
তিস্তাপাড়ের মানুষের জন্য ৩০ অক্টোবর এই তারিখটি হয়ে উঠতে যাচ্ছে এক ভিন্ন প্রতীকের দিন। সকাল ১১টা থেকে ১১টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত থমকে থাকবে রংপুর বিভাগ। দোকানপাট বন্ধ, রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে যাবে, ক্লাসরুমে থেমে যাবে পাঠ, অফিস-আদালতের কাজ থেমে যাবে-সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যাবে তিস্তার জন্য।
এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নয়, বরং তিস্তার বাঁচন-মরণ লড়াইয়ের প্রতীকী অভিব্যক্তি।
গত কয়েক মাস ধরে উত্তরাঞ্চলের মানুষ একের পর এক কর্মসূচি পালন করে আসছে। ফেব্রুয়ারিতে তিস্তাতীরে ১১টি পয়েন্টে অবস্থান কর্মসূচি, অক্টোবরের শুরুতে গণমিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান, সর্বশেষ ১৬ অক্টোবর তিস্তার দুই তীরে ১০৫ কিলোমিটারজুড়ে মশাল প্রজ্বলন। এই কর্মসূচিগুলো দেখিয়ে দিয়েছে, তিস্তা কেবল একটি নদী নয় এটি উত্তরাঞ্চলের হৃদস্পন্দন।
তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমরা চাই সরকার নির্বাচনের আগে এই কাজ শুরু করুক। না হলে তিস্তাপাড়ের মানুষকে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবো। তার ভাষায়, ১৫ মিনিটের এই নীরবতা আসলে নীরব নয়, এটি কোটি মানুষের গর্জন- যার বার্তা স্পষ্ট: “তিস্তা বাঁচলে উত্তরবঙ্গ বাঁচবে, তিস্তা বাঁচলেই বাংলাদেশ বাঁচবে।”
তিস্তাপাড়ে বসবাসকারী মানুষের জীবন-জীবিকা এই নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কৃষি, মাছ, নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-সব কিছুই নির্ভরশীল পানির প্রবাহে। দুই কোটি মানুষের ভাগ্য ঝুলছে তিস্তার পুনরুজ্জীবনের সঙ্গে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার কৃষক আজিজুল ইসলামের ভাষায়, “তিস্তা শুকিয়ে গেলে আমাদের জমি মরুভূমি হয়ে যায়। তিস্তা বাঁচানো মানে আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বাঁচানো।”
আন্দোলনের সঙ্গে যুক্তরা জানিয়েছেন, ৩০ অক্টোবরের এই কর্মসূচি শুধু একটি প্রতীকী প্রতিবাদ নয়, এটি একটি জনআন্দোলনের শক্তির প্রকাশ। শিক্ষার্থী থেকে ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক থেকে কৃষক সবাই একই স্লোগানে একতাবদ্ধ হয়ে বলবেন: “জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাই। ন্যায্য হিস্যা চাই। মহাপরিকল্পনা চাই।”
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে এমন অঙ্গীকারই শোনা যাচ্ছে তিস্তাপাড়ের প্রতিটি মানুষের কণ্ঠে