Image description

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসার নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুমোদন হয়েছিল ২০২১ সালে। কিন্তু সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের এই সিদ্ধান্তের ৪ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি ডোপ টেস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট নিশ্চিতের দাবি উঠলেও তা কার্যকর করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সিন্ডিকেটের নিয়মিত সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ডোপ টেস্টের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়। নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত ওই সিন্ডিকেট সভায় তৎকালীন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান সভাপতিত্ব করেন। সভায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. টিটো মিঞাকে প্রধান করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করা হয়। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছিল কিনা, তা স্পষ্ট করে জানাতে পারছেন না কমিটির সদস্যরা।

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির অন্য সদস্যরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের তৎকালীন ডিন (ভারপ্রাপ্ত) মো. রহমত উল্লাহ, জীববিজ্ঞান অনুষদের তৎকালীন ডিন (ভারপ্রাপ্ত) মিহির লাল সাহা, ফার্মেসি অনুষদের তৎকালীন ডিন (ভারপ্রাপ্ত) এস এম আবদুর রহমান, চিকিৎসা অনুষদের তৎকালীন ডিন শাহরিয়ার নবী, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের তৎকালীন চেয়ারম্যান জোবেদা খাতুন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা সারওয়ার জাহান।

ডোপ টেস্ট নীতিমালার বিষয়ে জানতে কল দেওয়া হলে আইন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফার্মেসি অনুষদের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ডিন এস এম আবদুর রহমান দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, আমি একটা মিটিংয়েই উপস্থিত ছিলাম। সেখানে কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। আমরা সম্ভাব্যতা যাচাই নিয়ে আলোচনা করছিলাম। পরবর্তীতে আমাদেরকে আর কল করা হয়নি। তবে আলোচনার কিছু খসড়া প্রস্তাবনা কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়কে জমা দিয়ে থাকতে পারেন। এটি নিয়ে পরবর্তীতে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

তবে নীতিমালা অনুমোদনের পর তৎকালীন ঢাবি উপাচার্য তা সুপারিশ করেছিলেন বলে জানিয়েছেন কমিটির আরেক সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান জোবেদা খাতুন। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, নীতিমালা নিয়ে অনেক সভা হয়েছে এবং উপাচার্য স্যার সুপারিশ করেছিলেন। কার্যক্রম শুরু হওয়ার অপেক্ষা ছিল শুধু। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের প্রথম দুটি বছর এবং শিক্ষকদের ক্ষেত্রে যোগদানের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্ট করার কথা ছিল। ডোপ টেস্টে মাদকাসক্তি ধরা পড়লে কাউন্সিলিং এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার কথা বলা হয়েছিল।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন ) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা দায়িত্ব গ্রহণের পর এই বিষয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি। যেহেতু এটি বিগত সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাহলে আমরা পরবর্তী সিন্ডিকেট মিটিংয়ে এই বিষয়ে অন্যান্যদের মতামত জানবো যে এটি বলবৎ থাকবে কিনা এবং তাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বছরে একবার ডোপ টেস্টের পাশাপাশি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়েও ডোপ টেস্টের তাগিদ দেওয়া হয়। এরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে সম্প্রতি ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের দাবি জানানো হলেও তা করা হয়নি। পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হয়। চাকসু নির্বাচনেও প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।