আসন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ করতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ, ছাত্রশক্তি, ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সংগঠন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক নানা আয়োজন শুরু করেছে।
জানা গেছে, নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। তাদের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—৪টি বুকশেলফ প্রদান, বিসিএস ও ইসলামিক বই সরবরাহ, ফ্রিডম বেল্ট, প্রতিটি ফ্লোরে ফার্স্ট এইড বক্স, ইনডোর গেমস আয়োজন, রম্য বিতর্ক ও কুইজ প্রতিযোগিতা, ডাস্টবিন ও জুতার তাক স্থাপন, যোগব্যায়াম ম্যাট ও গরম-ঠান্ডা পানির ফিল্টার প্রদান, এবং বিশেষ বৃত্তি ঘোষণা।
এছাড়াও তারা মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— ২ নভেম্বর ফিটনেস স্ক্রিনিং ও ফিজিওথেরাপি ক্যাম্প, ৪ নভেম্বর ‘ফ্রিল্যান্সিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং’ সেমিনার, ৬ নভেম্বর ‘আমাদের ক্যাম্পাস আমরাই গড়বো’ ক্যাম্পেইন, ৯ নভেম্বর মেধাবী সংবর্ধনা, ১০ নভেম্বর ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকাশে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা, ১১ নভেম্বর বিদেশে উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তি বিষয়ক সেমিনার, ১২ নভেম্বর স্তন ক্যান্সার সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান, ১৩ নভেম্বর মেডিকেল ডিসপ্যাচ বুথ ও রক্তদান কর্মসূচি, ১৬ নভেম্বর ‘কেমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই’ ক্যাম্পেইনের পুরস্কার বিতরণী, ১৭ নভেম্বর রম্য বিতর্ক, ১৮ নভেম্বর চাকরি মেলা ও সিভি লেখার প্রশিক্ষণ, ২০ নভেম্বর ইনডোর-আউটডোর গেমস, ২৩ নভেম্বর ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ সেমিনার, ২৪ নভেম্বর ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ডিং’ শীর্ষক আলোচনা সভা।
এছাড়া ৪ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে ‘হঠাৎ কুইজ প্রতিযোগিতা’।
অন্যদিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির ইতোমধ্যে গত ১২ মাসে ২৪টি বড় শিক্ষার্থীবান্ধব কর্মসূচি পালন করেছে। সেগুলো হলো, ১. নবাগত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ২০২৪, ২. ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি, ৩. সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় সভা, ৪. নৈশপ্রহরী ও নিরাপত্তা কর্মীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৫. আহত শিক্ষার্থীকে আর্থিক সহায়তা প্রদান, ৬. ২০২৫ সেশনের নতুন কমিটি গঠন, ৭. শিক্ষার্থীদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, ৮. নববর্ষ প্রকাশনা উৎসব ২০২৫, ৯. ভর্তি পরীক্ষায় সহায়তা কর্মসূচি, ১০. প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ও দোয়া মাহফিল, ১১. ইফতার উপহার কর্মসূচি, ১২. কুরআন উপহার কর্মসূচি, ১৩. মতবিনিময় সভা ও ইফতার মাহফিল, ১৪. ঈদ উপহার কর্মসূচি, ১৫. ঈদুল আজহা উপলক্ষে মধ্যাহ্নভোজ আয়োজন, ১৬. শহিদ সাজিদের পরিবারের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়, ১৭. মৌসুমি ফল উৎসব, ১৮. ষাণ্মাসিকে নতুন কমিটি প্রকাশ, ১৯. নবীনবরণ অনুষ্ঠান ২০২৫, ২০. শহিদ সাজিদের শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল, ২১. মনোসামাজিক স্বাস্থ্যসেবা ক্যাম্প, ২২. সম্পূরক বৃত্তির দাবিতে ইউজিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক, ২৩. নিরাপদ পানি প্রকল্প, ২৪. ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্নতা অভিযান ইত্যাদি।
এছাড়া পরে কবি মতিউর রহমান মল্লিক মেরিট অ্যাওয়ার্ড, শহীদ সাজিদের স্মরণে আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা, অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা, ছাত্রীহলে ওয়াশিং মেশিন সরবরাহ, ফার্স্ট এইড বক্স বিতরণ সহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
শিবির নেতৃবৃন্দ জানিয়েছে, আমাদের নভেম্বর মাসে নুন্যতম ২৫টি প্রোগ্রামের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এগুলো হলো-
১ নভেম্বর সেক্রেটারিয়েট বৈঠকের মধ্য দিয়ে শুরু হবে শিবিরের মাসিক কার্যক্রম। একই দিনে ‘সাবেক দায়িত্বশীলদের নীতি সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। ২ নভেম্বর আয়োজন করা হবে ‘ছাত্রীদের ইফতেখার প্রোগ্রাম’ এবং ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ‘ক্যাম্পাসে দরসুল কুরআন’,৪ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে হিস্টরি অলিম্পিয়ার্ড, ৬ নভেম্বর ল আলিম্পিয়ার্ড, এবং ৭ নভেম্বর সাইন্স অলিম্পিয়ার্ড। ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে কাওয়ালী সন্ধ্যা, ৯ নভেম্বর মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘ক্যারিয়ার গাইডলাইন প্রোগ্রাম’ এবং ১০ নভেম্বর বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা গাইডলাইল, ১২ নভেম্বর ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে কর্মসূচি, ১৩ নভেম্বর আইইআর ও আইন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যারিয়ার গাইডলাইন, এবং ১৪ নভেম্বর সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসূচি, ১৫ নভেম্বর সদস্য শপথ অনুষ্ঠান, ১৬ নভেম্বর ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প, ১৭ নভেম্বর গবেষণা কোর্সের উদ্বোধন ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী দিবস পালন, ১৮ নভেম্বর হাইয়ার স্টাডি ইন এবরোর্ড বিষয়ক সেমিনার, ১৯ নভেম্বর আইইএলটিএস কোর্স চালু, ২০ নভেম্বর শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিরসনে আলোচনা ও সেমিনার, এবং ২১ নভেম্বর বিশ্ব শিশু দিবস পালন। ২৩ নভেম্বর সেল্ফ ডিফেন্স ট্রইনিং কোর্স , ২৪ নভেম্বর আন্তঃবিভাগ ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা, এবং ২৭ নভেম্বর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হবে।
অন্যদিকে ছাত্রশক্তি (বাগছাস)-এর আয়োজনে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘শহীদ সাজিদ মেমোরিয়াল স্পোর্টস কার্নিভাল–২০২৫ (সিজন: ১)’। আগামী ৪, ৫ ও ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত এই কার্নিভালে অংশ নেবে বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা। ইভেন্টগুলো হলো—কম্বাইন্ড ক্রিকেট, আর্ম রেসলিং (বালক), ট্রেজার হান্ট, করপোরেট কুইজ, সাপলুডো (বালিকা) ও ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ইভেন্ট। আয়োজকদের মতে, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দলগত চেতনা ও ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে উঠবে।
এছাড়া একইদিন (৯ নভেম্বর) ছাত্রদল আয়োজন করছে মেধাবী সংবর্ধনা, আর ছাত্র অধিকার পরিষদ আয়োজন করছে ‘ব্যাকবেঞ্চার অলিম্পিয়াড’। এখানে ব্যাকবেঞ্চে বসার ছবি দেখিয়ে অংশগ্রহণ করা যাবে, আর বিজয়ীরা পাবেন ১০ হাজার টাকারও বেশি মূল্যের আকর্ষণীয় পুরস্কার।
এদিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আমরা তিন সপ্তাহব্যাপী আমাদের দাবি সপ্তাহ পালন করছি। যার মূল কাজ ছিল বিভাগের মানন্নোয়নে শিক্ষার্থী হতে বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বপর করে কাজ করা। আর এই বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই আমাদের এই দাবি সপ্তাহ ছিল।
শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের ব্যাপারে ছাত্র ফ্রন্টের সেক্রেটারি মারুফ বলেন, "আমাদের মূলত জকসুকে কেন্দ্র করে দাবি সপ্তাহ এখনো পালন করছি। মিডিয়াগুলো এটাকে তুলে না ধরায় তা হাইলাইটেড হচ্ছে না। আমরা সমাজবিজ্ঞান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইন বিভাগের স্মারকলিপি জমা দিয়েছি এবং আইন ও ভূমি প্রশাসন, আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট, ভূগোল, ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন, ইংরেজি সমাজকর্মে কাজ চলমান আছে।"
শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের ব্যাপারে ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, সবাই জকসুকে কেন্দ্র করে পরিকল্পনা নিচ্ছে যা সাময়িক আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করছি।
শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের ব্যাপারে জাতীয় ছাত্রশক্তির সদস্য সচিব শাহিন মিয়া বলেন, "জকসুকে কেন্দ্র করে যেই শিক্ষার্থীবান্ধব কাজগুলো শুরু হয়েছে আমি এটাকে এপ্রিশিয়েট করি। কিন্তু এটা অনেক আগে করতে পারত সংগঠনগুলো। তবে এই ওয়েলফেয়ার কাজগুলো যদি ভোট পাওয়ার আশাই করা হয় তাহলে আমি মনে করি তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে। আমি আশা করব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মর্যাদার সহীত জীবন যাপন করে ওয়েলফেয়ার নিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবে না।"
শিক্ষার্থীবান্ধব কার্যক্রমের ব্যাপারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, 'বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় ছাত্রদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সারা মাসব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম, যা আমরা এ মাস থেকে কার্যকর করব। তাছাড়াও আমরা শিক্ষার্থীদের মৌলিক যেসকল সমস্যা তা নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলে সমাধান করার চেষ্টা করছি। মূলত আমরা চাই একটা শিক্ষার্থী বান্ধব ক্যাম্পাস গড়তে। গত দিনেগুলোতে আমরা ক্যাম্পাসে নানমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম আরিফ বলেন, “আমরা সরাসরি কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে চাই। বিভাগভিত্তিক বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন মেন্টাল হেলথ সচেতনতা, ফার্স্ট এইড প্রশিক্ষণ ও স্পোর্টস টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি।আমরা ছাত্রী হলের জন্য ফার্স্ট এইড বক্সসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করেছি এবং এগুলো চলমান থাকবে।”
এর আগে গত ৩০ অক্টোবর রাতে জকসু নির্বাচনের খচড়া আচরণবিধি প্রকাশ করা হয়। এতে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে ডোপটেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়।
এর পর গত রোববার আচরণবিধি ও নির্বাচনের তারিখ বিষয়ে মতামত জানতে ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্ববৃন্দ ও সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে নির্বাচন করে।
গত ২৯ অক্টোবর সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে জকসু নির্বাচনের জন্য পাঁচ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সহকারী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে রয়েছেন আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহিদুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতেমা কাকলি, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জুলফিকার মাহমুদ এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আনিসুর রহমান।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এই প্রথম ছাত্রসংসদ নির্বাচন পেতে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।