
বাংলাদেশের শ্রেণিকক্ষে আজ লাখ লাখ শিশু বই খুলে উচ্চারণ করতে বা পড়তে জানে, কিন্তু তাদের অনেকেই আসলে যা পড়ে, তা বোঝে না। দেশে সাক্ষরতার হার বাড়লেও শিক্ষার্থীদের বোঝার ক্ষমতা বা কমপ্রিহেনসনে গভীর সংকট রয়ে গেছে, যা পাঠ করে তার শাব্দিক ও অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে পারে না অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী। অর্থাৎ কেবল অক্ষর চিনতে পারলেও অর্থ অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছে। সাম্প্রতিক দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মান ও শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা নিয়ে এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে ইউনেস্কো ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিবেদনে।
বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের লার্নিং পোভার্টি ব্রিফ অনুযায়ী, দেশে ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় ৫১ শতাংশই তাদের বয়স উপযোগী একটি সাধারণ লেখা পড়ে তা বুঝতে পারে না। এ হার দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো হলেও এটি মৌলিক শিক্ষার মানে বড় ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে ভর্তি ও লিঙ্গসমতায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার এখন প্রায় ৭৯ শতাংশ, আর ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে সাক্ষরতা ৯৩ শতাংশে পৌঁছেছে। অথচ এ সফলতার আড়ালে বোঝার বা পাঠ বোধগম্যতার ঘাটতি রয়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।
বিশ্বব্যাংক ও ইউনেসকো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিস্টিকসের যৌথভাবে চালু করা ‘লার্নিং পোভার্টি’ ধারণা অনুযায়ী, দেশে ১০ বছর বয়সেও শিশুদের সিংহভাগ বয়সোপযোগী একটি গল্প পড়ে বুঝতে পারে না। এতে একসঙ্গে বিবেচনা করা হয় দুটি বিষয়, স্কুলে গিয়ে শেখার ঘাটতি এবং একেবারেই স্কুলে না যাওয়া শিশুদের হার।
সূচকে বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ হার দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৫৯ শতাংশের নিচে, ভারতের ৫৬ ও পাকিস্তানের ৬০ শতাংশের চেয়ে ভালো। কিন্তু সমস্যাটা থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশে যেখানে মাত্র ২ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে, সেখানে বিদ্যালয়ে থাকা অর্ধেক শিক্ষার্থীই প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পাঠ বোঝার ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।
জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন (এনএসএ ) ২০২২ অনুসারে, তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অর্ধেকেরও বেশি নিজেদের শ্রেণি-মানের নিচে পারফর্ম করেছে। অনেকেই সাবলীলভাবে পড়তে পারলেও পাঠ্যাংশের অর্থ ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
এ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সায়মা রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘আমাদের এখনকার সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বাচ্চারা পড়ছে কিন্তু বুঝছে না। শুধু মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পায়, কিন্তু সেই জ্ঞানটা টিকছে না। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস কমে যায়, পড়াশোনার প্রতি আগ্রহও হারিয়ে ফেলে। শেখার আনন্দটাই হারিয়ে যাচ্ছে।’
সূচকে বাংলাদেশের ৫১ শতাংশ হার দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৫৯ শতাংশের নিচে, ভারতের ৫৬ ও পাকিস্তানের ৬০ শতাংশের চেয়ে ভালো। কিন্তু সমস্যাটা থেকে যাচ্ছে বাংলাদেশে যেখানে মাত্র ২ শতাংশ শিশু স্কুলের বাইরে, সেখানে বিদ্যালয়ে থাকা অর্ধেক শিক্ষার্থীই প্রাথমিক শিক্ষা শেষে পাঠ বোঝার ন্যূনতম দক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর পরিচালিত ২০২২ সালের এনএসএ জরিপে ৩০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এতে দেখা যায়, অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী বাংলা পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে দুর্বল। তারা পাঠ্যাংশ থেকে তথ্য মুখস্থ রাখতে পারে, কিন্তু বিশ্লেষণ বা ব্যাখ্যার প্রশ্নে দুর্বলতা দেখা যায়। শহর-গ্রামের মধ্যে এই পার্থক্য ছিল স্পষ্ট। ইংরেজি পাঠ বোঝার ক্ষেত্রে অবস্থা আরও খারাপ অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষার্থী সহজ বাক্যও বুঝতে পারে না।
এছাড়াও দেশের আঞ্চলিক বৈষম্যও চোখে পড়ার মতো। ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলেও, সিলেট, রংপুর ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের পারফরম্যান্স অনেক নিচে। বিশেষ করে বান্দরবানের মতো এলাকায় প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার হার এখনো মাত্র ৫৪ শতাংশ, এটি জাতীয় গড়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ কম।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, বোঝাপড়ার দক্ষতা অর্জনে কেবল পাঠ্যবই নয়, প্রয়োজন দক্ষ শিক্ষক ও কার্যকর শিক্ষণ পদ্ধতি। কিন্তু দেশে বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের ঘাটতি প্রকট। যার কারণে শিশুদের বোঝার সক্ষমতা তৈরি হয় না।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ৭০ শতাংশ শিশুই ১০ বছর বয়সে সহজ কোনো পাঠ্যাংশ পড়েও বুঝতে পারে না। এ হিসেব মহামারির আগে ছিল ৫৭ শতাংশ। আফ্রিকার সাহারা-দক্ষিণ অঞ্চলে এ হার ৮৯ শতাংশ, লাতিন আমেরিকায় ৭৯ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ৭০ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘রিডিং হচ্ছে একটি বিজ্ঞান। আর এটাকে বিজ্ঞানের মত করে শেখাতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের এটা ধরিয়ে দিচ্ছি না।’
ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশন (সিএএমপিই)-এর ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতি পাঁচটির মধ্যে একটি বিদ্যালয়ে এখনও পূর্ণ প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই। অনেক শিক্ষক একসঙ্গে একাধিক শ্রেণির পাঠদানের দায়িত্ব পালন করছেন।
২০২৩ সালে প্রবর্তিত নতুন দক্ষতা-ভিত্তিক পাঠ্যক্রম মুখস্থ পড়া থেকে বোঝার দিকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বললেও, বাস্তবে সেই পরিবর্তন এখনো সেভাবে পৌঁছায়নি। বরিশালের প্রাথমিক শিক্ষক নাসিমা আক্তার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা গল্প মুখস্থ করে বলে, কিন্তু তার মানে বোঝে না। পুরো অনুচ্ছেদ বলতে পারে, কিন্তু একটি বাক্যের অর্থ ব্যাখ্যা করতে পারে না।’
এ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে কোভিড-১৯ মহামারির সময়। কারণ টানা ১৮ মাসেরও বেশি সময় স্কুল বন্ধ ছিল বিশ্বের দীর্ঘতম সময়গুলোর একটি। ইউনিসেফের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা প্রায় এক বছরের কার্যকর শেখার ক্ষতির শিকার হয়েছে। টেলিভিশন বা অনলাইন শিক্ষায় অর্ধেকেরও কম শিক্ষার্থী যুক্ত হতে পেরেছিল, কারণ তাদের অনেকেরই ইন্টারনেট বা ডিভাইসের অভাব ছিল।
বাংলাদেশের এ পরিস্থিতি বৈশ্বিক প্রবণতার অংশ। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ৭০ শতাংশ শিশুই ১০ বছর বয়সে সহজ কোনো পাঠ্যাংশ পড়েও বুঝতে পারে না। এ হিসেব মহামারির আগে ছিল ৫৭ শতাংশ। আফ্রিকার সাহারা-দক্ষিণ অঞ্চলে এ হার ৮৯ শতাংশ, লাতিন আমেরিকায় ৭৯ শতাংশ এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ৭০ শতাংশ।
শেখার এমন সংকটে বিশ্বের বর্তমান প্রজন্মের সম্ভাব্য জীবনব্যাপী আয়ের ক্ষতি ১১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত হতে পারে, বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্যদিকে, ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো উন্নত দেশগুলোতে প্রায় সব শিশু পাঠ বোঝার সক্ষমতা অর্জন করে, যেখানে লার্নিং পোভার্টি বা শিখন দারিদ্র ১০ শতাংশেরও নিচে।
শিশুদের পাশাপাশি প্রাপ্তবয়স্কদের নিরক্ষরতাও বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে বর্তমানে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক নিরক্ষর, যাদের অধিকাংশই গ্রামীণ এলাকার নারী। সরকার ২০২৩ সালে জাতীয় সাক্ষরতা অভিযান পুনরায় চালু করেছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অশিক্ষা নির্মূল করা।
তবে ব্যয় এখনো সীমিত। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে বাংলাদেশ প্রতি প্রাথমিক শিক্ষার্থী পিছু বছরে মাত্র ২২৩ ডলার (PPP-সমন্বিত) খরচ করে। যা দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের তুলনায় ৮১ শতাংশ কম। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের শিক্ষা অর্থনীতিবিদ মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষায় শুধু বেশি খরচ নয়, সঠিকভাবে বিনিয়োগ করাটাও জরুরি যেখানে শেখার ফল সবচেয়ে দুর্বল।”
বাংলাদেশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে লিঙ্গসমতা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার অনন্য উদাহরণ। মেয়েরা এখন সাক্ষরতার বেশিরভাগ সূচকে ছেলেদের ছাড়িয়ে গেছে। তবে উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পুনরায় বৈষম্য দেখা দেয়। ছেলেদের মধ্যে স্কুল ছাড়ার হার বেশি হওয়ায় তাদের লার্নিং পোভার্টি হার ৫৪ শতাংশ, মেয়েদের ৪৯ শতাংশ।
ময়মনসিংহের এনজিও শিক্ষা সমন্বয়ক ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, ‘গ্রামে ছেলেরা কাজের জন্য স্কুল ছাড়ে, মেয়েরা স্কুলে থাকে কিন্তু তাদের পাঠ্যবই বিশ্লেষণী চিন্তাকে উৎসাহ দেয় না। দুই দিকেই ঘাটতি আছে।’
শিক্ষা খাতে এখন সংস্কার পরিকল্পনা এগিয়ে চলেছে। ২০২৫ সালের ৫ মার্চ চৌধুরী রফিকুল আবরারকে শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেছেন, শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে প্রযুক্তি-নির্ভর ও বোঝাপড়াভিত্তিক পদ্ধতি চালু করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, নতুনভাবে জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন কাঠামো (NSA Framework) তৈরি হচ্ছে, যাতে মুখস্থ পড়ার পরিবর্তে বোঝাপড়াকে প্রধান গুরুত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের PIRLS ও PISA পরীক্ষার কাঠামো পর্যালোচনা করে বাংলাদেশকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে তুলনাযোগ্য করার উদ্যোগ চলছে।
শিক্ষাবিদদের মতে, এসব সংস্কার কার্যকর করতে হলে শিক্ষকদের হাতে বাস্তব প্রশিক্ষণ ও সহায়ক উপকরণ পৌঁছানো জরুরি। পাঠ বোঝার অক্ষমতা শুধু ভাষার দক্ষতা নয়, বরং সার্বিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। যে শিক্ষার্থী লেখা বুঝতে পারে না, সে বিজ্ঞানে, গণিতে, এমনকি ইতিহাসেও পিছিয়ে পড়ে। ফলস্বরূপ, অনেকেই মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করতে পারে না। আবার অনেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও এ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে না। অনেকে পাঠ করে একটি তথ্য বা ভাব কিন্তু বোঝে অন্যটি; বা পঠিত বিষয়ে আংশিক বোঝে, আংশিক বোঝে না।
বিশ্বব্যাংকের হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স অনুযায়ী, যদি শিক্ষার মান না বাড়ে, তাহলে বাংলাদেশের শিশুরা ভবিষ্যতে তাদের সম্ভাব্য উৎপাদনশীলতার মাত্র ৪৬ শতাংশেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বাংলাদেশের সাক্ষরতা অভিযানের সাফল্য নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়, কিন্তু বোঝার সক্ষমতা এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ সাক্ষরতার লক্ষ্যমাত্রা অর্থবহ হবে কেবল তখনই, যখন শিক্ষার্থীরা যা পড়ে, তা বুঝতেও পারবে।
বিশ্বব্যাপী সফল মডেলগুলো যেমন ভিয়েতনাম ও কেনিয়ার অভিজ্ঞতা দেখায়, পাঠ বোঝার উন্নতির জন্য প্রয়োজন নিবিড় শিক্ষক প্রশিক্ষণ, কমিউনিটির সম্পৃক্ততা ও প্রাথমিক স্তরে মূল্যায়ন সংস্কার। বাংলাদেশও এখন এই পথ অনুসন্ধান করছে।
শিখন ঘাটতি বা দুর্বল বোধগম্যতার দক্ষতা বিষয়ে গাজীপুরের এক পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীর উদাহরণ তুলে ধরা যায়। ওই শিক্ষার্থী পদ্মা সেতু নিয়ে লেখা গল্প পড়ে। কিন্তু শিক্ষক জিজ্ঞেস করলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে ‘এটা মানুষকে যুক্ত করে… দেশকে যুক্ত করে।’
যদিও এ বিষয়ে ডা. সায়মা রহমান বলেন, ‘এ অবস্থা বদলাতে হলে ছোটবেলা থেকেই বোঝার ওপর ভিত্তি করে শেখাতে হবে। শিক্ষকরা যেন গল্প, ছবি বা বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে শেখান এটা জরুরি। একই সঙ্গে পরিবারকেও সন্তানদের শেখার সময় পাশে থাকতে হবে, শুধু ফলাফল নয়, বোঝার দিকেও নজর দিতে হবে। স্কুল ও পরিবার একসঙ্গে কাজ করলে এই ‘লার্নিং পোভার্টি’ থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব।’
এ বিষয়ে অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ বলেন, আমাদের শিশুদের রিডিং সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য তাদেরকে প্রাথমিক লেভেল থেকে রিডিংয়ের চর্চা বাড়াতে হবে। আমাদের শিক্ষার্থীদের ভোকাবুলারি ও কম্প্রিহেনশন যে অভাব অবশ্যই সেদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে আমাদের শিক্ষার্থীরা নিজেদের দক্ষ করে তুলতে পারবে। এছাড়াও রিডিং হচ্ছে একটি বিজ্ঞান। আর এটাকে বিজ্ঞানের মত করে শেখাতে হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের এটা ধরিয়ে দিচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দুর্বলতার পিছনের আরেকটি কারণ হচ্ছে সে তার যোগ্যতা অর্জনের করতে পারল কি না, তা চিন্তা না করে তাকে দিয়ে আমরা শুধুমাত্র ক্লাস পরিবর্তন করাচ্ছি। দেখা যায় সে প্রথম শ্রেণিতে না পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলাম, যার কারণে এ দুর্বলতা তার ভেতরে থেকে যাচ্ছে।
স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাঠ বোধগম্যতা পরিস্থিতি বোঝার জন্য দৈবচয়ন ভিত্তিতে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজের, সিলেট এমসি কলেজের এবং ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারা জানান, প্রাথমিকের শিখন বা পাঠ বোঝার ঘাটতি অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ পর্যায়ে এসেও পূরণ করতে পারছে না।
শুধু বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনার ক্ষেত্রেই যে বিষয়টি ঘটছে এমন নয়। অনেকে সাধারণ ফরম বুঝে পূরণ করতে হিমশিম খায়। এমনকি প্রিন্ট বা অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ বা কনটেন্ট পড়েও ওই সংবাদে উল্লেখিত তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না বা ভুল বোঝেন, ভুল পাঠ করেন। বিষয়টি শুধু শিক্ষার ঘাটতি নাকি স্নায়ুবিক কোনো ইস্যু রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা উচিত বলে তারা মনে করেন।