক, সুমন, কামালসহ আরও কয়েকজন থাকবে। এতে রবিন রাজি হন। ঘটনার দিন গত সোমবার সকালে রনি ফোন দিয়ে সবাইকে আদালত এলাকায় যেতে বলেন। রবিন তার বন্ধু শামীমের সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে আদালত এলাকায় গিয়ে হত্যায় অংশ নেন। অন্যরাও সে সময় আদালত এলাকায় অবস্থান করছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রথমে সুমন ও ফারুকের গুলি করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফারুক ও রবিন গুলি করেন।