Image description
আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি, ফুটপাথ ও সড়কে দোকান বসালে জনভোগান্তি সৃষ্টি হয় : ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা হাছিবা খান

ঢাকার রাজপথ থেকে অলিগলি সব সড়কই এখন হকারদের দখলে। আগে হকাররা ফুটপাথ দখল করে দোকান বসালেও এখন দোকান বসাচ্ছে রাস্তার ওপর। এছাড়াও এখন ফুটওভারব্রিজের ওপর দোকান বসায় হকাররা। নিত্যপণ্যসামগ্রী, কাপড়, বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কসমেটিকস, ঘর সাজানোর নানা উপকরণ, সানগ্লাস, শিশুদের খেলনা, ওজন মাপার মেশিন ও খাবারের দোকানের কারণে চলাচল করা যায় না। রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট গুলিস্তান নয় এখন পুরো ঢাকাই যেন হকারদের নিয়ন্ত্রণে। সাধারণ মানুষের চলাচলের জায়গায় এসব হকার বসে। চাঁদাবাজদের কাছে সড়ক, ফুটপাথ ও ফুটওভারব্রিজ সবই দখল।

রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কের সামনে, আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তাসহ বিভিন্ন সড়কে দৈনিক চাঁদা, মাসিক চাঁদা দিয়ে হকাররা ফুটপাথ দখল করে ব্যবসা করছে। রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তা দখল হওয়ায় নিত্য যানজট লেগেই থাকছে। পল্টন, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা কলেজের সামনে, গাউসিয়া মার্কেট এলাকা, ফার্মগেট, উত্তরা, বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, মৌচাক, খিলগাঁও, মহাখালী, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, পুরান ঢাকার বংশাল, মিরপুর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ সড়ক ও মোড়ে হকার ফুটপাথ দখল করে পসরা নিয়ে বসেছেন। অনেক স্পটে রাস্তার বেশির ভাগ দখল করে দোকান বসানোয় যানবাহন ও পথাচারীদের চলাফেরা করাই দায় হয়ে গেছে।

রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকরা বলছেন, ফুটপাথের অবৈধ দখল, মানুষের চলাচলের রাস্তায় বসানো হয় দোকান। ব্যবসা আর চাঁদাবাজি চলে এটা পুরনো একটি সমস্যা। নির্দিষ্ট একটি মহলের পকেট ভরলেও সাধারণ মানুষের চলাচল হচ্ছে কঠিন। কোথাও সারি সারি পণ্যের সাজানো দোকান। কোথাও আবার বসেছে বাজার। তবে নগরবিদরা বলছেন, সরকার বদলায়, কিন্তু দখলদাররা থেকে যায়। সরকার চাইলে ঢাকায় একজন দখলদারও ফুটপাথে বসতে পারবে না। রাষ্ট্রের চেয়ে কোনো হকার গোষ্ঠী বেশি শক্তিশালী নয়। ডিএসসিসির দায়িত্ব পথচারীবান্ধব ফুটপাথ নিশ্চিত করা।

জানা যায়, রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় পথচারীদের নিরাপদ রাস্তা পারাপারের জন্য দৃষ্টিনন্দন ফুটওভার ব্রিজ তৈরি করা হয়। ব্রিজগুলোতে এখন রয়েছে হকারদের উৎপাত। দখল করে রেখেছে মানুষের চলাচলের পথ। এসব ফুটওভারব্রিজে বিভিন্ন ধরনের হকার পণ্য বিক্রির জন্য হাঁকডাক দিয়ে থাকে। সাধারণ চলাচলকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অনেক সময় চুরি-ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফুটপাথ দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকান ও হকারদের উচ্ছেদ করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু উচ্ছেদের পর আবার ফুটপাথ দখল হয়ে যায়। তবে অভিযান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবারও পুরোনো চিত্র ফিরে আসে। হাসপাতালের চারপাশে ফুটপাথ ও প্রধান সড়কজুড়ে ফের বসেছে হকারদের অস্থায়ী দোকান। এতে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। জরুরি বিভাগের গেট থেকে নতুন ভবন পর্যন্ত ফুটপাথজুড়ে সারি সারি দোকান। রঙিন ছাতার নিচে ফল, জুস, চা, সিগারেট, প্রসাধনী, কাপড়সহ নানা পণ্য বিক্রি চলছে। জরুরি বিভাগের সামনে চা-সিগারেট, ফল, ঠান্ডা পানি, ভাত-তরকারি, পরোটা, কাপড় ও লুঙ্গির দোকান বসানো হয়েছে।

হকারদের হাঁকডাকে সরগরম গুলিস্তান। রমরমা ব্যবসা চলে রাস্তা দখল করে। গুলিস্তান এলাকার বায়তুল মোকাররম, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, গোলাপ শাহ মাজার-সংলগ্ন সড়কের বড় অংশ দখলে রয়েছে হকারদের। এখানের হকারেরা জামা, প্যান্ট, জুতা, প্রসাধনীসহ হাজার রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন। ফুটপাথ ও রাস্তা দখল করে দোকান বসানোর কারণে পথচারীদের হেঁটে চলাও কঠিন হয়ে পড়ছে। তীব্র যানজট লেগেই থাকে এখানে। জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট সড়কের দুই পাশে সারিবদ্ধ অনেক ভ্রাম্যমাণ দোকান বসানো হয়েছে। শুধু ফটপাথ নয় গুলিস্তানের প্রধান সড়কগুলো এখন হকারদের দখলে। গুলিস্তানের আশেপাশের সব সড়কের বেশিরভাগ অংশ দখল করে বসানো হয়েছে দোকানপাট। বছরজুড়ে সদরঘাট এলাকার রাস্তায় হকারদের মেলা বসে। হকাররা রাস্তার মাঝ বরাবর চলে আসেন দোকান কিংবা পণ্যের টুকরি নিয়ে। এক সময় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা রেডজোনও দখলে চলে যায় সকাল থেকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন বলেন, মনে হচ্ছে ঢাকায় আগের চেয়ে হকারের সংখ্যা বেড়েছে। আগে অনেক সড়কে হকার না থাকলেও এখন এসব সড়কেও হকার বসছে। ফুটওভারব্রিজের ওপর দিয়ে চলাফেরা করি। সকালে ভিড় না থাকলেও বিকেল বা সন্ধ্যায় এসব দোকানের কারণে ব্রিজের ওপর ভিড় হয়। চুরির ভয়ও লাগে। রাস্তা ও ফুটওভার ব্রিজের দোকান থেকেও স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা (অতি.দা.) হাছিবা খান ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানী ঢাকার একটি বড় সমস্যা ফুটপাথ দখল করে দোকান বাসানো। এতে পথচারী ও সাধারণ মানুষের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। কোনো কোনো সড়কে যানবাহন চলাচলের জায়গায়ও দোকান বসানো হচ্ছে। হকার উচ্ছেদে কাজ করছে ডিএসসিসি। আমরা নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর আবার তারা রাস্তায় বসে যায়। সে কারণে জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়।